যাত্রীবেশে বাসে উঠে আগুন চট্টগ্রামে

যাত্রীবেশে বাসে উঠে আগুন চট্টগ্রামে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: যাত্রী সেজে চট্টগ্রামে একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলো। তবে কারা আগুন দিয়েছে তা শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ৬টা ৫ মিনিটে ইপিজেড থানার সলগোলা ক্রসিং এলাকায় বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে বাসটি পুড়ে গেলেও কেউ হতাহত হয়নি।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ৩০ মিনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ বলছে, যাত্রী সেজে বাসটিতে উঠে দুই যুবক আগুন দিয়ে নেমে গেছে।

ইপিজেড ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, সকাল ৬টার দিকে বাসে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে। প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টায় তারা আগুন নেভাতে সক্ষম হন।

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, “সকালে সলগোলা ক্রসিং এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বাসটি যাত্রী নেওয়ার জন্য সলগোলা ক্রসিংয়ে দাঁড়ায়। এমন সময় যাত্রীবেশে দুই লোক উঠে আগুন দিয়ে নেমে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ইপিজেড এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।”

এর আগে সোমবার রাত ১০টার দিকে নগরীর জিইসি মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মিনিবাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাসটি বিয়ের অনুষ্ঠানে পটিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে এসেছিল। কে বা কারা বাসটিতে আগুন দিয়ে সটকে পড়ে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর তিন দিনের সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ।

অবরোধের প্রথম দিন সকালে দেশের কোথাও তেমনভাবে সক্রিয় দেখা যায়নি বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুটি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অবরোধ আতঙ্কে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো গণপরিবহন ছেড়ে যায়নি। মানুষের চলাচল এবং ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও কম দেখা গেছে।

অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। ফকিরাপুল মোড় এবং নাইটিঙ্গেল মোড়েও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সকাল থেকে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে কার্যালয়ের সামনে দেখা যায়নি।

রাত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে বিজিবি টহল দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

অবরোধ শুরুর আগের রাতে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় কেউ কেউ হতাহত হয়নি।

গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের পর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলো। এছাড়া যুগপৎ আন্দোলনে না থাকা জামায়াতে ইসলামীও একই সময় এই কর্মসূচি পালন করছে।

সংঘর্ষে মহাসমাবেশ পণ্ড, হরতাল

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপিসহ মাঠের বিরোধী দলগুলো। সেই ধারাবাহিকতায় কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। এরপর থেকেই দেশের রাজনীতিতে ২৮ অক্টোবরকে ঘিরে উত্তাপ ছাড়াতে শুরু করে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ছোট-বড় দল ও জোটগুলোও এদিন সমাবেশের ঘোষণা করে। এছাড়া বিএনপির সাবেক জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীও একই দিনে ঢাকার শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি চায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে।

আওয়ামী লীগ যেকোনো “সহিংসতা” রোধে ২৮ অক্টোবর শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ঘোষণা দেয়। ২৮ অক্টোবরকে বেশ আমলে নেন সরকারি দলের নেতারা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, “শাপলা চত্বরের মতো পরিণতি হবে বিএনপির।”

২৮ অক্টোবর সকাল থেকে নয়াপল্টনে সমাবেশ শুরু হয় বিএনপির। তাদের সমাবেশের পরিধি মূলমঞ্চ থেকে বেশ বিস্তৃত হয়ে পড়ে। শান্তিনগর ও কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করছিলেন বিপুলসংখ্যক বিএনপির নেতাকর্মী। সেসময় সড়কে পিকআপ ভ্যানে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও মোড়ে অবস্থান করা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে কিছুক্ষণ। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংঘর্ষের মধ্যেই কাকরাইল মোড়ে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পরে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে রাখা গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সেই সংঘর্ষ বিজয়নগরেও ছড়িয়ে পড়ে। বিচারপতির বাসভবনেও হামলার ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে শুরু করে। কাঁদানে গ্যাসের কারণে সমাবেশস্থলে টিকে থাকা সম্ভব না হওয়ায় বিএনপি নেতারা মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে চলে যেতে বাধ্য হন। এতে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। পণ্ড হওয়ার আগে সারাদেশে রবিবার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।

গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ-আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৪১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ১৭ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এছাড়া অসংখ্য বিরোধী দলের নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবল, এক যুবদল নেতা ও একজন সাংবাদিক নেতার মৃত্যু হয়েছে।

পরদিন রবিবারের হরতালকে কেন্দ্র করে আগের দির রাত থেকে রাজধানী ও ঢাকার আশপাশের কয়েক জেলায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। দূরপাল্লার পরিবহন তেমন একটা দেখা যায়নি। হরতালকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলায় বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের আটক ও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে হরতালে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠে তেমন একটা পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। অপরদিকে ওই হরতাল প্রতিরোধে সারাদেশে মিছিল ও শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। এতে কোথাও কোথাও দুই দলের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এর মধ্যে লালমনিরহাটে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *