শুক্রবার ব্যতীত তাজমহলে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ

শুক্রবার ব্যতীত তাজমহলে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : তাজমহল ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। নির্মাণের পর থেকেই তাজমহল বহু পর্যটককে আকর্ষিত করেছে। এমনকি তাজমহলের দক্ষিণ পাশে ছোট শহর তাজ গঞ্জি বা মুমতাজাবাদ আসলে গড়ে তোলা হয়েছিল পর্যটকদের জন্য সরাইখানা ও বাজার তৈরির উদ্দেশ্যে যাতে পর্যটক এবং কারিগরদের চাহিদা পূরণ হয়।

তাজমহলে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ পর্যটনে আসে। মুসলমানরা তাজমহলে নামাজ আদায় করে থাকে। কিন্তু ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ (এএসআই) এখন শুক্রবার বাদে তাজমহলের মসজিদে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ করেছে বলে জানা যায়। আর শুক্রবারের নামাজে শুধু স্থানীয়রাই অংশ নিতে পারবেন।

এএসআই জানায়, যারা ভারতের নাগরিক নন তারা তাজমহল মসজিদে শুক্রবারের নামাজ পড়তে পারবে না বলে গত জুলাইয়ে স্থানীয় প্রশাসন যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তা বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্ট। তারা সুপ্রিম কোর্টের রায় বাস্তবায়ন করেছে মাত্র। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ জানিয়েছে, যেহেতু শুক্রবার তাজমহল বন্ধ থাকে তাই স্থানীয়রা শুক্রবারের নামাজ পড়তে পারবে। এজন্য তাদের কোনো প্রবেশ ফি দিতে হবে না। তবে নামাজ অবশ্যই দুপুর দুইটার মধ্যে শেষ করতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য দিনের ক্ষেত্রে যেসব আগন্তুকরা টিকিট কেটে তাজমহল পরিদর্শন করতে ঢুকবেন তারা মসজিদ পরিদর্শন করতে এবং নামাজ পড়তে পারবেন। ইতোমধ্যে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের অংশ হিসেবে অজুর জায়গা ‘বাজু ট্যাংক’-এ তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে এএসআই। একইসঙ্গে মসজিদের ইমাম ও কর্মচারীদের শুধুমাত্র শুক্রবারের দিনে মসজিদে আসতে বলে দেয়া হয়েছে।

তাজমহল ইনতেজামিয়া কমিটির সভাপতি সাইয়েদ ইব্রাহিম হোসেন জাইদি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, বহু বছর ধরে মসজিদটিতে নামাজ হয়। এ সময় নামাজ বন্ধ করার জন্য আগে কেউ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অথচ বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়ই ‘মুসলিম বিদ্বেষী’। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে তিনি জানান।

বসন্ত শংকর বলেন, এটা সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ। আর সেই আদেশই বাস্তবায়ন করেছে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ। তিনি বলেন, এখানে (তাজমহল মসজিদ) কেবল শুক্রবারেই নামাজ হবে এবং নামাজে শুধু স্থানীয়রাই অংশ নিতে পারবেন। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনাবাসিকরা তাজমহল মসজিদে শুক্রবারের নামাজ পড়তে পারবেন না বলে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আগ্রার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

মসজিদের ইমাম সাইয়েদ আদিক আলী। তার পরিবারের সদস্যরা এই মসজিদে কয়েক দশক ধরে নামাজ পড়ে আসছেন। তবে এজন্য তাদেরকে প্রতিমাসে কর্তৃপক্ষকে টাকা দিতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নতুন নিষেধাজ্ঞায় অবাক হয়েছেন তিনি।

জানা যায়, এর আগে প্রশাসনকে অভিযোগ দেয়া হয়, বহিরাগতরা বিশেষ করে বাংলাদেশি ও অ-হিন্দুরা শুক্রবারের নামাজের সূত্র ধরে তাজমহলে প্রবেশ করছেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন।

উল্লেখ্য, তাজমহল চত্বরের একেবারে শেষে বেলেপাথরের দু’টো বিশাল ইমারত রয়েছে যার সমাধির দিকের অংশ খোলা। এদের পিছন ভাগ পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দেয়ালের সমান্তরাল। দু’টো ইমারত দেখতে একেবারে হুবহু যেন একটা আরেকটির প্রতিচ্ছবি। পূর্ব দিকের ইমারতটি মসজিদ, অন্যটি হল জাওয়াব (উত্তর), যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারসাম্য রক্ষা করা (যা মুঘল আমলে মেহমানদের থাকার জন্য ব্যবহৃত হত)। জাওয়াব আলাদা শুধু এর মেহরাম নেই আর এর মেঝে নকশা করা যেখানে মসজিদের মেঝে ৫৬৯ জন্য মুসল্লি নামাজ পড়ার জন্য কালো পাথর দিয়ে দাগ কাটা।

মসজিদটির প্রাথমিক নকশা শাহজাহানের তৈরি অন্যান্য ইমারতের মতই।বিশেষ করে তার মসজিদ-ই-জাহান্নুমা অথবা দিল্লী জামে মসজিদ- একটি বড় ঘর যার উপর তিনটি গম্বুজ। মুঘল আমলের মসজিদগুলোর নামাজ পড়ার জায়গা তিন ভাগে ভাগ করা থাকতো।বড় নামাজ পড়ার জায়গা এর দু’পাশে সামান্য ছোট নামাজ পড়ার জায়গা। তাজমহলের প্রত্যেকটি নামাজ পড়ার জায়গায় উপরে বিশাল গম্বুজ আছে কিন্তু জায়গাটি খোলা। এখন আর শুক্রবার ব্যতিত তাজমহলে নামাজ পড়া যাবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *