রাজধানীতে উলামা সম্মেলন বৃহস্পতিবার

রাজধানীতে উলামা সম্মেলন বৃহস্পতিবার

মাসউদুল কাদির ● মক্কার পবিত্র মসজিদে হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববির দুই ইমাম ও খতিবের উপস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার শুরু হবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও আলেম ওলামা মহাসম্মেলন। ইতোমধ্যেই সৌদি এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে বুধবার ভোরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববির সিনিয়র ইমাম শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল খুজাইম-এর নেতৃত্বে আসা  সৌদী আরবের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, মসজিদের নববির সিনিয়র ইমাম শায়খ ড. আবদুল মহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিম, সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ২ জন কর্মকর্তা, সৌদি আরবের উচ্চ পর্যায়ের আলেম ও সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ। তাঁরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ওলামা সম্মেলনে যোগ দিতেই রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে তিন দিনের সফরে এসেছেন।

আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ওলামা সমাবেশে তারা যোগ দেবেন। বেলা ৩টায় শুরু হবে এ সম্মেলন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন। সভাপতিত্ব করবেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মুতিউর রহমান। বুধবার মক্কা ও মদিনার দুই ইমামসহ সৌদির আরবের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম  সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

তিনি জানান, সাক্ষাতে সৌদি প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মক্কা-মদিনার প্রধান দুই ইমামের বাংলাদেশ সফরে দেশবাসী আনন্দিত বলে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এসেছেন আমরা আনন্দিত। পবিত্র মক্কা ও মদীনা আমাদের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে আছে।’ উপজেলাভিত্তিক মসজিদ নির্মাণ, আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামের প্রসারে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলামের প্রসারে আমরা কাজ করছি। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। এর ব্যাপক প্রচার ও প্রসার প্রয়োজন।’

ইসলামের প্রচার ও প্রসারের শেখ হাসিনা সরকারের নানামুখী উদ্যোগের প্রশংসা করেন প্রতিনিধি দলের নেতা শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল খুজাইম। তিনি বলেন, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব এক সঙ্গে কাজ করে যাবে।

ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনারও প্রশংসা করেন তিনি। আল খুজাইম বলেন, ‘আপনি মুসলমানদের ও দেশের কল্যাণে অনেক কাজ করছেন।’

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার সুসর্ম্পকের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও ভ্রাতৃত্বের। এ সময় বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক গভীরতর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করেন সৌদি প্রতিনিধি দলের ওই নেতা। ইসলামকে শান্তির ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিছু বিপথগামী সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে ইসলামের বদনাম করছে।’

এ প্রসঙ্গে মক্কার এই সিনিয়র ইমাম বলেন, সৌদি আরবও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আলোচনায় ইসলামের প্রচারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর তার সরকার এই ফাউন্ডেশনকে উন্নত করছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রুহের মাগফেরাত কামনা করে সৌদি প্রতিনিধি দলের নেতা বলেন, ‘মহান আল্লাহ বঙ্গবন্ধুকে যেন বেহেশত নসীব করেন।’ বাংলাদেশের আতিথেয়তায় তারা মুগ্ধ হয়েছেন বলে জানান সফররত মক্কার সিনিয়র এই ইমাম।

শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল খুজাইম বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে আরও বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের ধারণা বদলে গেছে। বাংলাদেশ অনেক ভালো একটি দেশ। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি বাদশাকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা বাদশাহর আগমনের অপেক্ষায় আছি। সৌদি বাদশাহ আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং এ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান আল খুজাইম।

আগামীকাল তাদের সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, গত চল্লিশ বছরের মধ্যে এই প্রথম পবিত্র বায়তুল্লাহ শরিফ ও মসজিদে নববীর ইমামদ্বয়সহ সৌদি আরবের শীর্ষ পর্যায়ের ছয় সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে।

প্রসঙ্গত, এ সম্মেলনে যোগদানের জন্য মক্কার মসজিদুল হারামের প্রধান ইমাম ড. শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইসি ও মদিনা শরিফের মসজিদে নববির সিনিয়র ইমাম শায়খ ড. আলী বিন আবদুর রহমান আল হুযাইফিকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে অসুস্থতাজনিত কারণে শেষ পর্যন্ত তারা আসতে পারেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *