মওদুদীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা ঈমানি দায়িত্ব : আল্লামা মাসঊদ

মওদুদীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা ঈমানি দায়িত্ব : আল্লামা মাসঊদ

  • কোথায় গিয়ে ঠেকেছে এই উম্মতের অবস্থা? কে ধরবে এই উম্মতের হাল?
  • উম্মতকে হাতে ধরে, পায়ে ধরে, ঘাড়ে ধরে ফিরাবারও কেউ নেই!
  • ‘আয়ানকুসুদ্দীন ওয়া আনা হায়্যুন’ এর চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে।

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মওদুদীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা ঈমানি দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, সাইয়্যিদ মাওলানা আসআদ মাদানী (রহ.) এর খলীফা, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

তিনি বলেন, ফেতনাবাজ ও ইসলামের দুশমন মওদুদীরা আমাদের সাহাবায়ে কেরামের মহান চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাঁদের পুতঃপবিত্র ব্যক্তি সত্বার ব্যাপারে মিথ্যা ও অসত্যের কালিমা লেপন করে। তাই জামায়াতে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। আমরা যদি চুপ হয়ে বসে থাকি, তাহলে আমাদের মাঝে আর নবীর দুশমনের মাঝে কোনো পার্থক্য থাকবে না।

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে দুইদিন ব্যাপি তরবিয়তি ইজতেমার প্রথম দিন বাদ মাগরিবের বয়ানে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এসব কথা বলেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হতে হলে উম্মতকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে উল্লেখ করে ফিদায়ে মিল্লাতের এই সুযোগ্য খলীফা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের খারাপ অবস্থা যদি কাউকে সামান্যতম চিন্তিত না করে, উম্মতের লাগামহীন অবস্থা যদি একটুও বিচলিত না করে, তাহলে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত না।

তিনি বলে, আজ উম্মত পথ হারিয়ে ফেলেছে। যেই উম্মতের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেছেন, যেই উম্মতের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তায়েফ প্রান্তরে কাফেরদের হাতে রক্তাক্ত হয়েছেন, আঘাতে জর্জরিত হয়েছেন, যেই উম্মতের জন্য তাঁর দন্ত মোবারাক পর্যন্তও শহীদ হয়েছে, সেই উম্মত আজ তাদের পথ হারিয়ে ফেলেছে, ঠিকানা ভুলে গিয়ে দিশেহারা হয়ে ঘুরছে। তাদের দীনের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে।

‘কোথায় গিয়ে ঠেকেছে এই উম্মতের বর্তমান অবস্থা’? এমন প্রশ্ন রেখে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান বলেন, যেসব গুনাহের কারণে আগের অনেক উম্মতকে আল্লাহ তাআলা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, এই উম্মত সেই সব পাপ কাজে এখন লিপ্ত। হযরত লূত (আ.) এর জাতিকে যে কারণে ধ্বংস করা হয়েছিল, আজ আমাদের দেশেও সেই সমকামিতার মতো নিকৃষ্ট গুনাহের কাজকে বৈধ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে একদল মানুষ। আফসোস, আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে এই উম্মতের অবস্থা? কে ধরবে এই উম্মতের হাল?

মিডিয়াসহ সব জায়গায় খারাপকে প্রমোট করা হচ্ছে মন্তব্য করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, আজ টেলিভিশনের পর্দায়, পত্র-পত্রিকার পাতায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্দ-খারাপ, বেহায়াপনা ও গুনাহের কাজকে উৎসাহ দেয়া হয়, খেলোয়াড়দের আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, সিনেমার জগতকে মুক্তভাবে উষ্ণ সংবর্ধনা জানানো হয়, কিন্তু আলেমদের কথা কেউ বলে না, আলেমদের বাণী কেউ প্রচার করে না।

আলেম উলামাদেরকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলা হয়েছে মন্তব্য করে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, উম্মতকে যারা বারবার ধ্বংসের হাত থেকে এবং নিশ্চিত বিপদ থেকে রক্ষা করেন, বারবার ধ্বংসকূপ থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় দেন, নববী চেতনায় উজ্জীবিত সেই আলেম-উলামাদেরকে আজ খন্ড-বিখন্ড করে ফেলা হয়েছে। আজ উলামায়ে কেরামের অস্তিত্ব হুমকির মুখে! ফলে উম্মতকে নিশ্চিত ধ্বংস থেকে উদ্ধার করার কেউ নেই। উম্মতকে হাতে ধরে, পায়ে ধরে, ঘাড়ে ধরে ফিরাবারও কেউ নেই।

নেক ও এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই আধ্যাত্নিক রাহবার বলেন, আমাদেরকে নেক হতে এবং এক হতে হবে। নেক হলে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবো, আর এক হলে আমরা আরও শক্তিশালী হবো।

স্রোতের বিপরিতে চলা শিখতে হবে জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, আমাদের স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে দিলে হবে না। স্রোতের উলটো পথে হেঁটে সমাজকে পরিবর্তন করতে হবে। আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম স্রোতের উলটো পথে হেঁটে সমাজকে পাল্টে দিয়েছেন। তাঁদের সংস্পর্শে সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ব্যক্তিটাও সবচেয়ে ভালো হয়েছিল।

বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার সকল কর্মী ও নেতৃবৃন্দকে হজরত আবু বকর (রা.) এর চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার জন্য তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার প্রতিটি কর্মী ও নেতাকে ‘আয়ানকুসুদ্দীন ওয়া আনা হায়্যুন’ এর চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। আমি বেঁচে থাকতে রাসুলের দীনের উপর কোনো আঘাত আসবে এটা হবে না-এটাই ছিল হযরত আবু বকর (রা.) এর শ্লোগান। আমাদেরকেও তাঁর মতো হতে হবে। দীনকে রাসুল যেই অবস্থায় রেখে গিয়েছিলেন সেই অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব, আর এই দায়িত্ব শুরু হয়েছে জন্মের পর থেকে এবং এই মহান দায়িত্ব শেষ হবে মৃত্যু হলে। তার আগে কোনো বিরতি নেই।

বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার সকল কর্মী ও নেতৃবৃন্দকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, প্রতিটি সংগঠন দুটি জিনিসের উপরে ভিত্তি করে টিকে থাকে, প্রতিষ্ঠিত হয়। এক. নেতৃত্বের উপর শতভাগ আস্থা। দুই. সীমাহীন আনুগত্য। আমাদের সবার মধ্যে এই দুটি গুণ থাকতে হবে।

আল্লামা মাসঊদ আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাদের সম্পর্কে আমাদের আস্থা নষ্ট করে দিতে চাচ্ছে, আমরা তাদেরকে সফল হতে দেব না। মানুষদেরকে তাদের মিথ্যার ব্যাপারে সতর্ক করবো।

বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য কী তা জানাতে গিয়ে সংগঠনরটির চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার লক্ষ্য এই উম্মতের মাঝে সাহাবায়ে কেরামের নেতৃত্ব ও আনুগত্য প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাবে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা।

তরবিয়তি ইজতেমার প্রথম দিনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার সহসভাপতি মাওলানা হুসাইনুল বান্না। ইজতেমার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি মাওলানা এহতেশামুল হক। বাদ মাগরিব সূরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করেন হাফেজ সাকিবুল হাসান। ছয় তাসবিহের আমল পরিচালনা করেন মাওলানা নোমান আহমদ। বাদ ইশা দুরুদ শরীফের আমল পরিচালনা করেন মাওলানা আব্দুর রহীম গাজীপুরী। কাতাবি তালিম ও আগত মুসল্লীদের বায়াত করান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। এরপর মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানীর একটি বয়ান প্রজেক্টরে দেখানো হয় এবং বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ঢাকা মহানগরীর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুনের ‘বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার পূর্বাপর কর্মসূচি পর্যালোচনা’র মাধ্যমে একদিনের কর্মসূচি শেষ হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *