মতিউর রহমান

মতিউর রহমান

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাবা ভালো পড়াশোনার জন্য তাঁকে শৈশবেই পাঠিয়ে দেন পশ্চিম পাকিস্তানে। সপ্তম শ্রেণিতে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। এখান থেকে ডিস্টিংকশনসহ ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। আইএ পাস করার পর ১৯৬১ সালে বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। এরপর কমিশন লাভ করে জেনারেল ডিউটি পাইলট থেকে জেট পাইলট হিসেবে পদোন্নতি পান।

পাকিস্তান থেকে ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে ছুটিতে তিনি ঢাকায় আসেন। স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে নরসিংদীতে গিয়ে মুক্তিকামী জনতাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তিনি মূলত তাঁর কর্মস্থলে যান দেশের জন্য একটি বিমান ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে। সেই ভাবনা থেকে তিনি ’৭১ সালের ৯ মে সপরিবারে কর্মস্থলে ফিরে যান। ফ্লাইং সেফটি অফিসারের দায়িত্ব পান।

পরিকল্পনা মোতাবেক মতিউর ২০ আগস্ট করাচির মাশরুর বিমানঘাঁটিতে সকালে উপস্থিত হন। সেদিনের প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট ছিলেন পাঞ্জাবি রাশেদ মিনহাজ। বিমান উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই মতিউর গাড়ি নিয়ে দ্রুত সেখানে গিয়ে তাঁকে থামার সংকেত দেন। তিনি ক্যানোপি তুলে মতিউরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কী হয়েছে?’ তখন মতিউর রহমান লাফ দিয়ে ককপিটে উঠে বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এ সময় দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং রাশেদ এ ঘটনা কন্ট্রোল টাওয়ারে জানিয়ে দেন। চারটি জঙ্গিবিমান মতিউরের বিমানকে ধাওয়া করে। এরপর সিন্ধুর বেদিনে বিমানটি বিধ্বস্ত হলে দুজনই মারা যান। তাঁকে করাচির একটি চতুর্থ শ্রেণির কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল।

মৃত্যুর ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালের ২৩ জুন তাঁর দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ২৫ জুন শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে পুনরায় সমাহিত করা হয়। মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে। অসাধারণ সাহস ও বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মতিউর রহমানকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *