পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব শায়খ আহমদ ফাহমি জমজম আল বানজারি নদবি আল মালিকি ইন্তেকাল করেছেন। গত ৩০ অক্টোবর অসুস্থতায় ভুগে মারা যান। তাঁর ইন্তেকালে বিশ্বের খ্যাতনামা ইসলামী শিক্ষাবিদরা গভীর শোক প্রকাশ করেন।
শায়খ আহমদ ফাহমি জমজম ১৯৫৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ কালিমানতান শহরের আমুনতাই এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় দারুস সালাম মাদরাসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৮০ সালে ভারতের লখনৌয়ে অবস্থিত বিখ্যাত দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় পড়াশোনা করেন। সেই সময় তিনি বিশ্ববরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা আবুল হাসান আলি নদবি (রহ.)-এর সান্নিধ্যে অনেক সময় কাটান। ১৯৮৭ সালে উচ্চতর আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পড়েন।
১৯৮৮ সালে হাদিস বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে পবিত্র মক্কা নগরীতে পাড়ি জমান। তখনকার বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের কাছে হাদিসের ইজাজত নেন। শায়খ মুহাম্মাদ ইয়াাসিন আল ফাদানি (রহ.) ও শায়খ সাইয়েদ মুহাম্মদ বিন আলবি আল মালিকি আল হাসানি (রহ.)-এর কাছে হাদিসের ইজাজত লাভ করেন। শায়খ মুহাম্মাদ বিন আলবি আল মালিকি তাঁকে ‘আল মালিকি’ উপাধী প্রদান করেন। এরপর থেকে তিনি নিজ নামের শেষে তা ব্যবহার করতেন।
ইলমচর্চায় দীর্ঘ যাত্রার পর শায়খ ফাহমি ইন্দোনেশিয়ায় ফিরে যান। এবং ইসলাম শিক্ষা পাঠদান শুরু করেন। ২০০১ সালে ইন্দোনেশিয়ার কালিমানতানের বিভিন্ন স্থানে তিনি নুরুল হিদায়াহ নামে একটি আবাসিক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর একই নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দেরাং, পকোক সিনা, কেদাখসহ ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন বড় বড় শহরে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে অনেক প্রতিষ্ঠান করে। শিক্ষকতার পাশাপাশি নিয়মিত মসজিদে আলোচনা করতেন। রেডিওতে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিতেন। তাঁর প্রাঞ্জল আলোচনা ছাত্র, শিক্ষক ও সর্বসাধারণ মানুষ সবাই উপভোগ করত। শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি ভালো পরিমাণের বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও মালয়েশিয়া থেকেও শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ার জন্য আসতে থাকে। মালয় ভাষায় কোরআন ও হাদিসের জ্ঞান প্রসারে তিনি অনুবাদ, রচনা ও গবেষণা করেন।
যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা ইসলামী ব্যক্তিত্ব ক্যামব্রিজ ইসলামিক কলেজের ডিন ড. আকরাম নদবি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি শায়খ আহমদ ফাহমিকে দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার ছাত্র অবস্থা থেকে আমি তাকে চিনি। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী ছিলেন। আরবি ভাষায় পারদর্শীতা ছিলেন। ইসলামী ফিকহের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন শাফেয়ি মাজহাবের অনুসারী। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় তিনি ছিলেন দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার সত্যিকারের প্রতিনিধি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইলমচর্চা ও প্রচার-প্রসারে তিনি পুরো জীবন ব্যয় করে। তাঁর কাছে শিক্ষার্থীরা এসে অনেক উপকৃত হত। অত্যন্ত বিনম্র ও আন্তরিক হওয়ায় সবার প্রিয় ছিলেন। সবাইকে সদুপদেশ ও উত্তম পরামর্শ প্রদান করতেন। তাঁর চলে যাওয়া যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার মতো নয়। তাঁর ইন্তেকালে নদওয়াতুল উলামা গভীরভাবে শোকাহত। সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হলো সেই ব্যক্তির মৃত্যু যে তার মতো অন্য কাউকে রেখে যায় না।’