যে মৃত্যুতে ঈর্ষা জাগে

যে মৃত্যুতে ঈর্ষা জাগে

  • মুহাম্মাদ আইয়্যুব

জীবন মানেই তো মৃত্যু। কে বাঁচবে অলংঘনীয় এই নিয়ম থেকে? তবে সুন্দর করে রাঙানো যায় শেষ বিদায়ের শেষ মুহূর্তটাকে। যারা রাঙায় তারাই প্রকৃত ভাগ্যবান ও সফল।  আজ অখ্যাত এক সাহাবীর তেমনই এক ইমান রাঙানো মৃত্যুর কথা লিখছি পাঠক সমীপে। যার  দাফন কাফনের দৃশ্য দেখে ঈর্ষাণ্বীত কণ্ঠে ইবন মাসঊদ রা. এর মুখ দিয়ে বের হইয়েছিলো, ‘আহ! তাঁর জায়গায় যদি আজ আমার মৃত্যু হত’।

আরবের মুযাইনা গোত্রের এক অনাথ এতীম বালক। চাচার তত্বাবধানে লালিত পালিত। যখন  বোধের বয়সে পৌঁছলেন তখন চারিদিকে শুধু ইসলাম ধর্মের কথা শুনছিলেন। তখন থেকে এইসব মূর্তি প্রতিমার প্রতি তার প্রচণ্ড বিদ্বেষ জন্মে আর ইসলামের প্রতি জাগে সুতীব্র আকর্ষণ। কিন্তু ছিল কট্টর কাফের চাচার ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে পারছিলেন না।

মক্কা বিজয়ের পর যখন লোকজন দলেদলে ইসলাম গ্রহণ করছিল তখন তিনি তার চাচাকে সাহস করে বলে ফেললেন- চাচা তুমিও মুসলমান হয়ে যাও, আমিও ইসলাম গ্রহণে অস্থির হয়ে আছি।

তাঁর ভাষায় ‘একথা শুনতেই চাচা আমার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। বিবস্ত্র করে আমাকে বাড়ি  থেকে বের করে দিল। আমি তখন মায়ের কাছ থেকে একখানা কম্বল নিয়ে দু’টুকরো করলাম। একটা দিয়ে লুঙ্গি আর অপরটা দিয়ে চাদর বানিয়ে হিজরত করে মদিনায় চলে এলাম। রাতভর মসজিদে নববীতে অবস্থান করলাম। ফজরের সময় নূরে নবুওয়াতের নূরানী বিভায় মুড়ানো অপরূপ সৌন্দর্য্যে ঘেরা নবীজী সা. এর পবিত্র মুখখানা দেখে কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম।

নবীজী সা. নাম জিজ্ঞেস করলে বললাম, আব্দুল উযযা। হুজুর সা. নাম পাল্টে বললেন, আজ  থেকে তোমার নাম আব্দুল্লাহ। পরনে দুই টুকরো কম্বল দেখে হুজুর সা. ডেকে উঠলেন, ‘ইয়া যাল বিজাদাইন” ( দুই কম্বলওয়ালা) !।

নবীজী সা. এর পবিত্র মুখের এই ডাকেই তিনি প্রসিদ্ধি পেয়ে যান। তিনি ছিলেন আসহাবে  সুফফার অন্যতম সদস্য। সুললিত কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। হুজুর সা. যখন তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন তিনি ও মুজাহিদদের কাতারে শামিল হয়ে যান। খুব অনুনয় বিনয়ের সাথে হুজুর সা. এর নিকট আবেদন করেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার জন্য  দোয়া করুন যেন আল্লাহ পাক আমাকে শহিদী মৃত্যু ও শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন।

হুজুর সা. বললেন, তুমি কোন একটি গাছের ছাল নিয়ে এসো। তিনি বাবলা গাছের কিছু ছাল নিয়ে হুজুর সাঃ এর কাছে আসলে তিনি নিজ হাতে তার বাহুতে সেই ছাল বেধে দোয়া করলেন’ হে আল্লাহ! আমি তার রক্ত কাফেরদের জন্য হারাম করে দিলাম’ তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার আকাঙ্খা তো শাহাদাত!

তুমি যেহেতু জিহাদের জন্য বেরিয়েছ সুতরাং যদি জ্বরেও মৃত্যু হয় তথাপি ও তুমি শহীদ

বললেন, তুমি যেহেতু জিহাদের জন্য বেরিয়েছ সুতরাং যদি জ্বরেও মৃত্যু হয় তথাপি ও তুমি শহীদ।

আল্লাহর কী কুদরত! যখন হযরত যুলবিজাদাইন তাবুক পৌঁছলেন তখন তিনি জ্বরে আক্রান্ত হলেন  এবং এই জ্বরেই তিনি ইন্তেকাল করেন।হযরত বেলাল ইবন হারিছ মুযনী (রাঃ) বর্ণনা করেন, তাঁর দাফনের দৃশ্যটা ছিল খুবই চমকপ্রদ।  মু’আজ্জিন হযরত বেলাল সা. হাতে প্রদীপ নিয়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। হুজুর সা. স্বয়ং নিজেই কবরে নেমে পড়েছেন। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. ও হযরত ওমর রা. কে বললেন, তোমাদের মুসলিম ভাইয়ের লাশ উঠিয়ে আনো। আনার পর পবিত্র হাতে তাঁর লাশ কবরে শোয়ালেন, কাঁচা ইটে কবরে গেঁথে দিলেন।

এবার আসমানে হাত উঠিয়ে দোয়া করলেন ওগো আল্লাহ!  আমি যুলবিজাদাইনের উপর সন্তুষ্ট  সুতরাং আপনিও তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।  হযরত যুলবিজাদাইন রাঃ এর দাফনের দৃশ্য দেখে অনিচ্ছায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রা. এর মুখ দিয়ে বের হল, ‘আহ! যুলবিজাদাইনের জায়গায় যদি আজ আমার মৃত্যু হত’।

লেখক, শিক্ষক ও মাদরাসা পরিচালক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *