‘মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অবদান অস্বীকারের সুযোগ নেই’

‘মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অবদান অস্বীকারের সুযোগ নেই’

পাথেয় রিপোর্ট : ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরাম’ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দেশকে ভালোবাসার ম্যাসেজ পৌঁছে দেয়ার জন্যই কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী। তিনি বলেন, কেবল মুক্তিযুদ্ধে নয় ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনেও আলেমগণ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। এখন আর মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অবদান অস্বীকারের সুযোগ নেই।

শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরাম’ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ নাঈম ইসলামের উপস্হাপনায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইফতার মাহফিল।

স্বাগত বক্তব্যে আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরামের লক্ষ্য ও কার্যক্রম তুলে ধরেন সাংবাদিক মাওলানা মাসউদুল কাদির।

‘আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরামের প্রেসিডেন্ট মাওলানা সদরুদ্দিন মাকনুন সমাপনী ভাষণে বলেন, ৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালি আলেমসমাজের বিপুল একটা দলের সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সমভাবেই তারা যুদ্ধ করেছে। কিন্তু ৭৫ এ পট পরিবর্তনের পরপরই খুব সুচারুভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে ‘পেয়ারে পাকিস্তান’ বলে স্লোগান তোলা কিছু বাঙালি তাদের দলীয় এবং মতাদর্শের স্বার্থে বাঙালি আলেমসমাজকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস থেকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করেছে। আরেকটি কঠিন সত্য হলো, পাকিস্তানিরা যদিও আমাদের দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে কিন্ত তাদের কালচার এবং মতাদর্শ এখনও রয়েছে। তাই সবার আগে ইতিহাসবিদ বা যারা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে লিখেন আমি মনে করি তাদের দায়িত্ব হলো ৭১ বাঙালির ওপর পাকিস্তানিদের অত্যাচারের ভয়াবহতা তুলে ধরা এবং বিস্মৃত হওয়া সঠিক ইতিহাসকে একদম প্রথম শ্রেণী থেকে শিশুদের কাছে তুলে ধরা। যেন পরবর্তী প্রজন্ম দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে পারে।

কিশোরবাংলার নির্বাহী সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আহমেদ রিয়াজ বলেন, চাঁদপুরের বড় মসজিদের ইমাম সাহেব মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করেছেন। আলেমদের অবদানের বিষয়ে আরও আগে সোচ্চার হওয়া দরকার ছিল।

কিশোরপথের সম্পাদক মুফতি আব্দুল মুমিন বক্তব্যে বলেন, ৭১ এ অনেক আলেমরাই মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইতিহাসে তারা বিস্মৃত। আজ সময় এসেছে সে সত্যকে তুলে ধরার।

ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল আউয়াল সুমন বলেন, ইতিহাস ঘাটলে অনেক আলেমকেই এমন পাওয়া যাবে যারা স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন।

একই কথা বলেন ঢাকা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল কুদ্দুস বাদল।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট খন্দকার মুজ্জাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলেম সমাজ ও সাধারণদের মাঝে যে দ্বিধাবিভক্তি এটা ৭১পরবর্তী পাকিস্তান সমর্থিত একটি গোষ্ঠীর। যারা খুব সুপরিকল্পিতভাবে আলেমসমাজের এ পৃথকীকরণের দ্বারা জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে এবং করে আসছে। বাস্তবে আলেমসমাজের বিরাট একটি অংশের অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই ছিল।

ফোরামের সেক্রেটারি সৈয়দ মাওলানা আনোয়ার আব্দুল্লাহ মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অংশগ্রহণ ইতিহাস টেনে বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ আলেমই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন।

প্রজন্ম ফোরামের সহ-সভাপতি মাওলানা সারওয়ার আলম ভূঈয়া বলেন, বাঙালি আলেমসমাজ স্বাধীনতার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন ৭১এ। কিন্তু পাকিস্তানপ্রেমী কিছু লোকের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে আলেমসমাজ। তার মানে এই নয় যে, আলেমরা স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম ফোরাম জাতির কাছে এ বিষয়টি স্পষ্ট করতেই কাজ করে যাচ্ছে।

প্রজন্ম ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক আইনজীবী রাশিদুল আলম মোল্লা বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে আলেমসমাজের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের জন্য তাঁদের ত্যাগ কোনও অংশেই কম ছিলো না অন্যদের চেয়ে। স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী আলবদর -আল শামস’র কারণে আলেমসমাজের গায়ে ঢালাওভাবে একটি মিথ্যে অপবাদ লেগেছে। আমাদের প্রজন্ম ফোরাম সেই প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্যই বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে।

এ ছাড়াও উপস্থিত অতিথি জনপ্রিয় গল্পকার, যুদ্ধ দলীল ডট কমের প্রতিনিধি অপু মজুমদার এবং বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার ঢাকা মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব আহমাদসহ অনেক গুণীজন, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং সাংবাদিকবৃন্দ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *