পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মৃত্যুদণ্ড হল আইনি পদ্ধতিতে কোনো ব্যক্তিকে শাস্তিস্বরূপ হত্যা করা। যেসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে সাধারণত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়ে থাকে, সেগুলিকে বলা হয় ‘মৃত্যুদণ্ডার্হ অপরাধ’। অতীতে প্রায় সকল দেশেই মৃত্যুদণ্ড প্রথা প্রচলিত ছিল। কিন্তু এখন বিশ্বের ১৭০ দেশ মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে কিংবা এর চর্চা নীতিগতভাবে বা কার্যকর করা থেকে বন্ধ রেখেছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
এএফপির খবরে বলা হয়, লন্ডনভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান মৃত্যুদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে বিশ্বব্যাপী এই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মতে, ইরান, পাকিস্তান ও সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার হার বেড়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার উল্লিখিত সহস্রাধিক ঘটনার মধ্যে চীনকে রাখা হয়নি। দেশটির ভেতর হাজারো নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে তথ্য রয়েছে।
বিশ্ব মৃত্যুদণ্ডবিরোধী দিবসে মৃত্যুদণ্ডের চর্চা বন্ধ করার চেষ্টা করায় অনেক দেশের প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ১৪২ দেশ এখন আর মৃত্যুদণ্ড চর্চা করছে না। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন সংস্থাটির মহাসচিব, তাতে ১৭০ দেশের তথ্যই উঠে এসেছে, যারা অপরাধের শাস্তি হিসেবে অন্তত ১০ বছর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা থেকে বিরত রয়েছে। এ মুহূর্তে জাতিসংঘের সদস্য দেশ ১৯৩টি, যার মানে দাঁড়ায় অন্তত ২৩ দেশ গত এক দশকে মৃত্যুদণ্ড অন্তত একবার হলেও কার্যকর করেছে।
জাতিসংঘ বলছে, সদস্য দেশগুলো থেকে পাওয়া তথ্যের পাশাপাশি তারা এসব দেশের নাগরিক সমাজের কাছ থেকেও তথ্য নিয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, গত পাঁচ বছরে তাদের হিসেবে অন্তত ৩৩ দেশ একবার হলেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। সংস্থাটি দেশগুলোর সরকারি তথ্য, গণমাধ্যম কিংবা যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের তথ্যের উৎস বলে উল্লেখ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবে- ২০১৭ সালে বিশ্বের ৫৩ দেশে দুই হাজার ৫৯১ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি জানায়, মৃত্যুদণ্ডের তথ্যের বিষয়টিকে বেইজিং ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার অংশ হিসেবে গণ্য করে’। ভিয়েতনাম ও বেলারুশও তাই মনে করে। ২০১৪ সালে রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই বছর ১ হাজার ৬১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এটা ছিল ৫৪ শতাংশ। ওই বছর এসব মৃত্যুদণ্ডের প্রায় ৮৯ শতাংশ কার্যকর করা হয় ইরান, পাকিস্তান ও সৌদি আরবে। অ্যামনেস্টির মহাসচিব সলিল শেঠি বলেন, গত বছর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার বৃদ্ধির বিষয়টি স্বাভাবিক ধারাকে ব্যাহত করেছে। গত ২৫ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইরান, পাকিস্তান ও সৌদি আরবে পক্ষপাতদুষ্ট বিচারের পর নজিরবিহীনভাবে মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
২০১৩-১৭ সময়ে যেসব দেশে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে : আফগানিস্তান, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেলারুশ, বতসোয়ানা, চাঁদ, চীন, মিসর, গিনি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, জাপান, জর্ডান, কুয়েত, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর কোরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম ও ইয়েমেন (লিবিয়া ও সিরিয়ায় যুদ্ধের কারণে তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি)।
আইন থাকা সত্ত্বেও যে ২১ দেশ কার্যকর থেকে বিরত : অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বাহামা, বার্বাডোজ, বেলিজ, কোমোরোস, কিউবা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ডমিনিকা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গায়ানা, জামাইকা, লেবানন, লেসথো, কাতার, সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ে।
গত বছর সারা বিশ্বে কমপক্ষে ১ হাজার ৬৩৪টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ সংখ্যা ১৯৮৯ সালের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ বিশ্বজুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার হার বেড়েছে বলে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।