পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মসজিদে মসজিদে মারামারি জন্যে ইসলাম আসেনি মন্তব্য করে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, জাতীয় শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, শাইখুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেছেন, ইসলাম প্রেম ও ভালোবাসার ধর্ম। ইসলাম মানুষকে ভালোবাসতে শিখায়। মসজিদে মসজিদে মারামারি করে, মসজিদ থেকে কাউকে বের করে দেয়ার জন্যে ইসলাম আসেনি।
হযরত ইলিয়াস রহ. উম্মতের মধ্যে বিভক্তি করার জন্যে তাবলীগ জামাত তৈরি করেননি দাবি করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, হযরত ইলিয়াস রহ. ইসলামের প্রচার-প্রসার, মানুষের দ্বীনের হেফাজত, জনসাধারণকে উলামায়ে কেরামের সাথে জুড়িয়ে দেয়ার জন্যে তাবলীগ জামাত তৈরি করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার জন্যে নয়। কাউকে নাস্তিক-মুরতাদ বলে ফাতওয়া দেয়া জন্যে নয়।
বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা চেয়ারম্যান বলেন, তাবলীগের মাধ্যমে সারাবিশ্বে সুন্দর একটা দাওয়াতি কাজ চলছিল। তাবলীগের সাথীরা পৃথিবীর সর্বত্রে দ্বীনের প্রচার-প্রসার করছিল। কিছুদিন আগে যারা একই দস্তরখানায়, এই প্লেইটে বসে একসাথে খানা খেয়েছে, এখন তাদের মাঝে বিভজন সৃষ্টি হওয়ার করণে তারা ইহুদী-খৃষ্টানদেরকে সহ্য করতে পারে কিন্তু তার অপর পক্ষের সাথীকে সহ্য করতে পারে না।
আল্লামা মাসঊদ বলেন, মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রেম-ভালোবাসাকে ইসলাম পছন্দ করে। বিভাজন-বিদ্বেষকে নয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- ‘আল্লাহর জন্যে মানুষকে ভালোবাসা’। তাবলীগের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ভুলে আলেম-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাবলীগের কাজকে বেগবান করার আহ্বান জানান তিনি।
৮ অক্টোবর সোমবার সকাল ১০টার সময় ভেলানগর, নরসিংদীতে আলেম-জনতা ঐক্য গড়ার আহ্বানে, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি বিরুদ্ধে দেশব্যাপি ঐতিহাসিক পথযাত্রার তৃতীয় দিনের পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কওমি মাদরাসা স্বীকৃতি প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি প্রদান করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি ইসলাম ও উলামায়ে কেরামকে ভালোবাসেন। শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি না থাকার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারছিল না, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে এখন বিশ্বের দরবারে শিক্ষিত হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন।
মাদক যুবসমাজকে নষ্ট করে দিচ্ছে মন্তব্য করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মপ্রাণ দেশ। এদেশের যুবকের ধর্মপ্রেমী। ইসলাম, ধর্ম ও দ্বীনের প্রতি এতো টান অন্যান্য দেশের যুবকদের মাঝে কমই দেখা যায়।কিন্তু পরিকল্পিত ভাবে কিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের দেশের উন্নতি সহ্য করতে না পেরে আমাদের যুব সমাজকে মদ-নেশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকাসক্ত করে তাদের জীবনকে নষ্ট করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি যুবদের জীবন নষ্ট করে দিতে পারে তাহলে বাংলাদেশ আর কখন বিশ্বেরদরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবে না।
দুর্নীতি দেশের উন্নতি নষ্ট করে দেয় দাবী করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি। সমাজের সর্বত্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এদেশের এই উন্নয়নের ধারা আকড়ে রাখতে হলে আমাদেরকে দুর্নীতি বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজটা উঠাতে হবে, যাতে করে মানুষ সচেতন হতে পারে।
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বাংলাদেশে উলামায়ে কেরাম ও জাতির অভিভাবক মন্তব্য করে মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকী বলেন, এক লাখ মুফতি, আলেম-ওলেমার স্বাক্ষর সংবলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়া প্রকাশ করে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন কওমি মাদরাসায় কোন জঙ্গি নেই। এখন আবার আলেম-জনতা ঐক্যের আহ্বানে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক একটি পথযাত্রা ডাক দিয়ে কওমি মাদারাসার উলামায়ে কেরামের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার উদোগ্যে আলেম-জনতা ঐক্য গড়ার আহ্বানে, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি বিরুদ্ধে দেশব্যাপি ঐতিহাসিক পথযাত্রা শনিবার সকাল ১১টার দিকে যশোরের চাঁচড়ার মোড়ের জনসভা মাধ্যমে শুরু করেছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।