‘রূহের জগতে আল্লাহর সেই প্রতিশ্রুতির কথা কি আমরা ভুলে গেছি?’

‘রূহের জগতে আল্লাহর সেই প্রতিশ্রুতির কথা কি আমরা ভুলে গেছি?’

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : রূহের জগতে আল্লাহ তাআলা মানুষের কাছে থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানিয়েছেন শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

আজ শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) হাজীপাড়া ঝিল মসজিদ কমপ্লেক্সে জুমার বয়ানে এই আহ্বান জানান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

মানুষের সৃষ্টির যাত্রার কথা জানাতে গিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, মানুষের অস্তিত্ব একদিন আল্লাহ তাআলার মহা ইলমের মধ্যে ছিল। এরপর আল্লাহ তাআলা মানুষকে এক লম্বা পথের যাত্রা শুরু করিয়েছেন। আল্লাহ যতদিন ইচ্ছা করেছেন ‘আলমে আরওয়াহ’—এ মানুষের রূহ বা পরমাত্মা ছিল। কিন্তু তার দেহ গঠিত হয় নাই। এরপর আরও সামনে যাত্রা শুরু হলো মানুষের।

রূহের জগতে কেউ কাফের ছিলো না উল্লেখ করে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান বলেন, রূহের জগতে আল্লাহ তাআলা মানুষের কাছ থেকে তাঁর ‘রুবুবিয়্যাত’-প্রভুত্ব সম্পর্কে ওয়াদা নিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা মানুষকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আমি কি তোমাদের রব নই?’ ঐ দিন আল্লাহ তাআলার জালালিয়্যাতের সামনে কেউ তাঁর রুবুবিয়্যাত—প্রভুত্বকে অস্বীকার করতে পারে নাই। যারা দুনিয়াতে এসে কাফের হয়েছে তারাও অস্বীকার করতে পারে নাই। সবাই এক বাক্যে আল্লাহ তাআলার রুবুবিয়্যাত-প্রভুত্বের স্বীকৃতি দিয়েছিলো। রূহ জগতে কেউ কাফের ছিলো না। সবাই একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে মান্য করেছিল।

আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও তার মাঝের সবকিছু একমাত্র মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, আল্লাহ তাআলা মানুষকে রূহের জগত থেকে এমন এক জগতে স্থানান্তর করতে চাইলেন, যেখানে মানুষ তার কর্মের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে স্বীকার করে কি করে না এর পরীক্ষা করবেন। সেই জগতে পাঠানোর আগেই একটা মানুষের জন্য যা কিছু দরকার তথা তার পরিবেশের, তার খাদ্যের, তার বেঁচে থাকার, তার চলাফেরার জন্য যা প্রয়োজন আল্লাহ তাআলা তাঁর ইলম অনুসারে সবকিছু সৃষ্টি করলেন। মানুষ জানতো না তার প্রয়োজন কী? কিন্তু আল্লাহ তাআলা জানতেন মানুষের প্রয়োজন। পৃথিবীকে প্রস্তুত করার আগে আল্লাহ মানুষকে পাঠাননি। মানুষের আসার আগেই আল্লাহ তাআলা মেহেরবানী করে তার জন্য সবকিছু সৃষ্টি করে রেখেছেন।

মাতৃগর্ভে ছয় মাস পর রূহ দেওয়া হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা মায়ের পেটে ছয় মাসের মধ্যে মানুষের দেহ পূর্ণাঙ্গ করে দেন। ছয় মাস পর আল্লাহ তাআলা তার মধ্যে রূহকে প্রবেশ করান। মায়ের পেটের জগতে সে একাকী থাকে। সেখান থেকে পরে তাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়।

পৃথিবীতে মানুষের জীবন পদ্ধতি জানাতে গিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, পৃথিবীতে পাঠানোর পর মানুষ তিন ধরণের সময় কাটায়। এক. শৈশবের সময়। এই সময়টিতে তাকে আহকামাত পালনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। তখন তার উপর কোনো হুকুম-আহকাম, শরীয়তের পালনীয় কর্তব্য থাকে না।

“মানুষ আরেকটা জীবন পার করে, সেটা হলো যৌবনের জীবন। এই জীবন থেকেই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মানুষের উপর আহকামাত প্রয়োগ করা হয়। এই পর্যন্ত মানুষের কোনো ভাগ থাকে না। যৌবনে এসে মানুষের মাঝে দুটি ভাগ হয়ে যায়। একদল হয় আল্লাহর প্রতি আনুগত্যশীল মুসলমান। তারা হলো জান্নাতের পথের যাত্রী। যারা আল্লাহ তাআলাকে অস্বীকার করে তাদের অপর একটি দল হয়ে যায়।”

বার্ধক্যে আল্লাহ তাআলা মানুষকে হুঁশিয়ার করে থাকেন জানিয়ে এই আধ্যাত্মিক রাহবার বলেন, যৌবনের পর মানুষ আরেকটা জীবন অতিবাহিত করে, সেটা হলো বার্ধক্যের। বার্ধক্যে আল্লাহ তাআলা মানুষকে হুঁশ দেওয়ার চেষ্টা করেন। যেদিন থেকে তার চুল-দাড়ি সাদা হতে শুরু হয় সেদিন থেকে আল্লাহ তাআলাকে যেন তাকে হুঁশিয়ারি দিতে থাকেন যে, দুনিয়াতে তুমি আর বেশি দিন নাই। এখনও সময় আছে। তুমি ঠিক হয়ে যাও। আহকামাতের উপর তুমি জীবন কাটাও।

কেবল মানুষকেই রূহ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শাইখুল ইসলাম আল্লামা মাসঊদ বলেন, মানুষের আত্মা দুই ধরণের, এক. জীবাত্মা। এটা মানুষের কোনো একক বৈশিষ্ট্য নয়। এটা প্রত্যেক প্রাণীরই আছে। দুনিয়াতে যত প্রাণী আছে তাদেরও জীবাত্মা আছে। তাদের অঙ্গপ্রতঙ্গ আছে। তাদের জীবন ধারণ করতে হয়। আবার একদিন তারা মারা যায়। এই মারা যাওয়ার সম্পর্ক রূহের সাথে না। মারা যাওয়ার সম্পর্ক হলো জীবাত্মার সাথে।

“আরেক আত্মা হলো, যেটাকে ‘রূহ’ বা পরমাত্মা বলা হয়। এই রূহ একমাত্র মানুষের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা অন্য কোনো প্রাণীকে রূহ দেন নাই। একমাত্র এই রূহই আল্লাহ তাআলার আহকামাতকে বরদাশত করতে পারে। তাই যাদের রূহ নেই তাদেরকে আল্লাহ তাআলা কোনো আহকামাতও দেননি।”

দুনিয়ার মতো আখিরাতেও মানুষের দুই ভাগ থাকবে জানিয়ে ফিদায়ে মিল্লাত রহ.-এর এই খলীফা বলেন, যৌবনের প্রারম্ভে যে ভাগ হয়েছিল, মৃত্যুর পরও মানুষের এই দুই ভাগ থাকবে। একদল হবে জাহান্নামী। যারা দুনিয়াতে আল্লাহর নাফরমানী করেছে তারাই জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। কবরের আযাবে নিপতিত থাকবে। আরেক দল হবে জান্নাতী। যারা দুনিয়াতে আল্লাহর আহকামাতের প্রতি যত্নবান ছিল, তারাই হবে এই সৌভাগ্যবান দল। সুতরাং, চলুন আমরা সবাই শরীয়তের আহকামাত পালনে, নিজেদের আমলের প্রতি যত্নবান হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সে সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুন, আমীন।

গ্রন্থনাঃ আব্দুর রহমান রাশেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *