মাতৃভাষা খোদার সেরা দান

মাতৃভাষা খোদার সেরা দান

  • আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

মাতৃভাষা খোদার সেরা দান। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। বাংলা গাই। আমাদের প্রতিটি  ইঙ্গীত, ইশারা, সঙ্কেত সবই বাংলায় তরজমা করা হয়। মায়ের ভাষাতেই কথা বলে পরম শান্তি অনুভ করি। আট ফাল্গুনের রক্তঝরা সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষপটের সিঁড়ি বেয়ে আমাদের মায়ের ভাষা আমরা রক্ষা করতে পেরেছি। পাকিস্তানীরা আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। ওরা আমার মায়ের আদরের ডাক, বাবা, আব্বু, খোকনসোনা সবই কেড়ে নিতে চেয়েছিল। পারেনি। হায়েনারা হায়েনাই রয়ে গেছে।

আবদুস সালাম, আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, রফিক উদ্দীন আহমদদের মতো ত্যাগী ভাষা শাহীদদের জীবনের বিনিময় আমরা আমাদের মায়ের মুখের সেই মায়াবী ডাক রক্ষা করতে পেরেছি। তাই ১৯৫২ আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাহান্ন-এর চেতনা আমাদের হৃদয়ে সাহস এনে দেয়। উজ্জীবিত করে।

বাহান্ন-এর চেতনা আমাদের হৃদয়ে সাহস এনে দেয়। উজ্জীবিত করে।

ইসলাম ভাষার উপর আগ্রাসনকে সমর্থন করে না। বরং দ্বীন প্রচারের জন্য যেকোনো ভাষা শিক্ষাকে সওয়াবের কাজ হিসেবেই গণ্য করা হয়। ইসলাম জ্ঞান অর্জনে কোনো বাধা তো দেয়ই না বরং উৎসাহিত করে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন, ‘আমি একজন শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ ভাষায় নবীজী ছিলেন দক্ষ। সর্বকালীন বিশিষ্টজনদেরকেও ছাড়িয়ে গেছেন ভাষাজ্ঞানে। তিনি বলেছেন, আনা আফসাহুল আরব’ আমি আরবের মধ্যে সবচে’ সুস্পষ্টভাষী।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস পড়লেও আমরা সে সাহিত্যবোধের খোরাক পাই। তখনকার আরবি সাহিত্যিকদের মতোই তিনিও কথা বলতেন। কবিদের মতোই উচ্চারণ করতেন। এই সুন্দর করে কথা বলার কারণে তখনকার মক্কাবাসী নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কবি ভাবতে শুরু করেছিল। তাই মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তার জন্য শোভনীয় নয়।’ [সূরা ইয়াসীন: ৬৯]

তবে কবি ও কবিতার জন্য চমৎকার একটি জনপদে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন তা সত্য। যদিও বিবি আমেনা ছিলেন একজন স্বভাব কবি। নবীজী নিজে কবিতায় হারিয়ে যাননি।

নিজের ভাষাজ্ঞানে শক্তিঅর্জনের প্রতি উৎসাহ দিয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে কোনো কোনো কবিতায় রয়েছে প্রকৃত জ্ঞানের কথা’। অন্যত্র তিনি বলেন, নিশ্চয়ই কবিতা হচ্ছে সুসংবদ্ধ কথামালা। কাজেই যে কবিতা সত্য-আশ্রিত সে কবিতা সুন্দর। আর যে কবিতা সত্য বিবর্জিত সে কবিতার মধ্যে কোনো মঙ্গল নিহিত নেই।

এমন সুন্দর কথামালা দিয়েও কথা বলা যায়। অশ্লীলতাই কবিতা নয়। শ্লীলতা-সৌন্দর্য চর্চার বৈধতা দিয়েছিলেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অশ্লীল কাব্যে যখন আরব প্রকম্পিত তখনই অবতীর্ণ হলো আল কুরআন। সব কাব্য যেখানে ম্লান হয়ে যায়। ভাষাসাহিত্যের এতই শক্তিধর এই কুরআন, আরববাসী একটি ছত্রও তার মতো কেউ লিখে দেখাতে পারেনি।

ভাষাসাহিত্যের এতই শক্তিধর এই কুরআন, আরববাসী একটি ছত্রও তার মতো কেউ লিখে দেখাতে পারেনি

তাই ভাষাজ্ঞান অর্জনে ইসলাম কখনো বাধা দেয় না। বরং উৎসাহ দেয়। নবীজীর তত্ত্বাবধানে অসংখ্য সাহাবী রা. আরবী ভাষা সাহিত্যিক হয়ে উঠেছিলেন। পরে সেসব জ্ঞানী মানুষরাই পৃথিবীকে গড়ে তোলেন। গ্রহণ করেন দ্বীন প্রচারের গুরুদায়িত্ব।

সম্পাদকীয়, মাসিক পাথেয়, ফেব্রুয়ারী ২০১৩   

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *