মুক্ত হস্তের এক আদর্শিক জামাত

মুক্ত হস্তের এক আদর্শিক জামাত

  • মুহাম্মাদ আইয়ুব

যে সকল গুণ উম্মতের শ্রেষ্ঠসন্তান সাহাবায়েকেরাম রাদি.কে আকাশের তারা বানিয়েছে সেগুলোর অন্যতম হল দানশীলতা। নিজের সর্বস্ব অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে কীভাবে তাঁরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দানবীরদের কাতারে শামিল হয়েছেন আজ পাঠকদের সেই গল্পই বলবো। ঘুরিয়ে আনবো প্রবাদতুল্য সে দানের ভুবন থেকে, পূর্বসূরীদের দয়া-দাক্ষিণ্যের বিষ্ময়কর জগত থেকে।

এক. ক্যালেন্ডারের পাতায় তখন নবম হিজরী শোভা পাচ্ছে। মক্কা বিজয়ের আনন্দের রেশ তখনও দোলা দিয়ে যাচ্ছিলো মনে। এরই মাঝে আবার বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা। সেই সুদূর তাবুকে তৎকালীন পরাশক্তি রোমের বিরুদ্ধে। দুর্ভিক্ষের চোখ রাঙানি, আরবের উত্তপ্ত লু-হাওয়া, চির শত্রু মুনাফিকদের প্রোপাগাণ্ডা, বিরোধি শক্তির বিশাল সৈন্য বাহিনী, রসদের অভাব, বাহনের স্বল্পতা কোন কিছুই মুসলমানদের ঈমানের সামনে টিকতে না পেরে ধুলোর মতো উড়ে গেল। সৈন্যবাহীনীর বাজেট ব্যয়ভার বহনের জন্য হুজুর সাঃ বরকতময় এক সুন্নত চালু করলেন। ঘোষণা দিলেন, ‘যার যা কিছু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে এগিয়ে এসো আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যে’।
অমনি শুর হল প্রতিযোগিতা।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ নিজের সকল সম্পদ, ঘরের আসবাবপত্র এমনকি ব্যবহৃত কাপড়টাও এনে হুজুর সাঃ এর সামনে রাখেন। হযরত ওমর ফারুক রাঃ নিজ সম্পদের অর্ধেক এনে দেন। হযরত ওমর রা. যখন তাঁর অর্ধেক সম্পদ নিয়ে নবীজীর সাঃ কাছে যাচ্ছিলেন তখন মনে মনে ভাবছিলেন আজ আমি হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃকে ছাড়িয়ে যাব। (কেননা হযরত ওমরের সম্পদ ছিল অনেক বেশি) হুজুর সাঃ হযরত ওমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন ওমর! কী এনেছ আর পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? বললেন, অর্ধেক নিয়ে এসেছি বাকি অর্ধেক পরিবারের জন্য রেখে এসেছি।

একই প্রশ্ন যখন ‘গারে ইয়ার’ হযরত সিদ্দিকে আকবার রাঃ কে করলেন তখন তিনি উত্তরে বললেন, ইদ্দাখারতুল্লাহা ওয়া রাসূলাহ’ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ঘরের পুঁজি বানিয়ে এসেছি। একথা শুনে উমর মনে মনে বললেন আমি বুঝি আর কখনই তার আগে যেতে পারবো না। হযরত উছমান রাঃ এক হাজার উট, বাহনের জন্য ৭০ টি ঘোড়া, সেনা বাহিনীর ব্যয়ভারের জন্য ১ হাজার স্বর্ণমুদ্রা নিজের কোঁচরে করে এনে হুজুর সাঃ এর সামনে এনে ছড়িয়ে দেন। হুজুর সাঃ তা গ্রহণ করে দোয়া করেন, হে আল্লাহ! তুমি উছমানের প্রতি সন্তুষ্ট হও কেননা আমি তার উপর সন্তুষ্ট।

হযরত আব্দুর রহমান ইবন আউফ রাঃ ৪০ হাজার দিরহাম তহবিলে জমা করে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার ঘরে ৮০ হাজার দিরহাম ছিল অর্ধেক আপনার নিকট এনেছি বাকি অর্ধেক পরিবারের ভরণপোষণের জন্য রেখে এসেছি।

হুজুর সাঃ তার কল্যানের জন্য দোয়া করে দেন যে, যা এনেছ আল্লাহ পাক এতে বরকত দিন আর যা রেখে এসেছ তাতেও বরকত দান করুন।

হুজুর সাঃ এর এই দোয়ার কল্যানে একটা সময় আরবের উচ্চমানের ধনী বণিকের স্তরে উপনিত হন।

মুহাজির আনসার সকলেই সাধ্যমতো দান করতে থাকেন। মহিলারা নিজেদের অলংকার খুলেখুলে যুদ্ধ তহবিলে পাঠিয়ে দেন।

দুই. হযরত আবু আকীল আনসারী রাঃ ছিলেন খুবই অভাবী ও দরিদ্র মানুষ। এক পুটলি খেজুর নিয়ে নবীজীর সাঃ হাতে দিয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি সারাদিন শ্রমের বিনিময়ে দুই সা’ খেজুর পেয়েছি। এক সা’ পরিবারের জন্য রেখে এসেছি আর এক সা’ এই যে এনে দিলাম। রাহমাতুল্লিল আলামীন সাঃ এর হৃদয়তন্ত্রী নড়ে উঠল। নিজের একজন দরিদ্র সাহাবীর কুরবানী ও ত্যাগে সীমাহীন মুগ্ধ হলেন। তাঁর দেয়া খেজুরগুলো সবার উপর রাখেন।

প্রিয় পাঠক! এই তো আমাদের পূর্বসূরিরা! দেখুন তাদের ঈর্ষনীয় জীবনচরিত। ইসলামের জন্য তাদের ত্যাগ কল্পকাহিনিকেও হার মানায়। আহ! হতাম যদি তাদের শতের এক!আবার ফিরে পেতাম খোদার জমিনে খোদায়ী শাসন। নূরানী আভায় প্রস্ফুটিত হত অবরুদ্ধ পৃথিবী। আমি আছি সেই সুদিনের অপেক্ষায়। সাহাবিদের ছাঁচে গড়া কিছু জান্নাতি মানুষ আবার দেখব বলে।

লেখক, লেখক, শিক্ষক ও মাদরাসাপ্রধান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *