যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যক্রম নিয়ে ‍দুশ্চিন্তায় ভুগছেন মুসলিম অভিভাবকরা। কারণ নতুন পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী অনেক বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এতে মানুষের লৈঙ্গিক পরিচয়ের ইচ্ছামতো রূপান্তরের স্বীকৃতির পাশাপাশি এরই ভিত্তিতে তাদের সঙ্গে আচার-ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।

ফলে মানুষের স্বাভাবিক বায়োলজিক্যাল বিন্যাস অনেকটা অগ্রাহ্য হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়; অনেক স্কুলে রূপান্তরকামী শিক্ষার্থীদের তাদের সমলিঙ্গের শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুম ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের একেক রাজ্যের শিক্ষানীতি একেক ধরনের হয়ে থাকে। অনেক সময় একই রাজ্যের একেক প্রদেশে একেক রকম শিক্ষানীতি অনুসরণ করা হয়।

অনেক অঞ্চলে মুসলিম পরিবার তাদের সন্তানদের যৌনশিক্ষার ক্লাস নিয়ে কিছু বলতে পারেন না। এমনকি মেরিল্যান্ড রাজ্যের মন্টগোমারি কাউন্টির অভিভাবকদের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। অবশ্য মার্কিন আইন অনুসারে শিক্ষা বিভাগ নিজস্ব নীতি নির্ধারণ করার অধিকার রাখে। তাই এসব নীতি গভর্নরদের তৈরি নীতিমালা ব্যতিক্রম হতে পারে।

উদাহরণত ভার্জিনিয়া রাজ্যের গভর্নর গ্লেন ইয়ংকিন স্কুলে পাঠানো নতুন নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের বায়োলজিক্যাল পরিচয় ‘নারী’ ও ‘পুরুষ’ অনুসারণ করে আচরণ করতে বলা হয়। এমনকি অফিসিয়াল রেকর্ড অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুম ব্যবহার করতে বলা হয়। কিন্তু ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টির স্কুলগুলো এ নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে জানায়, তারা লিঙ্গ পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের নিজস্ব নীতিমালা অনুসরণ করবে। তা ছাড়া শিক্ষার্থীরা তাদের বায়োলজিক্যাল পরিচয় অনুসারে নয়; বরং পরিবর্তিত লিঙ্গ পরিচয় অনুসারে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে।

ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টির অন্যতম প্রাচীন মসজিদ দার আল-হিজরাহ ইসলামিক সেন্টার।

সেন্টারটির উদ্যোগে কাউন্টি শিক্ষাবোর্ডের নতুন প্রার্থীদের সঙ্গে একটি বৈঠকের আয়োজন করে। তাতে স্কুল বিষয়ক দাবিগুলো মুসলিম অভিভাবকরা তুলে ধরেন। সেন্টারের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা সাইফ আবদুর রহমান জানিয়েছেন, আমরা ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টিতে স্কুল পরিচালনার প্রার্থীদের নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করি। ভার্জিনিয়ার অন্যতম বৃহত্তম কাউন্টি ফেয়ারফ্যাক্সে এক মিলিয়নের বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে। এই কাউন্টির বাজেট ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যার প্রায় অর্ধেক স্কুলগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। স্কুল প্রশাসনের প্রার্থীরা বাজেট ও নিয়ম-নীতির জন্য দায়ী থাকবেন।’

আবদুর রহমান আরো জানিয়েছেন, ‘সেমিনারে স্কুল শিক্ষার্থীদের যৌন শিক্ষাবিষয়ক আলোচনা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। বর্তমানে অনেক রাজ্য শিশুদের সমকামিতা শিক্ষা দিচ্ছে। অথচ তা ইসলামী শরিয়তের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। বিষয়টির ভয়াবহতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে অভিভাবকরা যেন শিক্ষার্থীদের এসব বিষয় পড়া থেকে ফিরিয়ে নিতে পারে সেই অনুমোদন চাওয়া হয়।’

ভার্জিনিয়ার মুসলিম অভিবাসী ফারহান সিদ্দিকি বলেছেন, ‘ইসলামিক সেন্টারে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আমরা দুটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছি। প্রথমত স্কুলে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমের অভিন্নতা এবং দ্বিতীয়ত যৌনশিক্ষা। মুসলিম হিসেবে আমরা এসব বিষয় নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। আসন্ন শিক্ষাবোর্ড নির্বাচনে তারা নির্বাচিত হলে কী করতে পারবেন, আমরা তা জানার চেষ্টা করেছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে সমকামী বিষয়ক পাঠ্যক্রম এবং যৌন রূপান্তরের স্বীকৃতিতে শুধুমাত্র মুসলিমরা উদ্বিগ্ন নন। বরং ইহুদি ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীও বিষয়টি নিয় উদ্বিগ্ন। এমনকি সম্প্রতি মেরিল্যান্ডের মন্টগোমারি কাউন্টিতে অনুষ্ঠিত পদযাত্রায় তারা অংশ নেন। যেখানে যৌনশিক্ষার ক্লাসে তাদের সন্তানদের উপস্থিত না হওয়ার অধিকার দাবি করা হয়।

সূত্র : আল-জাজিরা মুবাশির

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *