পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: রক্ত মাংসের শরীর নয়, বরং শরীরের অভ্যন্তরীণ রূহ-ই হলো আসল মানুষ— বলে মন্তব্য করেছেন জানেশীনে ফিদায়ে মিল্লাত, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি, মুসলিম উম্মাহর আধ্যাত্মিক রাহবার মাওলানা সায়্যিদ মাহমুদ আসআদ মাদানী।
বুধবার (১৩মার্চ) দ্বিতীয় রমজান আফতাবনগর মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্সে ইতিকাফরত মুসল্লিদের উদ্দেশে তিনি একথা বলেন।
‘শরীর’ নাকি ‘রূহ’ কোনটি আসল মানুষ?— এ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এই আধ্যাত্মিক রাহবার বলেন, আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুটি জিনিসের সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন। এক. শরীর। দুই. রূহ। লোকেরা শরীরকেই মানুষ মনে করে। আসলে রূহ-ই হলো আসল মানুষ। আল্লাহ তাআলা মানুষের এই শরীরকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বানিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময় পূরণ হয়ে গেলে মানুষকে ইহকাল থেকে পরকালে স্থানান্তর করা হয়। পরকালে মানুষের কেবল রূহ-ই বাকী থাকে, শরীর না। সুতরাং একদিন এই শরীর শেষ হয়ে যায়, কিন্তু আসল মানুষ বা ‘রূহ’ শেষ হয় না।
রূহের চিকিৎসার প্রতি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জানেশীনে ফিদায়ে মিল্লাত বলেন– যতোটা আমরা নকল ‘মানুষ’ অর্থাৎ ধ্বংসশীল শরীরের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যাই, সচেতন থাকি, আসল ‘মানুষ’ অর্থাৎ চিরস্থায়ী রূহের চিকিৎসার জন্য আমাদেরকে তারচেয়েও বেশি সচেতন হতে হবে।
তিনি আরও বলেন– আমাদের নিজেদের চিনতে হবে। যদি আমরা নিজেদেরকে না চিনি, তাহলে তো আমাদের রোগ-বালাই ধরতে পারবো না। শুধরাবো কী করে?
অহঙ্কার-ই রূহের বড় রোগ উল্লেখ করে মাওলানা মাদানী বলেন– ‘রূহের অনেক রোগ আছে, তারমধ্যে অহঙ্কার হলো সর্ব রোগের উৎস। অহঙ্কারের কারণেই মানুষ রাগান্বিত হয়, হিংসা- বিদ্বেষেরও সৃষ্টি এই অহঙ্কার থেকেই।
সব সমালোচনাকে বিরোধিতা মনে করা ঠিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন– মানুষ প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে। কেউ তার সমালোচনা করবে তা শুনতে সে নারাজ। সব সমালোচনা-ই কিন্তু খারাপ না। প্রত্যেক সমালোচক-ই কিন্তু বিরোধী নয়। এই দুইয়ের মাঝে পার্থক্য বুঝতে হবে। সমালোচনার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই ভালো কিছু হয়। সবসময় এর ফলাফল খারাপ হয় না। কিন্তু আমরা বেশিরভাগ সময় সমালোচনাকে বিরোধিতা মনে করি। এমনও হতে পারে সমালোচনাকারীর শব্দ চয়ন সঠিক হয়নি, যার কারণে মনে হতে পারে সে বিরোধী। সমালোচনার জন্য সঠিক শব্দ চয়ন গুরুত্বপূণ নয়।’
আরো পড়ুন: জিকিরে অহঙ্কার দূর হয়, হৃদয় হয় পরিশুদ্ধ : মাওলানা মাহমুদ মাদানী
কীভাবে বোঝা যাবে কে বিরোধী কে সমালোচক? আপনি যদি নিজেকেই না চিনেন তাহলে অন্যকে কীভাবে চিনবেন? যখন নিজেকে চিনবেন তখন কোনটা বিরোধিতা কোনটা সমালোচনা তা সহজেই চিনতে পারবেন। কিন্তু নিজেকে চিনতে হলে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহওয়ালাদের দরবারে এসে রুহের মেহনত করতে হবে। ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন–যে ব্যক্তি নিজেকে চিনলো, সে প্রকৃতপক্ষে তার রবকেই চিনলো।
মাওলানা মাদানী বলেন, আমি যতুটুকু পড়েছি ও বুঝেছি, ৯০ ভাগ হিংসার সৃষ্টি হয় অহঙ্কার থেকে। কীভাবে আমার চেয়ে বেশি তার হলো এ নিয়ে মানুষ হিংসা করে। ধন-দৌলত, সৌন্দর্য, পরিপূর্ণতা সবকিছু নিয়ে মানুষ হিংসা করে। আর এই হিংসার একমাত্র কারণ অহঙ্কার। এজন্য অহঙ্কারকে সব রোগের উৎস বলা হয়।
কোনো মুমিনকে হীন দৃষ্টিতে দেখা ঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেক মুমিনের হৃদয় আল্লাহর ঘর। তাই কোনো মুমিনকে হীন চোখে দেখা যাবে না। মুমিন যদি কোনো আমল না করে বা মুমিন যদি বদ আমলের সাথে জড়িত থাকে, তবুও তাকে নীচু দৃষ্টিতে দেখা যাবে না। মুমিন তো মুমিনই হয়। আপনি যদি আমলি মুমিন হোন, তাহলে সেটা তো আল্লাহর রহমতেই, তাই না? আপনার শুকরিয়া আদায় করা উচিত আল্লাহ তাআলা আপনাকে তারচেয়ে ভালো রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা তো তার স্থানে আপনাকে আর আপনার স্থানে তাকে রাখতে পারতেন।