আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতার ভিত্তিতেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু-চি। গত বৃহস্পতিবার নেপিদোতে জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আশাহি শিমবুনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই প্রতিশ্রুতির কথা জানান। এ সময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উৎসাহিত করারও প্রতিশ্রুতি দেন এই নেত্রী।
প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সু-চি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আইন বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন বিদেশি পরামর্শকদের সহায়তা নিতে আপত্তি নেই মিয়ানমারের। বাংলাদেশের সঙ্গে যে সমঝোতা হয়েছে আমরা সে মোতাবেকই আগাব।’
গত কয়েক দশক ধরেই রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন করে আসছে মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও তাদের নাগরিকত্ব দেয়নি সরকার। গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে সামরিক বাহিনী। ওই সময় প্রাণ ভয়ে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এছাড়া কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করে সেনাবাহিনী। জ্বালিয়ে দেয়া হয় তাদের ঘরবাড়ি, হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণ করা হয়।
ঘটনাকে জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ আখ্যা দেয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ। তবে মিয়ানমার শুরু থেকে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলো। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত অভিযোগকে বহুদিন আমলেই নেয়নি মিয়ানমার। সম্প্রতি রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার করা যায় কিনা, তা নিয়ে বিচারকের পর্যবেক্ষণ জানতে চেয়েছেন ওই আদালতেরই একজন প্রসিকিউটর। নিধনযজ্ঞের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সম্প্রতি ৪০০ রোহিঙ্গার পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দারস্থ হয়েছেন মানবাধিকার আইনজীবীরা। এরপর নমনীয় হতে শুরু করে মিয়ানমার। জাতিসংঘর সাথে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তারা একটি সমঝোতা চুক্তি করে।
গত মে মাসে ঘোষণা করেছে, রোহিঙ্গাদের আবাস্থল রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনও ঘটনা ঘটেছে কি না তা তদন্ত করে দেখতে বিদেশি আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। সু চির ভাষ্য, ‘আমরা মনে করি তদন্ত কমিশনটি আমাদের পরামর্শও দিতে পারবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাখাইনে পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়ক হবে।’ রাখাইনের বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা অবিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সেখানে শান্তি ‘রাতারাতি অর্জন করা সম্ভব নয়।’
মিয়ানমারে ফেরত গেলে আবার আক্রান্ত হওয়ার যে আশঙ্কার কথা বলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে সু চি বলেছেন, ‘আমাদেরকে সব নাগরিকদেরই নিরাপত্তা দিতে পারতে হবে, বিশেষ করে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে। সেজন্য আমরা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।’ জাতিগত সমস্যাগুলোর সমাধানে তার সরকারের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে প্রচণ্ড সমালোচনা কুড়িয়েছে সে বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে অং সান সু চি বলেছেন, ‘একটা ঘটনাকে এক এক দিক থেকে দেখা যায়। তারা তাদের মতো করে ব্যাখ্যা কয়েছেন। আমাদের অনুধাবন তাদের চেয়ে ভিন্ন।’
____________
patheo24/105