পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ফেরদাউস (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। ফেরদাউস একই এলাকার বাসিন্দা।
বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত কিশোরের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সীমান্ত এলাকায় চড়াতে নেওয়া নিজেদের গরু আনতে গেলে বিএসএফ গুলি চালায়।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুছ ছালেক এই কিশোরের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “ফেরদাউসের মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
শরীফপুরের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান জানান, গত ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় ফেরদাউসসহ একটি দল লালারচক সীমান্ত দিয়ে ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় বিএসএফের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয় ফেরদাউস। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-৪৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিজানুর রহমান শিকদারের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা নিয়ে প্রায়ই আলোচনা তৈরি হলেও এর কোনো সুষ্ঠু সমাধান আসেনি। ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে সীমান্তে মোট ১৬৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এই সময়ে আহত হয়েছেন ১৪০ জন। অপহৃত হয়েছেন ১১৯ জন।
সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বাবার ব্যক্ত করেছে ভারত। দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই রাখছে না তারা।
সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়ার পেছনে বাংলাদেশের জোরালো ভূমিকা না নেওয়াকে দায়ী করেছেন ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সচিব কিরীটি রায়।
তিনি সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, “সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশ কোনো জোরালো প্রতিবাদ করে না। তারা জো হজুর, জ্বি হুজুর করে। এভাবে করলে তো পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না। আর ভারত সরকার তো হিন্দুত্ববাদী মনোভাব থেকে মুসলিমদের টাইট দেওয়ার কাজে ব্যস্ত।”
বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান মনে করেন, “বাংলাদেশকে চাপের মুখে রাখতে ভারত সীমান্ত হত্যাকে একটা কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে। বিএসএফ অব্যাহতভাবে সীমান্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা ভারতীয় নীতিরই প্রতিফলন। তারা মুখে সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার যত কথাই বলুক না কেন বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই।”
ড. মিজানুর রহমানের ভাষ্য, “সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিএসএফ যে কারণ দেখায় তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ চোরাকারবারি বা অপরাধী হলেও তাকে বিনাবিচারে হত্যা করা আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। কোনো সিভিলিয়ানকে এভাবে হত্যা করা যায় না। বিএসএফ আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন করে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে। এর বিরুদ্ধে ভারত সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন