পাথেয় ডেক্স : বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী এবং অ্যাক্টিভিস্ট শহীদুল আলমকে রবিবার রাতে তাঁর ঢাকার বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের একটি সংবাদ সংস্থা৷
ডয়চে ভেলের আধুনালুপ্ত দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ডের অন্যতম বিচারক শহীদুল আলমকে স্থানীয় সময় রবিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে তাঁর ঢাকার বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে গেছে সাদা পোশাকের একদল লোক৷ তাঁর স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছেন এই তথ্য৷
স্থানীয় সময় রবিবার দিবাগত রাতে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে স্বামী শহীদুল আলমের দেখা পাওয়ার আশায় অপেক্ষারত রেহনুমা আহমেদ বলেন, ‘‘আমাদের বাসার নিরাপত্তা কর্মী আমাকে জানিয়েছেন, ডিবি পরিচয়ে লোকজন বাড়িতে ঢুকে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে গেছে৷ তারপর ক্যামেরার উপরে কশটেপ লাগিয়ে উপরে গিয়ে শহীদুলকে জোর করে নীচে নামিয়ে এনেছে এবং হাইরেস গাড়িতে তুলেছে৷ বাসার বাইরে তখন আরো দু’টি গাড়ি অপেক্ষমান ছিল, যার একটির লাইসেন্স নম্বর জানা গেছে৷’’
ঘটনার সময় একই ভবনের আরেকটি তলায় অবস্থান করছিলেন রেহনুমা আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘শহীদুলকে যে ফ্ল্যাট থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানকার সবকিছু আগে যেমন ছিল তেমনই আছে৷ শহীদুলের স্যান্ডেলও আছে৷’’
শহীদুলকে সাদা পোশাকের ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে যাওয়ার পরপরই ধানমন্ডি থানায় গিয়েছেন রেহনুমা৷ সেখানে দায়ের করা অভিযোগে তিনি তাঁর স্বামী এবং সহকর্মী শহীদুল আলমকে ‘‘অক্ষত অবস্থায় দ্রুত উদ্ধারের’’ জন্য পুলিশের প্রতি আর্জি জানিয়েছেন৷
এদিকে, ঢাকার ইউএনবি সংবাদ সংস্থা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে গোয়েন্দারা শহীদুল আলমকে আটক করেছে৷ সংবাদ সংস্থাটি প্রতিবেদনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেনকে উদ্বৃতি করে লিখেছে, ‘‘চলমান ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে ফেসবুকে শহীদুল আলমের কিছু পোস্টের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে আটক করা হয়েছে৷’’
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে ঢাকায় চলা স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নানা ধরনের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করছিলেন শহীদুল আলম৷ শনিবার ঝিগাতলায় ছাত্র বিক্ষোভের ছবি তুলতে গেলে বাঁধার মুখে পড়েন তিনি৷ সেসময় তাঁর ক্যামেরা ভেঙে যায়৷ এমনকি তিনি ফেসবুক লাইভে বক্তব্য দেয়ার সময়ও তাঁকে বাধা দেয়া হয় এবং তাঁর মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে দুই যুবক৷ রবিবার রাতে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কয়েকঘণ্টা আগেও তিনি কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকার দেন, যেখানে রাজপথে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দল ছাত্রলীগের হামলার তীব্র সমালোচনা করেন৷
ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রেহনুমা আহমেদর জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সংবিধান প্রদত্ত বাকস্বাধীনতার চর্চার বাইরে অবৈধ কিছু করেননি শহীদুল আলম৷ তবে, তাঁকে যেভাবে রাতের বেলা তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেটা অবৈধ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ফোটোগ্রাফির জগতে এক মাইল ফলক দৃক৷ মানবাধিকারের পক্ষে, সুশীল সমাজের জোরালো কণ্ঠ হিসেবেও সক্রিয় প্রতিষ্ঠানটির স্থপতি ও প্রাণপুরুষ শহীদুল আলম৷ নিজের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন তিনি৷
সূত্র : ডয়চে ভেল