রমজানে স্বস্তি মিলবে নিত্যপণ্যে?

রমজানে স্বস্তি মিলবে নিত্যপণ্যে?

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : রমজান মাস এলেই বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে। সেখানে এবার রোজার আগেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তি। রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের আমদানিও গত বছরের তুলনায় কমেছে। এছাড়া বাজার সিন্ডিকেটের মতো সমস্যা আছেই। সবমিলিয়ে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ভোক্তারা।

অন্যদিকে রমজান মাসের ছয়টি আমদানিনির্ভর ছয়টি ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা নিয়েও “সংকটের” কথা জানা গেছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পণ্য আমদানির জন্য পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। তাই সংকট তৈরি হবে না। একই আশ্বাস দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীও ভোক্তাদের একসঙ্গে বেশি পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম

মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে রোজা শুরু হচ্ছে। প্রায় দেড় মাস বাকি থাকলেও গত দুই সপ্তাহে মুরগি ও ডিমের দাম ২৫% বেড়েছে। প্রতিদিনই তা ক্রমাগত বাড়ছে। দুই সপ্তাহ আগে মুরগির ডিমের দাম ছিল প্রতিটি ৯টাকা। এখন তা ১২ টাকা।এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৬০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২১০ টাকা। একইভাবে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫%।

রাজধানীর কাঁঠালবাগান বাজারের মাছ বিক্রেতা রতন মিয়া জানান, মাছের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। রোজায় আরও বাড়বে। কারণ তখন চাহিদা আরও বেড়ে যাবে। কম দামের পাঙ্গাস ও তেলাপিয়াও নাগালের বাইরে। সরবরাহ কম তাই মাছের দাম বাড়ছে।

একই বাজারের মুরগি বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, “ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিদিনই বাড়ছে, গত একদিনে বেড়েছে কেজিতে ১০টাকা। সোনালী মুরগির দাম এক সপ্তাহে ২৮০ টাকা কেজি থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা হয়েছে।”

কমেছে আমদানি

রোজায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, খেজুর ও পেঁয়াজের। রোজার আগে তাই এই ছয়টি ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ে। তবে চলতি অর্থবছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এসব পণ্য আমদানি কমেছে ২৫ থেকে ৫০% এর বেশি।

ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলায় সমস্যা হওয়ায় কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে। পর্যাপ্ত আমদানি না হওয়ায় বাজারে সেগুলো দাম বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছর রমজানে ছোলার দাম ছিল প্রতি কেজি ৭০ টাকা। এখন রোজা শুরুর আগেই কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন। এক বছর আগে একই সময়ে সয়াবিন তেল আমদানির পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২৩ হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন।

এলসি খোলার পর বাইরে থেকে পণ্য আমদানি করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। গত তিন মাসে ছোলার আমদানি কমেছে ৫০%। তবে চিনির আমদানি স্বাভাবিক আছে। তারপরও দাম বাড়ছেই।

আমদানি কমেছে খেজুরের। গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয় ২২ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস এবং পরবর্তী রোজার এক মাসের চাহিদা অনুযায়ী ওই ছয়টি পণ্য আমদানিতে ১৫৩ কোটি মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। আর শুধু রোজার এক মাসের চাহিদা পূরণে এসব পণ্য আমদানিতে প্রয়োজন ৫৬ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি আরোপে এবার ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারেননি।

বিশ্ববাজারে দাম কমার সুফল মিলবে

টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার বলেন, “পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে৷ রোজার পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা আগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলসি খুলতে পারছি। তবে নভেম্বর জানুয়ারিতে এই সুবিধা ছিল না। ফলে রমজানে গতবারের মত আমদানি করা পণ্যের সরবরাহ থাকবে না।”

তিনি জানান, বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলসহ আরও কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে। তবে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের বাজারে দাম কেমন হবে তা নির্ভর করছে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। চাহিদার তুলনায় পণ্য কম হলে দাম বাড়তি হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক যা বলছে

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রমজানে খেজুর, সয়াবিন তেল, চিনিসহ যেসব নিত্যপণ্য ভোক্তাদের বেশি প্রয়োজন হয়, সেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছেন, “যদি পণ্য সরবরাহ ও সাপ্লাই চেইন নিবিড়ভাবে তদারকি নিশ্চিত করা যায়, পণ্যগুলো যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে সহজভাবে সরবরাহ করা যায়, তাহলে রোজার মধ্যে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না।”

তিনি আরও বলেছেন, “বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আমরা বাজার মনিটরিং করছি। যখন যে জায়গায় যে ধরনের নীতি সহায়তা দরকার হচ্ছে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিচ্ছে। এলসির ক্ষেত্রে আরও কোনো সহযোগিতা দরকার হলে তা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।”

সিন্ডিকেট বন্ধের আহ্বান

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক যে তথ্য দিচ্ছে তাতে রমজানে আমদানি করা পণ্যের সংকট হওয়ার কথা নয়। তবে আমদানি পণ্যের সিন্ডিকেট আছে। কয়েকজন আমদানিকারক বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই তাদের এই সিন্ডিকেট বন্ধ করতে পারলে সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই। যখন ডলার সংকট বা এলসি খোলায় সংকট ছিল না তখনো তো তারা সংকট তৈরি করেছে। তাই এই সিন্ডিকেটকেই নজরে রাখতে হবে।”

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী রমজান মাসের জন্য সব পণ্য এক সঙ্গে না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “রমজানের প্রথম সপ্তাহে ক্রেতারা যেভাবে বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েন, সেটা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। দোকানে যখন ১০০ কেজি মাল থাকে, তখন যদি ১০ জন ক্রেতার প্রত্যেকে একসঙ্গে ১০০ কেজি করে কিনতে চায় তখন মনে হয় সংকট। এটি আর্টিফিশিয়াল সংকট”

সূত্র : ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *