ময়মনসিংহে সংসদ সদস্য হয়েই নানা বিতর্কে মালেক সরকার

ময়মনসিংহে সংসদ সদস্য হয়েই নানা বিতর্কে মালেক সরকার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সংসদ সদস্য আবদুল মালেক সরকারের বিরুদ্ধে একটি পরিবহন কোম্পানি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই তাঁর অনুসারীরা ওই কোম্পানি দখল করে নেন বলে অভিযোগ করেছেন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে জেলা মোটর মালিক সমিতির হস্তক্ষেপে অস্থায়ী কমিটির মাধ্যমে চলছে আলম-এশিয়া পরিবহন নামের ওই কোম্পানি। কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা।

শুধু পরিবহন কোম্পানি দখলই নয়, হত্যা মামলার আসামিদের প্রশ্রয়, শিক্ষা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় উঠে এসেছে আবদুল মালেক সরকারের নাম। সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি এমন নানা অপরাধমূলক ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ খোদ আওয়ামী লীগ নেতাদের।

উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মালেক সরকার। নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী মোসলেম উদ্দিনকে পরাজিত করেন।

পরিবহন কোম্পানি দখলের অভিযোগ
২০০৮ সালে ছয়জন উদ্যোক্তা মিলে আলম–এশিয়া পরিবহন নামের একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানির মাধ্যমে ফুলবাড়িয়া-ময়মনসিংহ-ঢাকা পথে ৮০টি বাস চলাচল করে। সংসদ নির্বাচনের এক দিন পরই আবদুল মালেকের অনুসারীরা কোম্পানিটি দখলে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমপির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত লোকজন ফুলবাড়িয়া সদরে কোম্পানির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে কর্মচারীদের বের করে সেটি দখল করে নেন। পুলিশকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এমদাদুল হক, সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমদাদুল হক এই কোম্পানির চেয়ারম্যান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এমপির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত লোকজন ফুলবাড়িয়া সদরে কোম্পানির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে কর্মচারীদের বের করে সেটি দখল করে নেন। পুলিশকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে তিনি জেলা মোটর মালিক সমিতিকে জানান। দখল হওয়ার পর আর কার্যালয়েও যেতে পারেননি।

পরে জেলা মোটর মালিক সমিতি গত ১৯ জানুয়ারি ৯ সদস্যের পরিচালনা কমিটি করে দেয়। সেখানে সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি হিসেবে শরাফ উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা, ইউনুস আলী, আবদুল করিম ও আবদুল মান্নান রয়েছেন। পাঁচজনই সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠজন।

ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, পরিবহন দখলের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছিলেন। তবে মোটর মালিক সমিতি সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল মালেক সরকার বলেন, ‘যারা দখল করেছে, তারা আমার লোক নয়। আমার বংশের মধ্যে কোনো গাড়ি নেই। যাদের গাড়ি, তারাই গেছে, আমরা যাব কেন?’

যারা দখল করেছে তারা কোম্পানির কেউ নয় উল্লেখ করে চেয়ারম্যান এমদাদুল হক বলেন, মালিক সমিতি তিন মাসের জন্য কমিটি করে দিয়েছিল। ইতিমধ্যে তিন মাস পেরিয়ে গেছে। এখন তিনি মোটর মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।

জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মো. মাহবুবুর রহমান কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে পরিবহন কোম্পানি পরিচালনার অভিযোগ ছিল বাসমালিকদের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে গাড়িগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে।

হত্যার আসামিদের ‘আশ্রয়-প্রশ্রয়’
সংসদ নির্বাচনের জেরে গত ১৩ মে রাতে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হওয়ার ১৪ দিন পর আক্তার উল আলম নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আক্তারের ভগ্নিপতি ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুর রহমান সংসদ সদস্যের অনুসারী জয়নাল আবেদীনসহ ১৫ জনের নামে মামলা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত দেওখোলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম এ ঘটনার পর সংসদ সদস্যের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপর গত মাসের শেষের দিকে সংসদ সদস্যের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে ছবি নিয়ে সমালোচনার প্রসঙ্গে সংসদ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘…থাকবে, ক্যাডার তো আমার কাছে থাকবে। এমপি-মন্ত্রীগো কাছে ক্যাডার থাকবে না তো কার কাছে থাকবে।’

স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে পরিবহন কোম্পানি পরিচালনার অভিযোগ ছিল বাসমালিকদের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে গাড়িগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে।
জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মো. মাহবুবুর রহমান
এ বিষয়ে আবদুল মালেক সরকার বলেন, ‘কথাগুলোর আগে-পরে অনেক কথা ছিল। হালকা একটু কথা রেকর্ড করা হয়েছে।’

স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা এনামুর রহমান বলেন, ‘হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা এলাকায় দম্ভোক্তি দেখাচ্ছে। তারা বলছে, এই হত্যাকাণ্ডে তাদের কিছুই হবে না। কারণ, এমপি তাদের সঙ্গে রয়েছে।’

গত ২৭ মার্চ শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হন তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন। তিনি বর্তমানে সদর উপজেলায় কর্মরত। সংসদ সদস্যের অনুসারীরা তাঁকে লাঞ্ছিত করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

সংসদ সদস্যের কর্মকাণ্ডে বিব্রত বোধ করছেন উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের চাপে তাঁরা কোণঠাসা অবস্থায় আছেন।

Related Articles