পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বছর ঘুরে আবার দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আগামী ১৭ জুন (সোমবার) উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। প্রিয়জনদের সঙ্গে কোরবানির ঈদ উদযাপনে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন নগরবাসী। ঈদের আগমুহূর্তের ভিড় আর দুর্ভোগ এড়াতে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকা ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ।
শুক্রবার (১৪ জুন) বিকাল ৩টার দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি লঞ্চই যাত্রী বোঝাই। কোনও লঞ্চেই কেবিন খালি নেই। ডেকেও দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। একদিকে অল্প খরচে যাতায়াতের জন্য ডেকে জায়গা পেতে আগেভাগেই লঞ্চে ভিড় করছেন যাত্রীরা। অন্যদিকে যাত্রী বোঝাইয়ের পরেও আরও বেশি যাত্রী ওঠানোর জন্য হাঁকডাক দিচ্ছেন লঞ্চ শ্রমিকরা। বিকালে প্রায় প্রতিটি লঞ্চকেই অতিরিক্ত যাত্রী নিতে দেখা যায়।
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এদিন নদীপথে ঢাকা ছাড়ছেন হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে চাঁদপুর, বরিশাল ও ভোলা রুটে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের আওতায় এবার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে মোট ১৮০টি লঞ্চ ছাড়বে। এসব নৌপরিবহনের মধ্যে ঢাকা থেকে ছাড়বে ৯০টি, বিভিন্ন স্থান থেকে ৯০টি ঢাকায় আসবে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বরিশালগামী যাত্রী জিয়াউল হক বলেন, আমাদের জন্য তো এখন সড়ক, নৌপথ দুটোই খোলা। যেখান দিয়ে সুবিধা সেখান দিয়ে যাওয়া যায়। তবে আমি নৌপথে চলাচল করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সড়ক দিয়ে বরিশাল যাওয়া সহজ এবং নৌপথের চেয়ে অনেক কম সময় লাগে। তবু লঞ্চ টার্মিনালে এত ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই যে সড়ক দিয়ে বরিশালে খুব সহজে যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু হওয়ার আগে ঈদকেন্দ্রিক লঞ্চে যে চাপ ছিল সেটা অবশ্য এখন নেই। এ কারণে আমরা আরামে যাত্রা উপভোগ করতে পারছি।
ঢাকা-চাঁদপুরগামী লঞ্চ রফরফ-৭-এর স্টাফ রাকিব হোসেন বলেন, দুই দিন ধরে আগের তুলনায় যাত্রীর চাপ একটু বেড়েছে। কাল আরও বাড়বে। এতদিন তো লঞ্চে স্টাফ কম হলেও চলতো, কারণ যাত্রী কম ছিল। এখন যাত্রীও বেড়েছে, স্টাফ সংখ্যাও বেড়েছে। আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী লঞ্চে যাত্রী নিচ্ছি। অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছি না।
জোরে জোরে হাঁক ডেকে লঞ্চে যাত্রী নিচ্ছিলেন ঢাকা-হুলারহাট-ভান্ডারিয়াগামী লঞ্চ এমভি যুবরাজ-৭ লঞ্চের স্টাফরা। শরিফুল ইসলাম নামের এক কর্মী বলেন, ঈদে যাত্রী বেশি হয়। আমাদের মূল যে বেতন তার চেয়ে আমরা টিপস বেশি পাই। এ জন্য ঈদে বাড়ি যেতে না পারলেও বাড়তি ইনকামে বেশ খুশি খুশি লাগে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে চাঁদপুরগামী যাত্রী মোমেনা বেগম বলেন, ভেবেছি ঈদের আগের দিন বাড়ি ফিরবো। কিন্তু ঈদের ছুটির আগেই সাপ্তাহিক ছুটি পাওয়ায় আজই বাড়ি চলে যাচ্ছি। গতকালই চলে যেতাম, কিন্তু কিছু কেনাকাটা বাকি ছিল। বাড়ি ফিরে পরিবারের সবার সঙ্গে একসঙ্গে ঈদ করবো এটা ভেবে আমার এখনই ঈদ ঈদ লাগছে। তবে একটু ভয়ও লাগছে। কারণ লঞ্চগুলোয় অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। আর নদীতেও এখন ঢেউ একটু বেশি। ঠিকঠাকভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারলেই বাঁচি।
এদিকে এক লঞ্চ থেকে অপর লঞ্চকে হুট করে ধাক্কা দেওয়া এবং যাওয়ার পথে তাড়াহুড়ো করে যাত্রী তোলার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ জানিয়েছে। পারাবত-১৫ লঞ্চে গাছিরখালের যাত্রী সুজাতা বলেন, দূর থেকে এসেই একটি লঞ্চ আরেকটি লঞ্চকে সজোরে ধাক্কা দেয়। একটু আগে একটি লঞ্চ এত জোরে ধাক্কা দিয়েছে যে সবাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেছে। একটুর জন্য বড় বিপদ থেকে বাঁচলাম।
যাত্রীদের ভিড় শনিবার আরও বাড়তে পারে বলে আশা লঞ্চের কর্মীদের (ছবি: প্রতিবেদক)
ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌপুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন। সদরঘাট নৌ-পুলিশ থানার ওসি মো. আবুল কালাম বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্রতিটি লঞ্চ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। কোনও লঞ্চে যেন অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করে সেজন্য আমরা সতর্ক করেছি।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন