পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: মার্কিন নতুন শ্রম অধিকার নীতি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাশা বেড়েছে শ্রমিক নেতাদের। এরই মধ্যে পাঁচটি বৈশ্বিক সংগঠন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেওয়ায় তাঁরা মনে করছেন, সরকার ও মালিকপক্ষ এটাকে ইতিবাচকভাবে নেবে।
রপ্তানিকাররা বলেন, নতুন শ্রম আইন নিয়ে খুব একটা অস্বস্তি না থাকলেও কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারে। এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন শ্রমনীতিতে সরকার ও রপ্তানিকারকরা চাপে পড়বে।
গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া পাঁচ বৈশ্বিক সংগঠনের একটি ইথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ (ইটিআই)। এর কান্ট্রি ম্যানেজার আবিল বিন আমিন গতকাল রবিবার বলেন, ‘পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক ইটিআইসহ পাঁচ সংগঠন চিঠি দিয়েছে। আমরা মনে করি বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। বিশেষ করে আলোচনা শুরু করা গেলে একটি যৌক্তিক এবং ফলপ্রসূ পরিবেশ তৈরি হবে।
এ ছাড়া আমরা ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি পোশাকের দাম বাড়াতে।’
ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. তৌহিদুর রাহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম আইন ঘোষণার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে মজুরি পুনর্বিবেচনার নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো মজুরি পুনর্বিবেচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। আমাদের আশা, সরকার ও মালিক মজুরি পুনর্বিবেচনায় ইতিবাচক উদ্যোগ নেবে।
এ ছাড়া শ্রম আন্দোলনকে স্বাধীনভাবে চলতে দেবেন। মালিকরা এই বার্তাকে ইতিবাচকভাবে নিলে শিল্পেরও যথেষ্ট উন্নতি হবে।’
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক শাসা ডেনিম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামস মাহমুদ বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ একটি স্বচ্ছ সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। তাদের পরামর্শে বিশ্বমানের কারখানা, শোভন কর্মপরিবেশ, গবেষণা, রিসাইকল প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে। এসবই করা হয়েছে ক্রেতাদের পরামর্শে।
ফলে বৈশ্বিক বাজারে নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র মানুষের কর্মসংস্থানে ক্ষতি হয় এমন উদ্যোগ নেবে না। তাই ব্যবসার ক্ষতি হবে বলেও আমরা মনে করি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি নিয়ে অস্বস্তির কথা জানিয়ে নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘এই নীতি নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার বা অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। এটাই আমাদের শঙ্কার জায়গা। কেননা শ্রম আইন মেনেই দেশের উদ্যোক্তারা কাজ করেন। এটা মানতে বাধ্য এবং না মেনে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।’
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিউটের পরিচালক (পিআরআই) বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নতুন শ্রমনীতিতে সরকার ও রপ্তানিকারকরা চাপে পড়বে। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। কতটা কঠোর হবে এর ওপর নির্ভর করছে দেশের রপ্তানি আয়, আর্থিক সহায়তা, নির্বাচন, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার। তাই নতুন মজুরি নির্ধারণকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নেওয়া ঠিক হয়নি। আরো ছয় মাস আগে করা যেত। সরকারের এমন উদাসীনতা ঠিক হয়নি।’
এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের নামে মামলা, জেল এবং শ্রমিক হত্যা শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা দেশগুলো ভালোভাবে নেয়নি। এই অবস্থায় দ্রুত ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে কূটনৈতিক তত্পরতা বাড়ানোসহ আন্তর্জাতিক কনভেশনে যেসব শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে এসব বিষয়ে আলোচনায় গুরুত্ব দিতে হবে।’
ইটিআই বাদে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া অন্য পাঁচ সংগঠন হলো অ্যামফোরি, ফেয়ার লেবার অ্যাসোসিয়েশন (এফএলএ), ফেয়ার ওয়্যার ও মন্ডিয়াল এফএনভি। গত বুধবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ তৈরি পোশাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং আন্তর্জাতিক শ্রম ও শিল্পের মানগুলোর সরকারেরও অঙ্গীকার রয়েছে।
যেসব দেশে শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন হবে, সেসব দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার শাস্তি আরোপ করবে বলে গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৯৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৫১ কোটি ডলার। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশের বেশি কমেছে।