মধ্যরাতে উত্তাল ঢাবি ক্যাম্পাস

মধ্যরাতে উত্তাল ঢাবি ক্যাম্পাস

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি ঘিরে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। গতকাল রোববার দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল থেকে বের হয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া রোববার রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত ছাত্রলীগ থেকে তিন নেতার পদত্যাগের খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন- ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রাতুল আহামেদ ওরফে শ্রাবণ এবং আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম।

সরেজমিন দেখা গেছে, রোববার রাতে হলপাড়া হিসেবে পরিচিত কবি জসীমউদ্দীন হলের মাঠ এলাকায় শিক্ষার্থীরা মিছিল করেছেন। ছাত্রী হলগুলোতেও মিছিল হচ্ছে। এ সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার’, ‘এই বাংলার মাটি- রাজাকারের ঘাঁটি’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

সেখানে দেখা যায়, হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল, জিয়াউর রহমান হল, বঙ্গবন্ধু হল, জসীম উদ্দীন হলসহ সব হল থেকে শিক্ষার্থীরা হলপাড়ায় মিছিল নিয়ে এসে সমবেত হন। এছাড়াও শহীদুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল, এফএইচ হল, একুশে হল, রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন টিএসসিতে।
পরে টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে তারাও হলপাড়া গিয়ে যোগ দেন। মেয়েদের তিনটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা গেট ভেঙে বের হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী কখনো সে দেশের ছাত্র-জনতাকে রাজাকারের বাচ্চা বলতে পারেন না। তার এমন উক্তির প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা এত রাতেও রাস্তায় নেমেছেন।

এদিকে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে রাতে টিএসসির রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিল কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। তারা জানান, আবাসিক হলগুলোর সামনে হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছেন কিন্তু বাধা দিয়ে কোনো কাজ হবে না।

২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
ঢাবি সংবাদদাতা জানান, সরকারি চাকরির সব গ্রেডে কোটা সংস্কারপূর্বক এক দফা দাবিতে রাষ্ট্রপতিকে দেয়া স্মারকলিপিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন কোটাসংস্কারপন্থী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্তে না যায় তাহলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে কোটাবিরোধী আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

গতকাল বিকেল ৩টার দিকে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময় রাজধানীর শাহবাগ থানায় কোটাবিরোধীদের নামে করা মামলা প্রত্যাহারে পূর্বে দেয়া আলটিমেটামের সাথে আরো ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে দেন তিনি।

গতকাল দুপুর ১২টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এর পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গণভবন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ (জবি), ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজসহ রাজধানীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। গণপদযাত্রাটি রাজু ভাস্কর্য, শাহবাগ মোড়, মৎস্যভবন, হাইকোর্ট, গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মার্কেটে অবস্থান করে। গণপদযাত্রা চলাকালীন হাইকোর্ট ও গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শিক্ষার্থীরা গণভবন অভিমুখে যাওয়া শুরু করে। আন্দোলনকারীদের আসার খবরে বঙ্গভবনের সামনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। যদিও শেষমেশ জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন কোটাবিরোধীরা।

একদফা দাবিতে রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবন অভিমুখে শিক্ষার্থীদের গণপদযাত্রা গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয়। সেখানে তারা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। বেলা ৩টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীদের ১২ জনের একটি প্রতিনিধিদল স্মারকলিপি দিতে বঙ্গভবনে যান। বঙ্গভবন থেকে এসে কর্মসূচি ঘোষণা করেন কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

আজ সোমবার অবরোধ কর্মসূচি বন্ধ, রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি প্রদান : সরকারি চাকরির সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আলটিমেটাম দিয়ে বঙ্গভবন থেকে ফিরেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১২ জন প্রতিনিধি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এক দফা দাবি পূরণ না হলে বৃহত্তর গণ আন্দোলনে যাবে ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। হিসাব মতে, আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি থাকছে না।

আন্দোলনের সমন্বয় প্যানেলের সদস্যরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, আরিফ সোহেল, নিদ্রা, সুমাইয়া। আশিক, কাদের, মাহিন, হাসিব, হান্নান মাসুদ ও সিফাত স্মারকলিপি জমা দিতে বঙ্গভবনের ভেতরে গিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সামরিক সচিব স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।

কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি রাষ্ট্রপতি আমাদের সবার অভিভাবক। স্মারকলিপিতে আমরা এক দফা দাবি জানিয়েছি। আমরা আশা রাখি তিনি এক দফা দাবি পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।

পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতির শরণাপন্ন হয়েছি। তিনি রাষ্ট্রের অভিভাবক। সরকারের কাছে যেহেতু কোনো ধরনের আশ্বাস পাচ্ছি না, আমরা চাই তিনি হস্তক্ষেপ করে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সংসদে কোটাপ্রথার যৌক্তিক সংস্কার করে আইন পাস করতে ভূমিকা রাখবেন। স্মারকলিপিতে রাষ্ট্রপতির কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক দফা দাবি পূরণে একটি সুপারিশ করেছি।

শাহবাগ থানায় আমাদের নামে যে অজ্ঞাতনামা মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। মামলা প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টা আলটিমেটাম দেয়া হয়েছিল। সেটি আরো ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে দিচ্ছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি মামলা প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। এই অন্যায় মামলা দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে বাধ্য হবো।

বাকৃবিতে হলে হলে পদযাত্রা
বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কারের এক দফা বাস্তবায়নের দাবিতে শান্তিপূর্ণ গণপদযাত্রা করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রত্যেক আবাসিক হলে হলে পদযাত্রা করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তারা।

গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে মুক্তমঞ্চ থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা মুক্তমঞ্চ থেকে মিছিল নিয়ে কে আর মার্কেট, আবদুল জব্বার মোড় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের সামনে দিয়ে পদযাত্রা করেন।
পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।

ইবি শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা ও স্মারকলিপি
ইবি সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কার দাবি ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে কুষ্টিয়া শহরে পদযাত্রা করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মোড় থেকে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে পদযাত্রা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।

প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পদযাত্রায় কোটা সংস্কারের দাবির সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানান। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

পদযাত্রাটি মুজিব চত্বর প্রদক্ষিণ করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজার পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন সহকারী কমিশনার মহসীন উদ্দিন। স্মারকলিপি গ্রহণকালে সহকারী কমিশনার মহসীন উদ্দিন বলেন, আমরা প্রসিডিওর অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মেসেজটি যথাযথ জায়গায় পাঠিয়ে দেবো।

কুবিতে গণপদযাত্রা ও স্মারকলিপি
কুবি সংবাদদাতা জানান, সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের চলমান আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লকেড কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে গণপদযাত্রা ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা শহরের পুলিশ লাইন থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারে এই পদযাত্রা শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় কুবি শিক্ষার্থীদের সাথে কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করে।
কুবিতে প্রক্টোরের অপসারণের দাবিতে অফিসে তালা : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের ওপর প্রক্টোরিয়াল বডির উপস্থিতিতে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রক্টোরের অফিসে তালা ঝুলিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিল শেষে প্রক্টরের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন।

রংপুরে পদযাত্রা, স্মারকলিপি
রংপুর অফিস জানায়, কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে রংপুরে পদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতির কাছে ডিসিদের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল দুপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট থেকে পদযাত্রা নিয়ে শিক্ষার্থীরা মর্ডান মোড় এলাকায় যান। সেখানে বটগাছের তলে স্মারকলিপি পাঠ করে শোনানো হয়। স্মারকলিপি পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়কারী শামসুর রহমান সুমন। এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশ চেয়ে সে্লাগান দেন।

ময়মনসিংহে পদযাত্রা শেষে স্মারকলিপি প্রদান
ময়মনসিংহ অফিস জানান, জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল আনন্দ মোহন সরকারি কলেজ ও নাসিরাবাদ কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা নগরীর টাউন হল মোড়ে জড়ো হয়ে সমাবেশ করে। পরে টাউনহল মোড় থেকে শিক্ষাথীরা পদযাত্রা সহকারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে স্মারকলিপি দেন। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।

চট্টগ্রামে ৫ কিলোমিটার পদযাত্রা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ও অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর আগে নগরীর ষোলশহর থেকে জিইসি মোড় হয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার পদযাত্রা করে বেলা ১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পৌঁছে দেন তারা।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ষোলশহর স্টেশন এলাকা থেকে গণপদযাত্রা শুরু করে। পদযাত্রাটি নগরীর ২ নম্বর গেইট, জিইসি, ওয়াসা ও কাজীর দেউরি হয়ে দীর্ঘ ৫-৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কোতোয়ালি থানাধীন পরীর পাহাড়স্থ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছায়।

গণপদযাত্রা জবি শিক্ষার্থীদের
জবি সংবাদদাতা জানান, সারা দেশের সাথে একাত্মতা পোষণ করে শান্তিপূর্ণ গণপদযাত্রা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলার সামনে থেকে পথযাত্রা শুরু হয়। পথযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে তাঁতীবাজর পার হয়ে গোলাপশাহ মাজার হয়ে শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে টিএসসিতে এসে মিলিত হয়।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সামনে থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজসহ রাজধানীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমন্বয় করে বঙ্গভবন অভিমুখে পদযাত্রাটি শাহবাগ, মৎস্যভবন, জিরো পয়েন্ট হয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করার জন্য যাত্রা শুরু করেন।

অনির্দিষ্টকালের জন্য মহাসড়ক অবরোধের হুমকি বরিশালে
বরিশাল ব্যুরো জানায়, কোটা সংস্কার না হলে অনিদিষ্টকালের জন্য মহাসড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বরিশালের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ঢাকায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা।

গতকাল পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টা থেকে গণপদযাত্রা শুরু করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, বরিশাল সিটি কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আসে। তখন ঘণ্টাব্যাপী জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মশাল মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুরে নগরীর সদর রোডের কাকলীর মোড় অবরোধ করে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করে পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহীতে ৮ কিলোমিটার পদযাত্রা
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটারের গণপদযাত্রা শেষে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।

এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে গণপদযাত্রা শুরু হয়। তাদের সাথে যোগ দেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরাও। কাজলা গেট দিয়ে সাহেববাজার হয়ে গণপদযাত্রাটি রাজশাহী কলেজের সামনে পৌঁছলে এতে যোগ দেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরাও। প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার পায়ে হেঁটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছান শিক্ষার্থীরা।

বগুড়ায় মিছিল সমাবেশ
বগুড়া অফিস জানায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে বগুড়ায় বিক্ষোভ ও ছাত্র সমাবেশ হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে শহরের সাতমাথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়া এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাকিব খান, নিয়তি সরকার, জাকিরুল ইসলাম, সৈকত আলী, শাহনেওয়াজ আহম্মেদ প্রমুখ। সমাবেশে সরকারি আজিজুল হক কলেজ, সরকারি শাহ সুলতান কলেজ, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, বগুড়া সরকারি কলেজ ও বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মারক লিপি প্রদান করেন।

Related Articles