মেনে নিতে পারছি না মামুজীর ইন্তেকাল

মেনে নিতে পারছি না মামুজীর ইন্তেকাল

মেনে নিতে পারছি না মামুজীর ইন্তেকাল

إلهي، قلوبنا بين يديك إمنحها صبراً لا ينتهي

মুহাম্মাদ জাসীম আবু বকর : ১০ জুন ২০২০ বুধবার। কাতারের সময় মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে আর পরের কিছু সময়। এই অল্প কিছু সময়ের ব্যাবধানে এমন কিছু হয়ে গেলো, যা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। এমনকি এখনো মানতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমার মানা না মানাতে কি আসে যায়? তকদীরে যা আছে সেটা তো হবেই। আল্লাহ তায়ালা যা ফায়সালা করে রেখেছেন সেটা তো মানতেই হবে।

‘মানুষ তো মরণশীল জানিই। কিন্তু যখন নিজেদের কেউ ইন্তেকাল করেন তখন অবুঝ মন যেনো কোনভাবেই সেটা মেনে নিতে চায়না।’

শেষমেশ চলেই গেলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় বড় মামুজী (রাহিমাহুল্লাহ) জীবনে কোনদিনও এই নামের পরে(রাহিমাহুল্লাহ)বলিনি বা লিখিনি। মামুজীর নামের পাশে যেনো এমনটা মানাচ্ছেই না। কিন্তু এখন সব সময় এটাই বলতে হবে(রাহিমাহুল্লাহ)
কখনো কল্পনাও করিনি যে, এতো অল্পতেই এমন কিছু হয়ে যাবে।

মৃত্যু যে কি জিনিস! সেটা মৃত্যু আমাদেরকে বার বারই স্বরণ করিয়ে দিচ্ছে। এইতো! এক সপ্তাহ হলো আমার নানু (মামুজীর আপন বড় মামি ইন্তেকাল করেছেন) এবং মামুজী নিজেই নানুর ইসালে সাওয়াবের প্রথম খতমের দোয়া করেছিলেন। সেই ব্যাথাই তো কেটে উঠতে পারিনি এখনো। আর আজকেই আবার এমন সংবাদ?

বিকেলে ফরহান কল করে বলতেছে, জাসীম! আব্বাজী শরীরটা খুব খারাপ। চলো আমরা একটা খতম পড়ি। সবাই ভাগ করে এক খতম নিয়েছিও। সেই খতমটাও শুরু হয়নি তখনও।একটু পরই আবার ফারহানের কল।তারপর যে কথা গুলো শুনেছি সেগুলো শুনতে মুটেও প্রস্তুত ছিলামনা।জাসীম! আব্বাজী তো আর নেই।
ইন্নালিল্লাহ ও পড়তে পারছিলাম না। কি বলো তুমি? ভালো করে খবর নাও। কি সব বলো এইগুলো?

কিন্তু এটাই বাস্তব ছিলো। সত্যিই তখন থেকেই মামুজী আমাদের মধ্যে আর নেই। কতক্ষণ হবে আর!? সর্বোচ্চ ঘন্টাখানেক।অথচ এই একটু সময়ে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেলো।চিকিৎসা নেয়ার জন্যে বাসা থেকে বের হওয়া মামুজী সারা জীবনের জন্যে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন।যা কেউই চিন্তা করিনি।

আমার ৯ মামুজী। কেফায়েতুল্লাহ মামুজী রহ.ছিলেন সবার বড়। কেউ যখন জিজ্ঞেস করতেন তোমার মামা কতজন? তখন বলতাম আমার ৯ মামা। এখন বলতে হবে আমার ৯ মামা ছিলেন। একজন ইন্তিকাল করেছেন। এটা ভাবতেই যেনো বুক ফেঁটে কান্না বেরিয়ে আসে। পাঁচ ভায়ের মধ্যে ফরহানই সবার বড়। সে কাতার ধর্ম মন্ত্রনালয়ের ইমাম। তারপর রয়হান। আমি, ফারহান, রায়হান আমরা তিনজনই সমবয়সী। তারপর সালমান আর রিদওয়ান। ফারহান আর রায়হানের পর বাকি সবায়ই পড়া-লেখা করে। আর স্নেহের ছোট সাহবান তো এখনও সবকিছু বুঝেইনা ভালো করে।

নানাজী মুফতিয়ে আজম রহ.এর ইন্তেকালের পর মামুজীই আমাদের বাসার মুরুব্বী ছিলেন। আমরা আবারও মুরুব্বীশূন্য হয়ে গেলাম। এক বছরেরও বেশি হয়ে গেলো মামুজীকে দেখে আসছি।তারপর মোবাইলে কথা হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু ঐ এক বছর আগের দেখাই যে জীবনের শেষ দেখা হবে সেটা তো ভাবিনি।

মৃত্যুর সময় মামুজীর বয়স হয়েছিলো ৫৮ বছর। মামুজী রাহিমাহুল্লাহ মুফতিয়ে আজম নানাজী রহ. প্রতিষ্ঠিত পান্থশালা মদনী মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্স এর মোহতামিম ছিলেন।

উলামায়ে দেওবন্দ আর মাদানী পরিবারের সাথে আমাদের বাসার এক বিশেষ সম্পর্ক।মামুজী রহ. এর সাথে আলাদাভাবে সাইয়্যেদ মাহমুদ আসআদ মাদানী দা:বা: এর অনেক গভীর সম্পর্ক ছিলো।

ইন্তেকালের পর পরই জমিয়তে উলামা হিন্দের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল আওলাদে রাসূল সাইয়্যেদ সালমান মানসূরপুরী দা: বা: এবং উলামা হিন্দের জেনারেল সেক্রেটারি সাইয়্যেদ মাহমুদ আসআদ মাদানী দা:বা: বাসায় ফোন করে তাজিয়া প্রকাশ করেন। মামুজীর বড় ছেলে ফরহানকেও সাইয়্যেদ মাহমুদ মাদানী দা:বা: সরাসরি কাতারে ফোন করে খুঁজ নিয়েছেন।

দূর্রভাগ্য বসত দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারনে অনেক আত্নীয়-স্বজনসহ অনেক মুহিব্বীন জানাযায় অংশ নিতে পারেননি। সেই সাথে প্রাশাসনিক চাপ। কান্দিপাড়ার জামিয়া ইউনুসিয়া থেকে নিয়ে বাসা পর্যন্ত পুলিশের বহর। ব্রাম্মণবাড়ীয়াতে ঢুকার সব মূল কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। ভৈরব. আশুগঞ্জ. বিশ্বরোড সহ সব দিকে পুলিশের কড়া পাহাড়া। যেনো কেউ ঢুকতে না পারে। এমনকি অনেকে খুব কাছে গিয়েও জানাযায় শরীক হতে পারেনি। আর আমরা তো আরো দূর্ভাগা। কোনভাবেই দেশে আসার কোন উপায় খুঁজে পেলামনা।

অবশেষে উপর মহলের চাপের কারনে ফজরের আগেই জামিয়া ইউনুসিয়ার মসজিদে জানাযা সম্পন্ন হয়। জানাযায় ইমামতি করেন শ্রদ্ধেয় মামুজী হযরত মাওলানা হেমায়েতুল্লাহ নূর দা:বা:। জানাযা শেষে দ্রুত কবরস্থানের নিয়ে যাওয়া হয়। দাফনের আগপর্যন্ত পুলিশের কড়া পাহাড়া ছিলো।

মামুজী রহ. কতো সৌভাগ্যবান। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্তের মতো নানুজীর পায়ের নিচে মামুজীর কবর। এভাবেই নিষ্ঠুরের মতো সবাই মামুজীকে কবরে রেখে চলে আসলো। যেই মানুষটা একটু আগেও ছিলেন।

মালিক! আমি গুনাহগারের জন্যে কাউকে এমন কোনো কষ্ট দিওনা যেগুলো সহ্যই করতে পারিনা। ক্ষমা করো মালিক!রহম করো। মামুজীকে জান্নাতের আ’লা মাক্বাম দান করো। সেই সাথে আমাদের সকল মুরুব্বীদেরকে নেক হায়াত দান করো।

– লিখেছেন মুফতী কেফায়েতুল্লাহ রহ.-এর ভাগিনা, কাতার প্রবাসী

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *