আমিনুল ইসলাম কাসেমী : জানেশীনে ফেদায়ে মিল্লাত, জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সেক্রেটারী মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ আসআদ মাদানী দামাতবারাকাতুহুম বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। অল মুসলিম বিশ্বের হৃদয়ের স্পন্দন। তাঁকে আমি ভালোবাসি। এ ভালোবাসা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
মাহমুদ মাদানী সাহেবকে চিনি ১৯৯৫/৯৬ সনে যখন দেওবন্দে পড়ি, সেসময় থেকে। তখন দেওবন্দেই মাহমুদ মাদানীর নাম শুনতাম। একদম তৃণমুল পর্যায়ের মানুষের মুখে মুখে ছিল। মাদানী খান্দানের ইতিহাস ঐতিহ্য তো কারো অজানা নয়। তিন পুরুষ ধরে একটানা তাঁদের খেদমত চলছে মুসলিম উম্মাহর জন্য। যেমন দাদা সাইয়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) অল বিশ্ব নাড়া দিয়েছিলেন। তাঁর অবদান ছিল পুরো বিশ্ব জুড়ে। তেমনী মাহমুদ মাদানীর পিতা ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী (রহ.) ও বিশ্ব মুসলিমের কাছে প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর মেহনতও ছিল হর লাইনে। তিনি ছিলেন মুসলিম উম্মাহর একনিষ্ঠ রাহবার।
ঠিক বাপ- দাদার সেই ঐতিহ্য- ইতিহাস ধরে রেখেছেন মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানী। পুরোপুরি সেই নকশে কদমে চলছেন। একদম তাদের বাতলানো পথে। যার কারণে মাহমুদ মাদানী এখন বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তি হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছেন।
ফেদায়ে মিল্লাতের জীবদ্দশায় মাহমুদ মাদানী সাহেবকে তখন খেদমতে খালকের মিশনে দেখা গেছে। যে কারণে সেই নব্বই দশকে ইউপিতে মাহমুদ মাদানীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করেছি। একেবারে মানুষের সাথে মিশে গেছেন। জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে জনসাধারণের খোঁজ খবর নিয়েছেন তিনি। যখন ফেদায়ে মিল্লাত এর ইন্তেকাল হলো, এরপরে তো তিনি এখন তাঁর জানে-শীন। পিতার স্থলাভিষিক্ত হয়ে মুসলিম উম্মাহর রাহবারী করার দায়িত্ব তাঁর স্কন্ধে। আর ঠিক তিনি সুনামের সাথে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
আসলে মুসলিম উম্মাহর রাহবার তাদের বলা যায়। সত্যিকারের নেতাই তারা। যাদের সাথে মাটি মানুষের সম্পর্ক। কোন হম্বি-তম্বি করা নয়। কোন লৌকিকতা নয়। শুধু বয়ান করে মাইক ফাটানো না। মাহমুদ মাদানী সাহেব এমন নয়, কর্মিদের ময়দানে নামায়ে তিনি বিদেশে পাড়ি জমাবেন। মানুষকে বিপদে ফেলে তিনি নিরাপদে কোথাও পালিয়ে থাকবেন। তিনি এমন এক নেতা, যিনি বিপদ-আপদে হাজির হন পৃথিবীর যে প্রান্তেই তিনি থাকেন।
বিপর্যস্ত মুসলিমের পক্ষে সব সময় কথা বলেন। তাদের পাশে আছেন সব সময়। যেভাবে ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী ছিলেন, তিনিও ঠিক সেভাবেই মানুষের খেদমতে। মাহমুদ মাদানীর কার্যক্রম দেখলে গর্ভে বুকটা ভরে যায়। তাঁকে শ্রদ্ধা করতে, ভালোবাসতে মন চায়। বিশেষ করে যখন তিনি বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ান, তখন সত্যি মাহমুদ মাদানীকে মাথায় করে রাখতে ইচ্ছে করে।
বেশী দুরে যাব না আমি। এই বিগত রমজানের কথা। আটকে পড়া তবলীগের সাথীদের নিয়ে যখন তোলপাড় চলছিল। পুরো ভারত জুড়ে তবলীগের সাথীদের বিরুদ্ধে সবাই অবস্থান নিয়েছে। এমন কোন মিডিয়া বাকী ছিল না যারা নিজামুদ্দীনের সেই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে টেনে নেয় নি। সেটাকে কেন্দ্র করে পুরো মুসলিমদের উপর খড়গ চাপানো হচ্ছিল। এক থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল পুরো দেশে।
সেই সংকটময় মুহুর্তে নিজামুদ্দীনের পাশে দাঁড়ালেন মাহমুদ মাদানী তথা জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। সাথে ছিলেন মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানী দামাতবারাকাতুহুম। একদম বুক পেতে যেন তিনি দিলেন। যেখানে পুরো সরকারের কর্মকর্তারা তাবলীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। নিজামুদ্দীনকে লক করা হল। সেই মুহুর্তে তাবলীগের সাথীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পুরো দেশের মানুষ এবং মিডিয়ার রোষানল থেকে বাঁচালেন।
এখানেই শেষ নয়। তবলীগের আটকে পড়া সাথী ছিল প্রায় আড়াইহাজার। লকডাউনের মধ্যে তাদের সকলকে নিজ এলাকাতে পৌছানোর জন্য সরকারের কাছ থেকে পারমিশন করায়ে আবার তাদের জন্য স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করলেন। সেই আড়াইহাজার লোকের ইফতার সেহেরী খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন।
মাহমুদ মাদানীকে দেখেছিলাম সেদিন, তিনি আসলেই লিডারের ভুমিকা পালন করেছিলেন। সকল সাথীকে নিরাপদে পৌছানোর জন্য তাঁকে দেখা গেল দিল্লির ষ্টেশনের প্লাট- ফরমে। হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছেন। বড় মনমুগ্ধকর ছিল সে দৃশ্য।
এজন্য ভালোবাসা অবিরাম মাহমুদ মাদানীকে। যোগ্য লিডার তিনি। মুসলিম উম্মাহর নিষ্ঠাবান রাহবার তিনি। অসংবাদিত দায়ী তাকে বলা যায়। যার প্রতি এখন শত শত কোটি মানুষের আস্থা। যার প্রতি মানুষের প্রাণঢালা ভালোবাসা।
তিনি দৃঢ়পদে উম্মাহর কাজ করে যাচ্ছেন। নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব পরিমন্ডলে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তাঁর পথ চলা। যিনি পিছপা হতে জানেন না। সর্বস্তরের মানুষকে এক প্লাটফরমে তিনি দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ যেন হযরত মাদানীর প্রতিচ্ছবি। একদম কাট্টা বেদআতী থেকে নিয়ে সকল মতের লোককে এক জায়গায় বসাতে পেরেছিলেন। আন্তর্জাতিক কনফারেন্স যেটা পুরো বিশ্বের দৃষ্টি কেড়ে ছিল।
আরও পড়ুন: বিশ্ব মুসলিম তারুণ্যের আইডল মাহমুদ মাদানী : আল্লামা মাসঊদ
আমাদের এসকল লিডার থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার। কোন খাই খাই মেযায নয়। নিজের স্বার্থ হাসিল করার মিশন নয়। আজকাল কিছু নেতাদের হম্বি-তম্বি শুধু শোনা যায়। ঘরে বসেই যত হাক-ডাক। দেশের কল্যাণে কোন কাজ তাদের নেই। অসহায়-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের কথা বলেন না। দেশের দ্রব্য মুল্যের উর্ধগতি। মানুষ অধিকার বঞ্চিত। কিন্তু কোন কথা নেই।
আকাবির-আসলাফগণের জীবনী থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। হযরত মাদানী এবং তাঁর উত্তরসুরীগণ যেভাবে জাতির জন্য কাজ করেছেন, আমরাও সেটা অনুসরণ-অনুকরণ করতে পারি। হযরত মাদানীর উল্লেখযোগ্য খুলাফা যারা আমাদের এই দেশে বহু অবদান রেখেছেন, সেসব মহারথীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা যেতে পারে।
এজন্য দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা দরকার। যেমনটি মাদানী (রহ.) এবং তাঁর বংশ পরম্পরা করে আসছেন। বর্তমানে মাহমুদ মাদানী যিনি সেই ছোটবেলা থেকেই জনতার পাশে রয়েছেন। যার সম্পর্ক তৃণমুল পর্যায়ের সাথে। পরিশেষে আওলাদে রাসুল, ফেদায়ে মিল্লাতের জানেশীন সাইয়্যিদ মাহমুদ আসআদ মাদানীর জন্য দুআ রইল। আল্লাহ তাকে নেক হায়াত দান করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট