পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: নিউমোনিয়া হলো শ্বাসনালি ও ফুসফুসের সংক্রমণ। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হতে পারে এই সংক্রমণ। বিশ্বে প্রতিবছর লাখ লাখ নবজাতক ও শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। বাংলাদেশেও শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এই প্রতিরোধযোগ্য রোগ।
ঝুঁকিতে যেসব শিশু
যে নবজাতককে জন্মের পরপর শালদুধ খাওয়ানো হয়নি।
বুকের দুধের পরিবর্তে যে শিশুকে কৌটার দুধ খাওয়ানো হয়।
পুষ্টিহীনতায় ভোগা শিশু।
যাদের ভিটামিন এ-র অভাব আছে।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতাধীন টিকাগুলো (বিসিজি, ডিপিটি, নিউমোনিয়া ও হাম) যে শিশুকে দেওয়া হয়নি।
জন্মগতভাবে যে শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম।
হামে আক্রান্ত শিশু। হামের সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো নিউমোনিয়া।
নিউমোনিয়ার লক্ষণ
শিশুর সর্দি, কাশি, সামান্য জ্বর, নাকে বা বুকে কিছু শব্দ হলেই মনে করবেন না নিউমোনিয়া হয়েছে। সর্দি, জ্বর, কাশি শিশুদের হরহামেশাই হয়, এর বেশির ভাগই ফ্লু, তাই ঘাবড়াবেন না। যেকোনো শিশু বছরে চার থেকে পাঁচবার ঠান্ডায় আক্রান্ত হতে পারে, বিশেষ করে
শহরের শিশু।
তবে শিশুর জ্বর, সর্দি, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে খেয়াল করুন বুকের পাঁজরের নিচের অংশ ভেতর দিকে দেবে যাচ্ছে কি না, অথবা শিশু দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে কি না। এই লক্ষণগুলো থাকলে বুঝতে হবে শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে। আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন বমি বমি ভাব, খাবারে অনীহা, নিস্তেজ হয়ে পড়া, শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া।
নিউমোনিয়া ছাড়াও আরও যেসব কারণে শিশুর কাশি হয়
ভাইরাসজনিত ব্রঙ্কিওলাইটিস
ফরেন বডি শ্বাসনালিতে ঢুকে পড়া
শ্বাসনালির জন্মগত সমস্যা
যক্ষ্মা
হুপিং কাশি। যক্ষ্মায় ও হুপিং কাশিতে সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী কাশি থাকে
নিউমোনিয়ার চিকিৎসা
সব সর্দি-কাশিই নিউমোনিয়া নয়। সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। কিন্তু অনেক সময় মা-বাবা নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে শিশুকে খাওয়ান বা আগে কখনো দেওয়া হয়েছিল, সেটা আবার কিনে খাওয়ান। এই প্রবণতা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। পরবর্তী সময় অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। তাই শিশুর ঠান্ডা-জ্বর-কাশি হলে অস্থির হবেন না। জেনে নিন প্রথমে বাড়িতে কী করবেন—
জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খাইয়ে দিন।
নরম কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দিন।
নাক বন্ধ থাকলে লবণ পানির ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার করে দিন। এই ড্রপ কিনতে পাওয়া যায়।
সামান্য কাশির জন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। শিশুর বয়স ছয় মাসের বেশি হলে গরম পানি, মধু ও লেবু অথবা তুলসীপাতার রসে মধু মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
যদি কাশির সঙ্গে শব্দ হয় বা রাতের বেলা কাশি বাড়ে, তাহলে সালবিউটামল–জাতীয় সিরাপ দিতে পারেন। সঙ্গে বুকের দুধের পাশাপাশি বাসার সব ধরনের খাবার খেতে দিতে হবে।
অনেকের ধারণা, কলা বা অন্যান্য ফল খেলে শিশুর ঠান্ডা বেড়ে যাবে, ধারণাটি সত্যি নয়।
শিশুকে প্রতিদিন কুসুমগরম পানি দিয়ে গোসল করান।
ঘরের দরজা–জানালা খুলে রাখুন যেন ঘরে পর্যাপ্ত আলো–বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
ছোট শিশুকে বারবার মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
নাক বন্ধ থাকলে অনেক মা-বাবা নেবুলাইজ করান। ডাক্তারও নেবুলাইজ করতে বলেন। এই পদ্ধতিতে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তা আসলে ফুসফুসে কাজ করে। বন্ধ নাক বা গলায় শব্দ হলে নেবুলাইজেশনে কাজ হয় না। শুধু শিশুর কাশি বেশি হলে বা শিশু কাশির জন্য ঘুমাতে না পারলে বা বমি হলে নেবুলাইজ করতে হয়, যাকে বাবা–মায়েরা সচরাচর বলেন গ্যাস দেওয়া।
কখন হাসপাতালে নিতে হবে
শিশু নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকলে
খেতে না পারলে
খিঁচুনি হলে
কোঁকাতে থাকলে
হাত–পা নীল হয়ে গেলে
কোনোভাবেই কান্না থামাতে না পারলে
নিউমোনিয়ায় যেসব জটিলতা হতে পারে
হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা কমে যাওয়া।
অক্সিজেন–স্বল্পতার কারণে খিঁচুনি।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
প্রতিরোধ
আগেই বলা হয়েছে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা যায়। প্রতিরোধের জন্য শিশুর জন্মের পরপরই শালদুধ খেতে দিন এবং ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ান। বোতল দিয়ে কৌটার দুধ খাওয়াবেন না। ছয় মাস পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাসায় বানানো সুষম খাবার শিশুকে খেতে দিন। খাবারে সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল রাখুন যেন শিশুর ভিটামিন এ-এর অভাব না হয়।
শিশুকে সময়মতো রোগপ্রতিরোধী টিকা দিন। শিশুর সামনে ধূমপান করবেন না, পরোক্ষ ধূমপান শিশুর ফুসফুসের ক্ষতি করে, বাড়িয়ে দেয় নিউমোনিয়ার আশঙ্কা।