পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডট কম : মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর জানিয়েছে, তারা উপসাগরীয় অঞ্চলে আরও একটি যুদ্ধজাহাজ এবং পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র আন্ত-মহাদেশীয়, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও বিমান হামলা রুখতে সক্ষম। মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস আরলিংটনের মধ্যপ্রাচ্যের দিকে পূর্বনির্ধারিত সময়সূচীর আগেই জাহাজটি সেখানে পাঠানো হচ্ছে ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পটভূমিতে। এই জাহাজে উভচর সামরিক যান এবং যুদ্ধবিমান পরিবহন করা যায়.
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর বলছে, তারা ইরানের সাথে সংঘাত চায়না, কিন্তু মার্কিন সৈন্যদের বিরুদ্ধে হুমকি মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ঠিক কী ধরণের হুমকির মুখোমুখি মার্কিন সৈন্যরা হয়েছে- তা খোলাসা করে বলা হচ্ছেনা।
হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়, ইরান প্রতিবেশী ইরাকে অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে, যা সেখানে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে। ইরাকে প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছে। মার্কিন সূত্রের দাবি, ইরান যে ইরাকের উদ্দেশে ব্যালিস্টিক মিসাইল পাঠাচ্ছে, তার প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া সেখানে তৎপর। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এই অস্ত্র মার্কিন সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জার্মানিতে পূর্বনির্ধারিত সরকারি সফল বাতিল করে অত্যন্ত গোপনীয়তায় বাগদাদ সফর করেন। ইরাকে মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে পম্পেও ইরাকি নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইরান একটি বড় হুমকি হয়ে উঠেছে মর্মে পম্পেও ইরাকি নেতাদের বিস্তারিত জানিয়েছেন। বাগদাদে অনির্ধারিত সফর শেষে পম্পেও তাঁর সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের জানান, ইরাকি নেতাদের তিনি বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, ইরানের ব্যাপারে তাঁদের হুঁশিয়ার হওয়া কেন প্রয়োজন।
পম্পেও ইরানের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে মিসর ও জর্ডানের সঙ্গে ইরাকের সহযোগিতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান।
ডোনাল্ট ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে একতরফা-ভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেও, চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স এখনও ইরানের সাথে করা চুক্তি বজায় রেখেছে।
প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষক জনাথন মার্কাস বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন চান ইরানের সাথে করা এই পরমাণু চুক্তি পুরোপুরি ভেস্তে যাক।
ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তার ফলে ইরানের অর্থনীতি দিনে দিনে সঙ্কটে নিমজ্জিত হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য যেন ইরান তাদের তেল অন্যদেশের কাছে বিক্রি করতে না পারে। এছাড়া গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সবচেয়ে সুসজ্জিত বাহিনী রেভলিউশনারী গার্ডকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
তবে, ডেইলি বিস্ট নামক ওয়েব পত্রিকা মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ইরানের তৎপরতার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত ‘বাড়াবাড়ি’। ওয়েব পত্রিকাটি অবশ্য বলেছে, মার্কিন সৈন্যদের ওপর হামলা করার ক্ষমতা ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনাদের রয়েছে।
তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এই সমর প্রস্তুতিকে মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছে না ইরান। তারা বলছে আমেরিকা ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ইরান যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের পাল্টা হিসাবে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে। বিশ্বে প্রতি বছর যত জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়, তার এক পঞ্চমাংশ সরবরাহ যায় এই হরমুজ প্রণালী দিয়ে।
ইরানের ক্ষমতাধর একজন ধর্মীয় নেতা ইউসেফ তাবাতাবাই-নেজাদকে উদ্ধৃত করে আধা-সরকারি ইরানি সংবাদ সংস্থা ইসনা বলছে, “একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ জাহাজের বহর ধ্বংস হয়ে যাবে।”
ইরানের কোদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানির কথা উদ্ধৃত করে ওয়েব পত্রিকাটি বলেছে, শিগগিরই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধতে চলেছে।