মুফতী সালমান মানসুরপুরীর জগদ্বিখ্যাত হয়ে উঠার যাত্রা

মুফতী সালমান মানসুরপুরীর জগদ্বিখ্যাত হয়ে উঠার যাত্রা

পাথেয় টোন্টিফোর ডটকম: আগামিকাল শনিবার বাংলাদেশে শুভাগমন করছেন ভারতের প্রথিতযশা আলেম ও মুফতি সৈয়দ সালমান মানসুরপুরী। তাঁর আগমনকে ঘিরে সাজসাজ রব পড়ে গেছে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের মফস্বলগুলোর মাদরাসায়। দেশের মুফতি ও আলেমরা আয়োজন করছেন ফিকহী সেমিনার, ইলমী হালাকাহ কিংবা ওয়াজ- মাহফিলের। উপমহাদেশে মুফতি বলতে যে কয়েকজনের নাম উঠে আসে তিনি তাদের প্রথম সারিতে থাকবেন। বয়সের পঞ্চাশ পেরোনোর আগেই এই আলেম ভারত বর্ষের ইলমী মহলে কীভাবে এমন নন্দিত ও অনিবার্য হয়ে উঠলেন তা জানতে অনেকের মনেই কৌতুহল।

মুফতি সালমান মাসুরপুরী বিশেষ কিছু অনবদ্য কৃর্তী ও গুণের কারণে ইলমী মহলে নন্দিত হয়েছেন। সর্ব মহলে হয়েছেন জনপ্রিয়। সেগুলোর মধ্যে তাঁর খান্দান, তাঁর ব্যাক্তিত্ব ও তাঁর ইলমী কারনামা উল্লেখযোগ্য।

তাঁর মা শাইখুল ইসলাম সাইয়্যেদ হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. এর তণয়া। বাবা বিদগ্ধ আলেম, উস্তাজুল আসাতিজা, উপমহাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম দেওবন্দের একসময়ের নায়েবে মুহাতামীম ও শাইখুল হাদীস মাওলানা ক্বারী সৈয়দ মুহাম্মদ উসমান মনসুরপুরী। জ্ঞানে, গুণে, প্রজ্ঞায়, তাকওয়ায় ও বংশীয়ভাবে অনন্য এক পরিবারে ১১ই ফেব্রুয়ারী ১৯৬৭ সালে দেওবন্দের পুণ্য মাটিতে জন্ম গ্রহণ করেন সালমান মানসুরপুরী । শৈশব ও কৈশর কাটে পিতা-মাতার নৈতিকতা ও ধর্মীয় দিক্ষার ছায়াতলে। চলনে খোদাভীতি, বলনে পরিমিতিবোধ, আমলে আত্মবিলীন, ইলমের প্রতি অদম্য স্পৃহা ও চারিত্রিক নির্মলতার এক বিপুলা গুণবোধ ধারণ করে তিনি বড় হয়েছেন এই ঘরে। সাইয়্যেদ বংশীয় পিতা ও মাতার ঘরে জন্ম নেওয়া ও মাদানি আবহে বেড়ে উঠার এই এক খোদায়ী নে’আমতে তাঁর গ্রহনযোগ্যতার একটি কারণ হতে পারে।

মুফতি সালমান মানসুরপুরীর ব্যক্তিত্ব অপরিসীম। তাঁর কথা বলার ধরণ অন্যান্য আলেমদের থেকে ভিন্ন। তিনি খুব ইলমী আন্দাজে, সজাগ চেতনে কথা বলেন। অন্ত্যন্ত ধৈর্যশীল ও স্থৈর্যময় আলেম তিনি। একবার এক মাহফিলের স্টেজে তিনি বসে আছেন। আগের বক্তার থামার কোনো নাম নেই। তিনি এককগ্রচিত্তেই তাসবীহ পাঠ করে যাচ্ছেন। পয়তাল্লিশ মিনিট পরে সেই বক্তা চেয়ার থেকে উঠলে পরে তিনি উপবিষ্ট হন। এর মধ্যে মাহফিল কমিটি সেই বক্তাকে থামিয়ে দিতে উদ্যত হলে তিনি হাতের ইশারায় নিষেধ ক্রেন। তাঁর এই উদারতা ও সুউচ্চ ব্যাক্তিত্ববোধ সম্পন্ন মানসিকতাই তাঁকে নান্দনিক ও প্রিয়ভাজন করে তুলেছে।

পড়াশোনার কথা বলতে গেলে , তিনি আপদমস্তক দরসে নেজামীরই সন্তান। মুরাদাবাদের জামিয়া কাসেমিয়া মাদরাসায় প্রাথমিক পাঠ শুরু করেন। এবং জামি’আ মসজিদে আমরুহাতে মাত্র এগার বছর বয়সে কুরআনুল কারীম হিফজ সম্পন্ন করেন। নাহু-সরফ, বালাগাত, মানতেকসহ দরসে নিজামীর প্রাথমিক ক্লাসগুল এখানেই শেষ করেন।

১৪০২ হিজরীতে ইলমের অদম্য স্পৃহা পূরণ করতে উপমহাদেশের সর্বচ্চ বিদ্যাপীঠ দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি হন। সেখানে তিনি চতুর্থ বর্ষ থেকে নিয়ে দাওরা হাদীস পর্যন্ত পড়েন। ১৪০৭ হিজরীতে সর্বচ্চ নাম্বার পেয়ে দাওরা হাদীস সম্পন্ন করেন। ১৪০৮ হিযরীতে তাখাসসুল ফিল ইফতা সম্পন্ন করেন এবং সে বছরই প্রথম বারের মতো বায়তুল্লাহ শরীফে হজ্বের সফর করেন।

ইলমুল ফিকহ ছিলো তাঁর মন ও মননে মিশে থাকা এক নাম। শুরু থেকেই ফিকহের প্রতি ছিলো বিশেষ ঝোঁক। যার দরুণ পড়াশোনা শেষ করার সাথে সাথেই মাদরাসায়ে কাসেমিয়ায় দারুল ইফতায় উস্তাদদের নিবিড় তত্বাবধানে ফতোয়াপ্রার্থীদের ফতোয়া লেখার কাজে নিরত হন। সে বছরই মাদরাসায়ে কাসেমিয়া শাহী মুরাদাবাদে মুদাররিস ও ইফতা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সেই সাথে ফাতাওয়া বিন্যস্তকরণ ও নেদায়ে শাহী পত্রিকার দেখভাল খুব দক্ষতার সাথে তিনি সামাল দেন। এসময় তিনি ত্বহাবী, মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক ও হেদায়া তৃতীয় খণ্ডের দরস প্রদান করেন।

এছাড়াও ফিকহে হানাফির বিখ্যাত কিতাব ফতোয়ায়ে শামী ও উকূদি রাসমিল মুফতির পাঠদান করেন। মাত্র তিন বছরে তিনি সহস্রাধিক ফতোয়া জমা করেন।

ইলমী কারনামাহ
তাঁর ইলমী কারনামার ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি যেমন ঋদ্ধ। একজন লেখক হিসেবেও তিনি সমৃদ্ধ। ছোট বড় সব মিলিয়ে কয়েকশত কিতাব লিখেছেন তিনি। মাসায়েল ও ফাতাওয়ার উপর লিখিত তাঁর কিতাবুল মাসায়েল ও কিতাবুন নাওয়াযেল পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এছাড়াও তিনি জীবনদর্শন, সূফিতত্ত্ব, ইসলামী জিজ্ঞাসা ও জবাব, দৈনন্দিন জীবনের আহকাম ইত্যাদি বিষয়ে অসংখ্য কিতাব লিখেছেন। তাঁর এই কিতাবাদি ইলমী মহলে তাঁকে সুউচ্চ মার্গে অধিষ্ঠিত করেছে। দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে শুরা তাঁকে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ করেছেন।

মুফতি সালমান মানসুরপুরীর বাংলাদেশ সফরসূচি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

লেখক- তামীম আব্দুল্লাহ
সম্পাদক- আব্দুস সালাম ইবনু হাশিম

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • (মুফতি) মাসউদ ভবানীপুর মাদ্রাসা গোপালগঞ্জ , অক্টোবর ৭, ২০২৩ @ ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

    শরীফুন নাফস ফকীহুন নাফস মাদারঝাদ ওয়ালী বে নফস বোযোর্গ খানদানি ওয়াজাহাত রিয়া সুমআ কিবির উজব তাকাল্লুফ তাছান্নু’ মুক্ত বিনয়ী বরং সর্বোচ্চ বিনয়ী বলতে যা বোঝায়
    সরল ভাষায় আমি তাহার চার বছরের নগণ্য দারুল উলুম দেওবন্দের একজন কেলাস সাথীর মূল্যায়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *