শততম টেস্টে দুর্দান্ত জয়

শততম টেস্টে দুর্দান্ত জয়

 

ক্রীড়া প্রতিবেদক ● জয় দিয়েই নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখলো বাংলাদেশ। শ্রীলংকাকে তাদের মাটিতেই পরাজয়ের স্বাদ দিল টাইগাররা। কলম্বোতে শ্রীলংকাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-১ এ সমতায় শেষ করলো বাংলাদেশ। রবিবার ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য ১৯১ রান তাড়া করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় মুশফিক বাহিনী। মেহেদী হাসান মিরাজের সুইপ যখন ফিল্ডার ধরতে ব্যর্থ হলেন উৎসব শুরু করে দিয়েছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ব্যাটসম্যান নিজেও মেতেছিলেন জয়ের আনন্দে; এর মাঝেও প্রয়োজনীয় দুটি রান নিলেন দুইজনে, সীমানা থেকে ছুটে এল উচ্ছ্বসিত সতীর্থরা। শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবারের মতো টেস্টে হারাল বাংলাদেশ, নিজেদের শততম টেস্টে। ব্যাটে-বলে দাপুটে ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশ ৪ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে।

অনেক স্বপ্নের দিন শেষ হয়েছে হতাশায়। সম্ভাবনা মিলিয়ে গেছে নিদারুণ ব্যর্থতায়। এবার তেমন হতে দিল না বাংলাদেশ। শুরুটা করলেন তামিম ইকবাল, শেষ করলেন মিরাজ। বর্তমান মিলল ভবিষ্যতের সঙ্গে, এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগাল বাংলাদেশকে। শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হতেই মাঠে চলে আসেন প্রধান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে। পিচ রোল করা দেখেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে। সন্তুষ্ট হওয়ার পরই কেবল মাঠ ছাড়েন তিনি। শ্রীলঙ্কার শেষ দুই উইকেট নিতে সময় লেগে কিন্তু নিজেদের প্রথম দুই উইকেট হারাতে সময় লাগেনি। অবস্থা হতে পারতো আরও খারাপ। সৌম্য আউট হতে পারতেন ২ রানে। অফ স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরার বলে স্লিপে ক্যাচ তালুতে জমাতে পারেননি আসেলা গুনারত্নে। জীবন পাওয়া উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে সমর্থকরা একটু পরপর চিৎকার করে বলছিলেন, সৌম্য, দেখে খেল। তাতে অবশ্য কান দেননি।

এগিয়ে এসে উড়াতে চেয়েছিলেন রঙ্গনা হেরাথকে। ঠিক মতো খেলতে পারেননি, লংঅফে সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করেন উপুল থারাঙ্গা। থেমে যায় চিৎকার। ইমরুলকে কিছু বলারই সুযোগ মেলেনি। টার্ন করবে ভেবে খেলে প্রথম বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। ৩৯তম জন্মদিনে সামনে থেকেই দলকে নেতৃত্ব দেন হেরাথ। বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক তামিম জন্মদিনের আগের দিন উপহার দেন দারুণ এক ইনিংস। ২ উইকেটে ৩৮ রানে লাঞ্চে যাওয়া বাংলাদেশের অন্য চেহারা দ্বিতীয় সেশনে। স্পিনে তামিম, সাব্বির রহমানের পায়ের ব্যবহার ছিল দুর্দান্ত। শুরুতেই জোড়া আঘাত পাওয়া হেরাথকে খেলেছেন সহজে। অন্য কোনো বোলার তাদের পারেননি খুব একটা ভোগাতে। সাব্বির সুইপ-রিভার্স সুইপে সচল রেখেছেন রানের চাকা। তামিম টিকে ছিলেন আস্থার প্রতীক হয়ে। তিনটি চারে ৮৭ বলে অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর চড়াও হন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দুইজনের ব্যাটে দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টায় ৭৭ রান যোগ করে বাংলাদেশ। চতুর্থ ইনিংসে তৃতীয় উইকেটে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো শতরানের জুটি পায় বাংলাদেশ।

ছন্দপতন এর পরেই। অর্ধশতকের পর সান্দাকানকে এগিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকান তামিম। শটের প্রশংসা মেলে হাথুরুসিংহের কাছ থেকে। চতুর্থ ইনিংসে প্রথম শতকের পথে থাকা তামিম খানিক পরে উড়াতে যান পেরেরাকে। এবার পারেননি, ফিরেন দিনেশ চান্দিমালের চমৎকার ক্যাচে পরিণত হয়ে। অমন আউটে ক্ষেপে উঠতে যায় কোচকে। ১২৫ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৮২ তামিম। ১০৯ রানের জুটি ভাঙার পর বেশিক্ষণ টেকেননি সাব্বির। পেরেরাকে সুইপ করতে গিয়ে পারেননি, ফিরেন রিভিউয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে। প্রথমবারের মতো চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান দুই ইনিংসেই ফিরলেন চল্লিশের ঘরে। প্রথম ইনিংসে ৪২, এবার ৪১।

উইকেটে সতর্ক সাকিব আল হাসান, বরাবরের মতো আঁটসাঁট মুশফিকুর রহিম। জয়ের জন্য শেষ সেশনে প্রয়োজন ৩৫ রান। ম্যাচ তখন অতিথিদের মুঠোয়। পেরেরাকে শরীরের খুব কাছ থেকে কাট করতে গিয়ে সাকিব বোল্ড হলে আবার চাপটা ফিরে আসে বাংলাদেশের ওপর। তরুণ মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে বাকিটা সারেন মুশফিক। অধিনায়ক নিজে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন ১১ রানে। ৭ রানে জীবন পান মোসাদ্দেক। তরুণ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নিজের অভিষেক টেস্টে যে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তা বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরিণত হওয়ার প্রমাণ। আচমকা লাফিয়ে উঠা বলে ক্যাচ দেয়ার আগে দলকে নিয়ে যান জয় থেকে ২ রান দূরত্বে। তিন বলের মধ্যে বাকিটুকু সারেন মিরাজ। তাদের দুই রান পূর্ণ হতে হতে মাঠে চলে আসে পুরো বাংলাদেশ দল। মাঠে তখন শুধুই উচ্ছ্বাস। তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন হেরাথ ও পেরেরা। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এই জুটিকে সামলেই জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে টানা ছয় টেস্ট জেতা দলটিকে নামিয়েছে মাটিতে। এখন ওপরে উঠার সময় মুশফিকদের।

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ৩৩৮

বাংলাদেশ : ১ম ইনিংস : ৪৬৭

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস : ৩১৯

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ৫৭.৫ ওভারে ১৯১/৬ (তামিম ৮২, সৌম্য ১০, ইমরুল ০, সাব্বির ৪১, সাকিব ১৫, মুশফিক ২২*, মোসাদ্দেক ১৩, মিরাজ ২*; পেরেরা ৩/৫৯, হেরাথ ৩/৭৫, ডি সিলভা ০/৭, সান্দাকান ০/৩৪, লাকমল ০/৭, গুনারতেœ ০/৪)

ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী

সিরিজ : ১-১ ব্যবধানে ড্র

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : তামিম ইকবাল

ম্যাচ অব দ্য সিরিজ : সাকিব আল হাসান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *