শরিয়াহ ব্যাংকের আমানতের হার কমেছে, বেড়েছে ঋণের

শরিয়াহ ব্যাংকের আমানতের হার কমেছে, বেড়েছে ঋণের

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দেশের শরিয়াহভিত্তিক বা ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক জানুয়ারি–মার্চের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল–জুন) আমানতের হার কমেছে। তবে বেড়েছে ঋণের হার। একই সময়ে এই ধারার ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় আসার হারও কমে গেছে। সম্প্রতি দেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোয় সংঘটিত নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার ঘটনা সামনে আসার কারণে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়। সে জন্য এ ধরনের ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ওপর প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক এপ্রিল–জুনের হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ জুনের শেষে হয়েছে ১৬ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত ৪ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংক আমানতের ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শরিয়াহ ব্যাংকগুলোয় এই হার ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

তবে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার হার প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে। প্রথম প্রান্তিকে সব শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ঋণ দিয়েছিল মোট ব্যাংক ঋণের ২৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ১৮ শতাংশ, যা পরিমাণে ৪ লাখ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকার মতো। এপ্রিল–জুন প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ লাখ সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় সেটিকে দেশের ব্যাংক খাতের জন্য দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেন অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী।

তিনি বলেন, এই ধারার ব্যাংকগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হচ্ছিল। প্রশাসনিক ও পরিচালনগত দুর্বলতার কারণে সেই আস্থায় ভাটা পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা নিয়ে চলছে। অনেক ব্যাংক থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে প্রবাসী আয় আসার হারও কমেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে আসা মোট প্রবাসী আয়ের ৫৫ শতাংশ এসেছিল শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে যা কমে হয়েছে ৩৮ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে প্রবাসী আয়ের হার কমেছে ১৭ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সার্বিকভাবেই প্রবাসী আয় কম এসেছে।

আট বছর পর গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানতে প্রথমবারের মতো নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়। এর আগের প্রান্তিকের তুলনায় ওই তিন মাসে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত কমে ১১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। এরপর থেকে নানা অনিয়ম ও সংকটের কারণে এ ধারার ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়ত আলোচনায় রয়েছে।

এ বছরের মাঝামাঝি থেকে চাহিদামতো টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে না পারায় জরিমানাও গুনতে হয়েছে ইসলামী ধারার ছয় ব্যাংককে। এসব ব্যাংকের তারল্যসংকট তখন এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে দণ্ডসুদের টাকাও পুরোটা জমা দিতে পারছিল না তারা। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য এসব ব্যাংককে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশে পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক আছে ১০টি। এ ছাড়া অনেক সাধারণ ব্যাংকও প্রচলিত ধারার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সূত্র: প্রথম আলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *