লিবিয়ায় ১২৩ বাংলাদেশী মুক্তিপণেও ছাড়া পাচ্ছে না

লিবিয়ায় ১২৩ বাংলাদেশী মুক্তিপণেও ছাড়া পাচ্ছে না

ওয়ার্ল্ড ডেস্ক ● ১২৩ বাংলাদেশীকে অপহরণ করা হয়েছে লিবিয়ায়। তাদেরকে রাজধানী ত্রিপোলি থেকে কয়েক শত কিলোমিটার দূরে বিভিন্ন স্থানে আটকে রাখা হয়েছে। এই অপহরণের জন্য বাংলাদেশী অভিবাসীদের একটি অংশকে দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অপহৃত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করছে অপহরণকারীরা। মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে। অপহৃতদের পরিবারকে আইনী সহায়তা দিতে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডকে চিঠি দিয়েছে সমাজ কল্যাণ ও বৈদেশকি কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন, সমাজ কল্যাণ ও বৈদেশিক কমংসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নারায়ণ চন্দ্র বর্মা। তিনি বলেছেন, অপহৃতদের আইনী সহায়তা দেয়ার জন্য দায়বদ্ধ সংশি¬ষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের সমাজ কল্যাণ বিষয়ক শাখা। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেন নি। ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডকে ২১ শে নভেম্বর এ সংক্রান্ত চিঠি দেয় সমাজকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সোহেল পারভেজ এতে স্বাক্ষর করেছেন।

এতে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে মুক্তিপণ পরিশোধ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও অপহৃতদের মুক্ত করা যাচ্ছে না। তারা আরো অর্থ দাবি করছে। অপহৃতদেরকে আটকে রেখে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে এবং নির্যাতিতদের ছবি তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে পাঠানো হয়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশনের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে মন্ত্রণালয় ওই চিঠিতে আরো লিখেছে, নিজ দেশের কিছু অসাধু মানুষের একটি চক্র লিবিয়ায় অপহরণ করেছে কমপক্ষে ১২৩ বাংলাদেশীকে। এই চক্রের মূলহোতাকে বাকির মিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে জাকির হোনে ও কবির হোসেনকে। এমন চক্র লিবিয়া হয়ে সাধারণ মানুষকে ইউরোপে নিয়ে যেতে প্ররোচণা দেয়। একবার তারা বাংলাদেশীদেরকে লিবিয়া নেয়ার পর তাদেরকে জিম্মি করে এবং বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবি করে। ২১ শে জুলাই আইয়ুব আলী (২৫) ও মো. রুবেল (২৮) নামের দু’বাংলাদেশীকে অপহরণ করা হয় লিবিয়ায়। তাদের দু’জনের বাড়িই লিবিয়া।

এ জন্য পিবিআইতে অভিযোগ করেছে তাদের পরিবার। এ নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। তাতে গত ৭ থেকে ৯ই সেপ্টেম্বর নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬ জনকে। এর মধ্যে আইয়ুব আলী ২০১২ সালে একটি গ্যাস স্টেশনে কাজ নিয়ে লিবিয়া যান। সেখান থেকে চার বছরের বেশি সময় তিনি বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু এ বছরের জুলাই মাসে তাকে অপহরণ করা হয়। ২১ শে জুলাই তিনি ফোনে দেশে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদেরকে বলেন, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে পাসপোর্ট সহ সব কিছু। তাকে নির্যাতনের একটি ভিডিও আত্মীয়দের কাছে পাঠিয়ে দেয় অপহরণকারীরা। মুক্তিপণ দাবি করে। আইয়ুবের পরিবার কয়েকটি বিকাশ নাম্বারের মাধ্যমে পরিশোধ করেন ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এ অর্থ পেয়ে আইয়ুুবকে ছেড়ে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু অপহরণকারীরা আরো টাকা দাবি করে। ওদিকে ডবি-উএআরবিই ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নিয়ে এসব বাংলাদেশীকে লিবিয়া থেকে উদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন।

অভিবাসন অধিকার বিষয়ক কর্মী আল আমিন নয়ন বলেছেন, ইউরোপে কাজ দেয়ার নাম করে বিভিন্ন সিন্ডিকেট বাংলাদেশী শ্রমিকদেরকে লিবিয়ায় পাচার করছে। লিবিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য শ্রমবাজার সরকারিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশী শ্রমিকদেরকে প্রথমে পাঠানো হয় প্রতিবেশী সুদান ও সোমালিয়ায়। সেখান থেকে তাদেরকে পাচার করা হয় লিবিয়ায়। তবে ওই চিঠির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইডবি¬উওই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আখতেরুজ্জামান। তিনি বলেছেন, আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণাকারী এজেন্ট বা ব্রোকারদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *