পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: সুস্থতা প্রত্যেক মানুষের কাম্য। সুস্থতা ও অসুস্থতা মানুষের জীবনেরই অনুষঙ্গ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন অধিক কল্যাণকর এবং আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। আর যা তোমাকে উপকৃত করবে, সেটিই কামনা করো।’ (মুসলিম: ২৬৬৪)
ইবাদতের জন্য প্রয়োজন সুস্থতা, শক্তি ও সামর্থ্য। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা আল্লাহ তাআলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। নবী (সা.) পাঁচটি অমূল্য সম্পদ হারানোর আগে এগুলোর মূল্যায়ন করার কথা বলেছেন। এর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা। তিনি বলেন, ‘পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিস আসার আগে গনিমতের অমূল্য সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন করো—সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার আগে, অবসর সময়কে ব্যস্ততা আসার আগে, যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্য আসার আগে এবং জীবনকে মৃত্যু আসার আগে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, খ: ৮, পৃষ্ঠা: ১২৭; শুআবুল ইমান, বায়হাকি: ১০২৪৮; হাকিম: ৭৮৪৬)
স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রোগ প্রতিরোধে ও চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামে বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে। সতর্কতা সত্ত্বেও কোনো রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হলে এর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রতিও জোর তাগিদ রয়েছে এবং রোগ প্রতিরোধেও ব্যবস্থা নিতে উৎসাহিত করেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে।’ (বুখারি: ৫৭০৩; তিরমিজি: ২৩৫০) এ জন্য শরীরের যথেচ্ছ ব্যবহার উচিত নয়। যেমন নেশাজাতীয় দ্রব্য হারাম করা হয়েছে এবং পরিমিত আহার ও সময়মতো খাবার গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
সুস্থ দেহ ও সুস্থ মনের জন্য পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা ও পরিপাটি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটি বিষয় আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন
কোনো কারণে অসুস্থ হলে এবং ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহ তাঁকে তাঁর অসুস্থতার কারণে সওয়াব বা পুণ্য দান করেন। নবী (সা.) তাঁর সাহাবিদের দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি।’ (বুখারি: ৫৬৭৮)
সুস্থ দেহ ও সুস্থ মনের জন্য পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা ও পরিপাটি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটি বিষয় আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন। অপরিচ্ছন্নতা ও নোংরা পরিবেশ রোগব্যাধি ছড়ায়। আর ধীরে ধীরে এর প্রভাব মন ও মস্তিষ্ককে আচ্ছন্ন করে। স্বাস্থ্য রক্ষায় পর্যাপ্ত হাঁটাহাঁটি অত্যন্ত উপকারী। হাঁটাহাঁটি শরীরচর্চার অনবদ্য মাধ্যম। মহানবী (সা.) দ্রুত হাঁটতেন। আবার কখনো কখনো দৌড় প্রতিযোগিতাও করতেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সুস্থতার জন্য মানসিক প্রফুল্লতারও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। রাসুল (সা.) নিজেও সর্বদা অত্যন্ত সদালাপী ও হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম বলতেন, ‘আমরা হুজুর (সা.)-এর চেয়ে হাসিখুশি আর কাউকে দেখিনি।’ (তিরমিজি: ৩৬৪১)
নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস সুস্থতায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। অতিমাত্রায় স্বল্প আহার ও অতিভোজন দুটিই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ খাদ্যাভ্যাস আমাদের অনুসরণীয় হতে পারে। যেমন তিনি খুব পরিমিত আহার করতেন। (বুখারি: ৫০৮১) ‘খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি পেটের এক ভাগ খাদ্য, এক ভাগ পানীয় আর এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফাঁকা রাখতেন।’ (তিরমিজি: ১৩৮১) ‘তিনি স্বাস্থ্যকর আহার গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।’ (বুখারি: ৫৪৩১)
ভোরের বাতাস স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক। সকালের ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ব্যক্তিজীবন গঠনেও প্রতিবন্ধক। পবিত্র কোরআনে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন থাকতে বলা হয়েছে। (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২০৫) এ জন্য রাতের প্রথমাংশেই বিছানায় যাওয়ার বিকল্প নেই। চিকিৎসাশাস্ত্র মতেও অধিক রাত্রি জাগরণ নানাবিধ জটিল রোগের কারণ।
হজরত ফাতেমা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুল (সা.) আমার ঘরে এসে আমাকে ভোরবেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলেন, তখন আমাকে নাড়া দিলেন এবং বললেন, ‘মামণি! ওঠো! তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ করো! অলসদের দলভুক্ত হইয়ো না। কেননা, আল্লাহ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের মধ্যে রিজিক বণ্টন করে থাকেন।’ (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব: ২৬১৬)