- আব্দুস সালাম ইবন হাশিম
রমযানের আগমনে সাহাবায়ে কেরাম রা. এর মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেতো। ঘরে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অতিথি এলে যেমন সাজ সাজ রব পড়ে যায়, তাকে বরণ করে নিতে যেমন দিনরাত চলে নানা আয়োজন, রমযান আসার আগ মুহুর্তেও সাহাবায়ে কেরাম রা. এর মাঝে সেই আবেগ ও আনন্দ আয়োজনের রব পড়ে যেতো।
সেই রজব মাস থেকেই অধীর অপেক্ষায় থাকতেন সবাই কখন আসবে পরম কাঙ্খিত মহিমান্বিত এই অতিথি। রাসূল সা. বারবার মনে করিয়ে দিতেন, শোনো, রমযান চলে আসছে কিন্তু, বড়ই মোবারক মাস এটি। এই মাসে আল্লাহ তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করেছেন, বেহেশতের দ্বার এ মাসে খুলে দেওয়া হয়, দোযখের দরজা রুদ্ধ করা হয়। শয়তানকে শেকল পড়ানো হয়। এই মাসে আছে এক রজনী, সে রাতে ইবাদাত হাজার মাস ইবাদাতের চাইতে উত্তম। যে তা থেকে বঞ্চিত হবে চির অভাগা।
রমযানের চাঁদ দেখতে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে বিপুল আগ্রহ কাজ করতো। সন্ধ্যা থেকে গভীর সন্ধ্যা থেকে পর্যন্ত পশ্চিম দিগন্তে চাঁদ খুজে তারা বাড়ি ফিরতেন। চাঁদের দেখা পেলে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পাঠ করতেন– হে আল্লাহ, একে আমাদের উপর শান্তি, নিরাপত্তা, সুখ সমৃদ্ধিময় করে উদিত করুন।
রমযান শুরু হওয়ার আগেই তারা আগের বছরের কাযা রোযা থাকলে তা আদায় করে নির্ভার হয়ে যেতেন। যাতে নির্বিঘ্ন চিত্তে রমযানের রোযা আদায় করতে পারেন।
বছরের ছয় মাস তাঁরা আল্লাহর কাছে দুআ করতেন যেনো তিনি তাঁদেরকে রমযানে পৌঁছে দেন, বাকি ছয় মাস দুআ করতেন যেনো রমযানের ইবাদাত বন্দেগী তিনি কবুল করে নেন। মোটকথা, বার মাসই তাঁদের হৃদয় জুড়ে বিরাজ করতো মাহে রমযান।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাস থেকেই প্রস্তুতিমূলক রোযা রাখা শুরু করতেন। সাহাবায়ে কেরাম রা. ও সেই সুন্নত পালন করতেন।
এছাড়াও, তওবা ইস্তেগফার, নফল নামাজ, কিয়ামুল্লাইল ও অন্যান্য নেক আমলের খুব পাবন্দ করতেন তাঁরা। কুরআন তেলাওয়াতেও খুব ধ্যান দিতেন। যাতে রমযানে অভ্যস্ত চিত্তে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন।
সাহাবায়ে কেরাম রা. এর মতো আমরাও যেনো রমযানকে বরণ করে নেওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে নিতে পারি।
রমজান মাসকে কীভাবে স্বাগত জানাতে হয় এবং মাহে রমযানের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় সাহাবায়ে কেরামের এই আমল ও ইবাদতগুলো আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।
লেখক, পরিচালক ইমাম শাইবানী ফিকহ একাডেমী