মার্কিন পণ্যে পাল্টা ইউরোপীয় শুল্ক

মার্কিন পণ্যে পাল্টা ইউরোপীয় শুল্ক

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের পাল্টায় ২৮০ কোটি ইউরো মূল্যের মার্কিন পণ্যে শুল্ক বসিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বারবন উইস্কি, মোটরসাইকেল ও কমলার রসসহ ইউরোপে রপ্তানি হয় এমন বেশ কিছু মার্কিন পণ্যে শুক্রবার থেকে এ শুল্ক কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এর মধ্যে তামাক, হার্লি ডেভিডসন মোটরসাইকেল, ক্র্যানবেরি ও পিনাট বাটারসহ বেশিরভাগ পণ্যে বসছে ২৫ শতাংশ শুল্ক।

জুতা, কয়েক ধরনের পোশাক ও ওয়াশিং মেশিনসহ কিছু পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা এই শুল্ক আরোপ করল।

বৃহস্পতিবার ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ জাঙ্কার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছে তা ‘সব ধরনের যু্ক্িত ও ইতিহাসবিরোধী’।

“আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে স্পষ্ট ও যথাযথ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভারসাম্য ফেরাতে এবং এর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার আমরা করব।”

চলতি বছরের মার্চে আমদানি করা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ওপর যথাক্রমে ২৫ ও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।

বাণিজ্য নিয়ে মতবিরোধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র জুনের প্রথম দিন থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মেক্সিকোসহ ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ওপর এই শুল্ক কার্যকর করে।

এ নিয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর সম্মেলনেও অন্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের মতানৈক্য দেখা যায়।

কেব্যাকের ওই সম্মেলনে শিল্পোন্নত অন্য দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা মার্কিন শুল্ক ও বাণিজ্য নীতি নিয়ে ট্রাম্পের মুখোমুখি হলেও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি।যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পাল্টায় মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো ও কানাডা।

জি-৭ সম্মেলনে বাণিজ্যবিরোধ নিয়ে সুরাহা না হওয়ায় ইউরোপ পাল্টা এ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয় বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের কট্টর বাণিজ্য নীতির কারণে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যেও সম্পর্কেও টানাপোড়েন চলছে। এরইমধ্যে দেশ দুটি একে অপরের কোটি কোটি ডলারের রপ্তানি পণ্যে শুল্ক বসিয়েছে।

বেইজিং তার ‘ব্যবসার ধরন’ বদলাতে রাজি না হলে চীনের আরও দুইশ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি পণ্যে নতুন করে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপকে ‘তীব্র চাপ ও ব্ল্যাকমেইলিং’ হিসেবে আখ্যায়িত করে চীন ‘পাল্টা ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চীন ও মেক্সিকোর সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতিকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজ দেশের অর্থনীতির বিকাশে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করেন।

রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হলে যে বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়, তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে অন্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে বলে ট্রাম্পের ধারণা। শুল্ক বসিয়ে ওই ‘ভারসাম্যহীনতা’ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন তিনি।

পশ্চিমা বিশ্লেষকদের অধিকাংশই ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতির সঙ্গে একমত নন। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী। এ কারণেই সেদেশের ভোক্তারা বিদেশ থেকে বেশি পণ্য কিনতে পারছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি এই শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্বজুড়ে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের।

ট্রাম্পকে অবশ্য এ নিয়ে একেবারেই চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে না। বিশ্ববাজারের প্রতিকূল পরিস্থিতির শঙ্কা সত্ত্বেও এর আগে তিনি বলেছিলেন, “বাণিজ্য যুদ্ধ ভালো এবং এতে সহজেই জয়ী হওয়া যাবে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *