পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : কক্সবাজারের উখিয়ার পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে ঘুমধুম-উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের কাছাকাছি রাতভর হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণ ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে এপারের সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠেছে। ভয় ও আতঙ্কে হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।
রবিবার (১০ অক্টোবর) রাত ৩টা থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ঘুমধুম ও উখিয়ার পালং খালি এলাকার সীমান্তে মর্টার শেল ও গোলাবর্ষণ হয়ে। একই সময়ে সকাল ৬টা পর্যন্ত টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণ, মর্টার শেল ও গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
তুমব্রু বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, টানা দুই ঘণ্টা ধরে তুমব্রু সীমান্তের ওপারে প্রায় অর্ধশতাধিক রাউন্ড মর্টার শেল বিস্ফোরণ ও প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের শব্দ শুনেছেন তারা। একই এলাকার মাহামুদুল হাসান বলেন, রাত তিনটার পর থেকে প্রচণ্ড বিকট শব্দের কারণে ঘুম ভেঙেছে। সীমান্তের ওপারে ব্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। অন্য দিনের তুলনায় বেশি। ইমাম হোসেন বলেন, বিকট শব্দের কারণে বাড়ি থাকা ছেলে মেয়েরা কান্না করছে।
হোয়াইক্যং ২ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে জবত আলী (৪০) বলেন, মিয়ানমারের ওপারে হোয়াইক্যং সীমান্তের কাছাকাছি হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া বোমা ও মর্টার শেলের শব্দে ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে ওঠে দেখি প্রচণ্ড মর্টার শেলের শব্দ আর হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণের দৃশ্য। ভয় ও আতঙ্কে চিংড়িঘেরে মাছ শিকারে যেতে পারিনি। সীমান্ত এলাকায় এ রকম বোমাবর্ষণ ও মর্টার শেলের শব্দ এই প্রথম দেখলাম।
হোয়াইক্যং ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাঞ্জরপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন (৪৫) বলেন, হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপারে চলমান যুদ্ধ আমাদের মাঝে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগেও ওপারে গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু নতুন করে আজ রাত ৩টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত থেমে থেমে হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণ ও মর্টার শেল থেকে ছোড়া গোলার শব্দে রাত জেগে বসেছিলাম, আমার বাড়ি সীমান্তের কাছে হওয়ায় ওপারে থেকে বিকট শব্দের বাড়িঘর পর্যন্ত কেঁপে উঠে। ওপারে দেখা যাচ্ছে আগুনে যেন কিছু জ্বলে যাচ্ছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় নতুন করে মিয়ানমারের ওপারে সীমান্তের কাছে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গোলাবর্ষণের ঘটনায় এপারের সীমান্তবাসীর মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী লোকজনদের নিরাপদে থাকার জন্যও সতর্ক করা হয়েছে।
উখিয়ার পালংখালি সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা নুরুল বশর (৩৫) বলেন, পালংখালি সীমান্তের কাছে বিগত সময় ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরকান আর্মির (এএ) মধ্যেকার চলা যুদ্ধে আমরা আতঙ্কিত হয়েছিলাম। মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ থাকায় আমরা স্বাভাবিক ভাবে থাকতে পারছি। রাত থেকে নতুন করে আবারও সীমান্তের ওপারে শুরু হওয়া সংঘাত নতুন করে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।
ঘুমধুম জিরো পয়েন্টের রোহিঙ্গা আবুল কালাম (৩৬) বলেন, সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির ঘটনায় সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ও স্বাধীনতাকামী আরকান আর্মি (এএ) সংগঠনের সঙ্গে মংডু মৌলভি বাজার, পুর্মা, চাকমা পাড়া, বালুখালি, কুমরখালি, চামবনা এলাকায় প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
তুলাতলী খারাইংগাঘোনার মফিজ ও উনচিপ্রাংয়ের ইসমাইল বলেন, সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। খুবই আতঙ্কে আছি, এখনো কিছুক্ষণ পরপর বিকট শব্দ আসছে।