পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: শীতে শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে জলবায়ুর তাপমাত্রা কম থাকায় ঠান্ডা অনুভূত হয়। এ সময় আবহাওয়া থাকে শুষ্ক-রুক্ষ। এ কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে শুরু করে। ফলে রোগ জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ইত্যাদির বংশবিস্তার ঘটে দ্রুত।
এ কারণে নানা ধরনের জীবাণুবাহিত অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি শীতে দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে এ সময় শারীরিক সমস্যা, চর্মরোগসহ ফুসফুসজনিত নানা সমস্যায় কমবেশি সবাই ভোগেন। সব মিলিয়ে এ সময় সুস্থ থাকাটা বেশ চ্যালেঞ্জের।
শীতে কোন কোন রোগ বাড়ে?
গলা ব্যথা ও কাশি
গলা খুসখুস করা, ঠান্ডায় কাশি হওয়া থেকে শুরু করে রাতে ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসার মতো সমস্যা দেখা দেয় শীতে। গরম ভাঁপ নিলে বা গড়গড়া করলে ও ঠান্ডা এড়িয়ে চললে অনেক সময় এর সমাধান মেলে।
স্নায়ুরোগ
শীতের সময় হাত-পা ঠান্ডা অবস্থায় রক্ত চলাচল কম হয়। এতে নার্ভ ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া রক্তশূন্যতার রোগী ও বৃদ্ধরাও শীতে নার্ভের জটিলতায় ভুগে থাকেন।
অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগালে নার্ভের পাশাপাশি মাংসপেশি ও হাঁড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে নার্ভ, হাঁড় ও মাংসপেশির নানান অসুখ হয়।
অ্যালার্জি
শীতের সময় শুষ্কতার কারণে শরীরের ত্বক ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। ফলে অনেক সময় চুলকানি বা ব্যথা অনুভব হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে অনেক সময় তীব্র শ্বাসকষ্টও হতে পারে।
কোল্ড বা ডাস্ট অ্যালার্জির সমস্যা ছাড়াও শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা কমে গিয়ে ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়।
নাক দিয়ে রক্ত ঝরা
শীতকালে বাতাস শুকনো হয়ে যায়, বাচ্চারা বারবার নাকে হাত দেয়, সর্দির বারবার নাক পরিষ্কার করা হলে এমন সমস্যা হয়। নাক দিয়ে রক্ত পড়লে অভিভাবকদের অবশ্যই ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে।
টনসিল সমস্যা
শীতের হিম বাতাসে টনসিল গ্রন্থির ক্ষতি হয়, ফলে প্রদাহ হয়ে ফুলে ওঠে, গলা ব্যথা, ঢোঁক গিলতে অসুবিধা হয়। টনসিল গ্রন্থিতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাস দ্বারা ইনফেকশন হয়, প্রচন্ড ব্যথা হয় আবার এতে পুঁজও হয়। ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
মশাবাহিত রোগ
শীতকালে মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু রোগসহ নানা ভাইরাস জ্বরের রোগের প্রকোপ দেখা যায়। কাঁপুনি দিয়ে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর আসা, বারবার জ্বর আসা, গিঁটে ব্যথা ইত্যাদির লক্ষণ দেখা গেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
টিনিটাস
শীতে ঠান্ডা লেগে নাক, কান ও গলার প্রদাহ থেকে টিনিটাস নামক একটি কষ্টকর সমস্যা সৃষ্টি হয় অনেকেরই। এতে আক্রান্ত কানে অনবরত বাঁশির মতো শব্দ হতে থাকে।
সাইনোসাইটিস
সাইনোসাইটিসের কারণে সাইনাস গ্রন্থিগুলোতে শ্লেষ্মা জমে বাতাস চলাচলের রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। ফলে শ্বাসতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়।
সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি বন্ধ নাক, মাথাব্যথা, চোখব্যথা, মুখ ফুলে যাওয়া, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, গলার স্বর পরিবর্তনসহ বিভিন্ন যন্ত্রণা ভোগ করেন।
মলত্যাগ সমস্যা
হঠাৎ করে ঠান্ডার কারণে শিশুদের, অনেক সময় বড়দেরও পাতলা পায়খানা হতে দেখা যায়। বিশেষ করে যখন বেশি ঠান্ডা পড়ে, তখন বয়স্কদেরও পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। এই সমস্যা এড়াতে বাইরের খাবার একেবারে না খাওয়া উচিত।
শীতে সুস্থ থাকবেন কীভাবে?
ভিটামিন ডি ও ভিটামিন সি গ্রহণ
প্রতিদিন সকাল ৮-১২টার মধ্যে অন্তত ২০-৩০ মিনিট শরীরে রোদ লাগালে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ হবে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি হাঁড় ও দাঁত মজবুত থাকবে।
ভিটামিন সি শরীরের জমা থাকে না বলে প্রতিদিনই এই ভিটামিন গ্রহণ করতে হয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন পানীয়
আদা পানি, তুলসি চা, লেবু-মধু পানি, গরম মসলার চা, তেজপাতা চা সহ ওষুধি গুণসম্পন্ন বিভিন্ন হারবাল টি শীতের সময় দিনে ৩-৪ কাপ খেলে শরীর রোগমুক্ত থাকে ও বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যায়।
ভাপ নেওয়া
শীতে সাইনোসাইটিসসহ সর্দি, হাঁচি-কাশির সমস্যায় খুবই কার্যকরী হাইড্রোথেরাপি হলো ভাপ নেওয়া। গরম পানিতে দুই টুকরো মেনথল বা সামান্য লবঙ্গ, গোলমরিচ মিশিয়ে ভাপ নিলে সাইনাসের শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে সর্দি আকারে বের হয়ে আসে ও সাইনাস পরিষ্কার হয়ে যায়। এতে শ্বাস নিতে আরাম হয়।
স্টিম বাথ বা গরম পানিতে গোসল
শীতে মাঝে মধ্যে স্টিম বাথ নিলে রোমকূপ খুলে যায় ও শরীরে ঘর্মাক্ত হয়ে বর্জ্য বের হয়ে আসে। এতে শরীর আরও সতেজ ও বর্জ্যমুক্ত হয়।
ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে ওঠে ও জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়া শারীরিক বিভিন্ন প্রদাহ বা জয়েন্টের সমস্যা কমাতেও এটি উপকারী।