পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : লাল চন্দন নিয়ে আগে আপনি না জানলেও দক্ষিণী সিনেমা পুষ্পার পর আর নতুন করে নিশ্চয়ই চেনাতে হবে না। পুরো সিনেমাটাই তৈরি হয়েছে এই মূল্যবান কাঠটি কীভাবে একজন পাচার করে অর্থ সম্পদের মালিক হলো, পুরো জঙ্গলের দখল নেওয়া, শত্রুদের হাত থেকে ব্যবসা রক্ষা করাসহ নানান দৃশ্যের মধ্য দিয়ে।
তবে সিনেমার মূল বিষয় ছিল লাল চন্দন। অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে কেন এই চন্দন নিয়ে এতো কাণ্ড। কেনই বা এটি এতো মূল্যবান। রক্তচন্দনকে মূলত লাল সোনা বলে অভিহিত করা হয়। সোনার মতোই মূল্যবান এই গাছ। খুবই বিরল প্রজাতির এই গাছ। পুষ্পা সিনেমাতে যে জঙ্গল দেখানো হয়েছে, রক্তচন্দন দক্ষিণ ভারতের শেষাচলম পাহাড়ের ওই ঘন জঙ্গলেই একমাত্র পাওয়া যায়।
মূলত দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের চার জেলা-নেল্লোর, কুর্নুল, চিত্তোর এবং কাডাপ্পা জেলায় এই গাছ মেলে। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়ায় এই গাছ খুব ভাল হয়। এক একটি গাছের উচ্চতা হয় ৮-১২ মিটার। লাল চন্দন হল একটি ‘এনডেমিক স্পিসিস’।
‘এনডেমিক স্পিসিস’ অর্থ এমন একটি উদ্ভিদ বা প্রাণীর প্রজাতি যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ এই গাছ ওই অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। যেহেতু প্রাকৃতিকভাবে ‘এনডেমিক স্পিসিস’ বিশ্বের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে রক্তচন্দনের চাহিদা আকাশছোঁওয়া।
মূলত দু’ধরনের চন্দনকাঠ পাওয়া যায়। একটি সাদা এবং অন্যটি লাল। সাদা চন্দনে সুন্দর গন্ধ থাকলেও লাল বা রক্ত চন্দনে কোনো গন্ধ নেই। কিন্তু এই কাঠের বিশেষ গুণের জন্যই বিশ্ব জুড়ে এর বিপুল চাহিদা। আর সেই চাহিদার কারণেই এই কাঠ পাচার হয় বিপুল পরিমাণে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ২০১৮ সালে এই গাছকে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত করেছে। চোরা কাঠকারবারিদের পাল্লায় এই কাঠ এত বিপুল পরিমাণে কাটা এবং পাচার হয়েছে যে, সারা বিশ্বে আর মাত্র পাঁচ শতাংশ গাছ পড়ে রয়েছে।
মূলত আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসাবে এই কাঠের বিপুল ব্যবহার হয়। হজম, ডায়েরিয়া-সহ বেশি কিছু রোগের চিকিৎসায় এই কাঠ কাজে লাগে। এছাড়াও রক্তচন্দন কাঠের রক্ত পরিশোধনের গুণ রয়েছে বলেই মনে করা হয়। বিভিন্ন ওষধি গুণ ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পেও এই কাঠের বিপুল চাহিদা রয়েছে। শিল্প ছাড়াও পূজা-অর্চনা এবং বিভিন্ন প্রসাধনী দ্রব্য তৈরিতে বিপুল চাহিদা রয়েছে এই কাঠের।
রক্তচন্দন থেকে পাওয়া নির্যাস বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। রক্তচন্দনে বেশ কিছু ‘আর্থ মেটাল’ পাওয়া যায়। তাও বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। রক্তচন্দন প্রাকৃতিক ভাবে আগুন রোধ করতে সক্ষম। কারণ রক্তচন্দনের কাঠ সহজে পোড়ানো যায় না। পূর্বঘাট এলাকা শুষ্ক হওয়ায় সেখানকার জঙ্গলে অনেক সময়েই দাবানলের ঘটনা ঘটে।
আন্তর্জাতিক বাজারে কেজি প্রতি তিন হাজারেরও বেশি টাকা থেকে এই কাঠ বিক্রি শুরু হয়। ভারতে এই গাছ কাটা আইনত কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। তবে আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এই কাঠ পাচার হয়। পাচার রোখার জন্য ‘রেড স্যান্ডলার্স অ্যান্টি-স্মাগলিং টাস্ক ফোর্স’ও গঠন করা হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশে প্রাকৃতিকভাবে রক্তচন্দনের দেখা পাওয়া গেলেও এখন ব্যবসায়িক চাহিদা এবং গাছের অস্তিত্ব সঙ্কটের কথা ভেবে অন্য রাজ্যেও এই গাছের চাষ করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্তরে চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই কাঠের বিপুল চাহিদা। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চীনে। তাই পাচারও বেশি হয় ওই দেশে। আসবাবপত্র, ঘরসজ্জা এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে এই কাঠের চাহিদা অনেক বেশি চীনে।
সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস