শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মহামারি

শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মহামারি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দেশের শিক্ষায় যে বৈষম্য ছিল, মহামারি তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও দেশে ব্যাপারটি আগে থেকেই একটি বড় উদ্বেগের বিষয় ছিল। একটি গবেষণায় এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, দেশব্যাপী দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় গত ছয় মাসে শিক্ষাক্ষেত্রে আরো অবনতি হয়েছে।

গ্রাম ও শহরের বস্তি এলাকায় দেখা গেছে, কমপক্ষে ২২ শতাংশ প্রাথমিক ও ৩০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী স্কুল বন্ধ থাকায় লার্নিং লস বা শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে আছে।

সোমবার এক ওয়েবিনারে গবেষণার এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) কোভিড-১৯ লিভলিহুড অ্যান্ড রিকভারি প্যানেল সার্ভের অংশ হিসেবে উক্ত জরিপ চালানো হয়।

অনুষ্ঠানে গবেষণা তথ্য প্রকাশ করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ডক্টর হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ইমরান মতিন। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল ২০২১ সালের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষাজীবনে কী কী পরিবর্তন এসেছে তা জানা। এরপর একটি শিক্ষণ মডিউল তৈরি করা হয়। প্রথমটি করা হয় ২০২১-এর মার্চে, পরেরটি একই বছরের আগস্টে। গবেষণার এই সময়কাল পুনরায় স্কুল খোলার যে বাস্তবতা, সে ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।

জরিপে উঠে এসেছে, অনেক শিক্ষার্থী নিজে নিজেই পড়াশোনা করে, কেউ কেউ অনিয়মিতভাবে পড়াশোনা করে অথবা একেবারেই পড়াশোনা করে না। গবেষকদের মতে, এমন শিক্ষার্থীরাই আছে শিক্ষণ ঘাটতি বা লার্নিং লসের ঝুঁকিতে। গ্রাম ও শহুরে বস্তি এলাকায় চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষণ ঘাটতি বা লার্নিং লসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।

লার্নিং লস বা শিক্ষণ ঘাটতির এই প্রবণতা আবার মাধ্যমিকে পড়ুয়া কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা গেছে। মার্চে তাদের মধ্যে এই ঝুঁকি ২৬ শতাংশে থাকলেও আগস্টে তা বেড়ে ৩৪ শতাংশে দাঁড়ায়।

গবেষণায় বলা হয়, দূরশিক্ষণের মূল উপায় হলো টেলিভিশনে রেকর্ড করা ক্লাস এবং অনলাইন ও সরাসরি অনলাইন ক্লাস। তবে এসব ক্লাসে থাকার সুযোগ খুব কম শিক্ষার্থীরই হয়েছে। প্রাথমিকে পড়ুয়া ৫৬ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে পড়ুয়া ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মার্চে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়লেও কিংবা কোচিং করলেও আগস্টে সেই হার কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪৮ শতাংশ ও ৪৩ শতাংশ।

আগের মতো সবকিছু চালু হওয়ায় ও জীবিকার তাগিদে কাজে যোগ দেওয়ার কারণে মার্চের তুলনায় পরবর্তী শিক্ষা খাতে পরিবার থেকে সহায়তার হারও কমেছে। বিশেষত, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই এর ভুক্তভোগী। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগ তেমন না থাকলেও অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার সময় যোগাযোগ হতো।

পিপিআরসি-বিআইজিডির গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষণ ঘাটতি বা লার্নিং লসের এই সমস্যার পেছনে আর্থ-সামাজিক অসমতার একটি ভূমিকা রয়েছে। মহামারি এবং এর ফলে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে ১৫ শতাংশেরও বেশি পরিবার জানিয়েছে, মহামারির শুরু থেকেই স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপে ভুগছে।

বাবা-মা জানিয়েছেন, স্কুল বন্ধ থাকাকালীন সন্তানদের আচরণ তুলনামূলক বেশি অসহনশীল, খিটমিটে ও রাগান্বিত ছিল। এই হার মার্চে ৩৬ শতাংশ থাকলেও আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ শতাংশে।

ডক্টর হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করোনায় আর্থিক ঝুঁকি ও স্বাস্থ্যঝুঁকির মতো মানবসম্পদের সংকটও গুরুত্বপূর্ণ। পুনর্বাসন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছাড়া শুধু স্কুল খুললে লার্নিং লস ও ঝরে পড়ার ঝুঁকি মোকাবিলা করা যাবে না। অন্যদিকে ডক্টর ইমরান মতিন মনে করেন, শিক্ষা খাতে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা দরকার। একই সঙ্গে এই খাতে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার বাস্তবায়নযোগ্য সমাধানও প্রয়োজন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *