পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ২০১৮ সালে সবাইকে পেছনে ফেলে ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ। এর মধ্য দিয়েই রিয়ালের এ সুপারস্টার ১০ বছর পর লিওনেল মেসি ও রোনালদোকে বাইরে রেখে অন্য একজন হিসেবে বর্ষসেরা পুরস্কার জিতল। কারণ বিগত দশ বছর ধরে মেসি-রোনালদোর বাইরে অন্য কেউ বর্ষসেরার পুরস্কার জিততে পারেনি। গত এক দশকে ফিফার বর্ষসেরা অথবা ব্যালন ডি’অর- সব জেতেন দুই তারকার যে কোনো একজন।
২৪ অাগস্ট সোমবার লন্ডনে ‘দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে এ বছরের সেরা ফুটবলার হিসেবে মদ্রিচের নাম ঘোষণা করা হয়। গত মাসের শেষ দিকেই ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও মোহাম্মেদ সালাহকে হারিয়ে উয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন লুকা মদ্রিচ। এরপর ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার বর্ষসেরা খেলোয়াড় হওয়াটা অনেকটা প্রত্যাশিতই ছিল তার। বছরজুড়ে অসাধারণ নৈপুন্যতা প্রদর্শন করে হলেনও তাই। খেলায়াড়ী জীবনের অন্যতম বড় একটি সফলতা অর্জন করলেন রিয়ালের এ দূধর্ষ প্লেয়ার।
এদিকে পেশাদারী ক্লাব ফুটবল ইতিহাসের প্রথম ক্লাব হিসেবে রিয়ালের টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মদ্রিচের। মাদ্রিদের ক্লাবটির হয়ে গত মৌসুমে উয়েফা সুপার কাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপাও জিতেন তিনি। অন্যদিকে ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চ বিশ্বকাপ ফুটবলের এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে তুলতেও বড় অবদান রেখেছিলেন মদ্রিচ। মাদ্রিদ থেকে যাওয়া ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ খেলোয়ার টুর্নামেন্ট জুড়ে ধারাবাহিকভাবেই দারুণ খেলেছেন, দুটি গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করান ১টি। এছাড়াও মাঠে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তার প্রভাব ছিল অসাধারণ। ফলে জিতেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বল’।
সব স্বপ্ন সত্যি হতে পারে: মদ্রিচ
ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার জয়ের পর উচ্ছসিত লুকা মদ্রিচ বলেন, “এই অ্যাওয়ার্ড এ কথাই প্রমাণ করছে যে, আমরা সবাই কঠিন পরিশ্রম আর নিবেদন দিয়ে সেরা হতে পারি। সব স্বপ্ন সত্যিও হতে পারে।”
তিনি বলেন, “এখানে এই মঞ্চে এই ট্রফির সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক সম্মানের ও দারুণ অনুভূতির। যা অবর্ণনীয় । প্রথমেই সবার আগে আমি মোহাম্মদ ও ক্রিস্তিয়ানোকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতে তোমাদের এই ট্রফির জন্য লড়াই করার আরও সুযোগ থাকবে।”
জাতীয় দলের কোচ, অধিনায়ক, বিশ্বজুড়ে ফিফা নির্বাচিত সাংবাদিক ও ফিফা ডটকমে নিবন্ধন করা ফুটবলপ্রেমীদের ভোটেই এই বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়।
ফিফার বর্ষসেরা ও ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর ব্যালন ডি’অর পুরস্কার শুরুতে আলাদাভাবে দেয়া হতো। পরে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছর দুটি পুরস্কার একীভূত হয়। একসঙ্গেই দেয়া হয়েছে পুরস্কার দুটি। তবে ২০১৬ সাল থেকে আবার আলাদাভাবে দেয়া হচ্ছে পুরস্কার দুটি।
বর্ষসেরা গোলরক্ষক
ফিফা বর্ষসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেয়েছেন বেলজিয়ামের থিবো কোর্তোয়া। মূলত রাশিয়া বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলার পুরস্কারই পেলেন এ বেলজিয়ান। গত মাসে চেলসি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছেন ২৬ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়। চেলসিতে উজ্জ্বল এ খেলোয়ার রিয়ালে অারো ভালো করবে বলেই তার দৃঢ় বিশ্বাস।
বর্ষসেরা কোচ দিদিয়ের দেশম
পুরুষ দলের সেরা কোচের পুরস্কারটা পেয়েছেন দিদিয়ের দেশম। ফ্রান্সকে ২০ বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপ জেতানোর পুরস্কার পেয়েছেন অধিনায়ক হিসেবেও বিশ্বকাপ জেতা এই ফরাসি লিজেন্ড। খেলায়ারী জীবনের পর কোচ হিসেবে ফুটবল বিশ্বে নামকরা এই ফরাসি পেছনে ফেলেছেন রিয়াল মাদ্রিদকে টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানো জিনেদিন জিদান ও ক্রোয়েশিয়াকে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে তোলা জ্লাতকো দালিচকে। এ দুই কোচকে পেছনে ফেলেই পুরস্কারটি জেতেন দেশম।
বর্ষসেরা গোলদাতা মোহাম্মদ সালাহ
বর্ষসেরা গোল, পুসকাস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মিসরের বরপুত্র মোহাম্মদ সালাহ। গত ডিসেম্বরে অ্যানফিল্ডে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এভারটনের সঙ্গে ১-১ ড্র হওয়া ম্যাচে দারুণ এক গোলের জন্য ক্যারিয়ারে প্রথমবার পুরস্কারটি জিতলেন সালাহ। ডি-বক্সের ঠিক ডান দিকে বল পেয়ে দুজনকে কাটিয়ে বাঁ পায়ের উঁচু শটে দূরের পোস্ট দিয়ে গোলটি করেছিলেন লিভারপুলের এ তারকা ফুটবলার।
ফিফার বর্ষসেরা একাদশ
ডেভিড ডি গিয়া (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), দানি আলভেজ (পিএসজি), রাফায়েল ভারান (রিয়াল মাদ্রিদ), সার্জিও রামোস (রিয়াল মাদ্রিদ), মার্সেলো (রিয়াল মাদ্রিদ), লুকা মদরিচ (রিয়াল মাদ্রিদ), এনগোলো কান্তে (চেলসি), এডেন হ্যাজার্ড (চেলসি), কিলিয়ান এমবাপ্পে (পিএসজি), লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা), ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (রিয়াল মাদ্রিদ, এখন জুভেন্টাসে)।
