শেরপুরে বন্যা : কৃষি খাতেই ক্ষতি ৫০০কোটি টাকা

শেরপুরে বন্যা : কৃষি খাতেই ক্ষতি ৫০০কোটি টাকা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : শেরপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী এবং শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। পাহাড়ি নদী মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস জানান, এবারের বন্যায় শেরপুর জেলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০ জন কৃষক। এ বছর রোপা আমনের আবাদ অর্জিত হয়েছিল ৯৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। বন্যায় আক্রান্ত রোপা আমন ধানের জমির পরিমাণ ৩৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর। শাকসবজি নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ৫৯ হেক্টর। বন্যায় বস্তায় আদা চাষ নষ্ট হয়েছে ১২ দশমিক ৭ হেক্টর।

উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস আরও জানান, টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে এবারের বন্যায় শুধু কৃষি খাতেই ৫০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনও অনেক জায়গায় বন্যার পানি। যার কারণে ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি নেমে গেলেই বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বুধবার বিকাল ৩টায় জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পানি কমে নালিতাবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ১০১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার ৫২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে উজান থেকে ঢলের পানি নেমে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেক ঘর-বাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। অনেক এলাকায় নিম্নাঞ্চলে দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠ এখনও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বন্যাকবলিত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আস্তে আস্তে ভেসে উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।

অনেক এলাকায় পাকা সড়কসহ গ্রমীণ অধিকাংশ রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। আবার কোথাও রাস্তায় হাটু ও কোমর সমান পানি থাকায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও বাড়িঘরে স্যাঁত স্যাঁতে অবস্থা এবং বাড়ি ও বাড়ির আশপাশে কাদা পানিতে একাকার হয়ে থাকায় দুর্ভোগ চরমে পৌছেছে। চুলায় পানি উঠায় রান্নাবান্না করতে পারছেন না অনেকেই। খেতের ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ায় আগামী দিনে কিভাবে চলবেন এসব ভেবে অনেক কৃষক পরিবার এখন দিশেহারা।

ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের কুশাইকুড়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, বন্যায় ভিটা ২০/২৫ ফুট গর্ত হয়ে গেছে। আমাদের বাড়িতে আমার বাবা আব্দুল মালেকের ১টি হাফ বিল্ডিং ঘরসহ ৭টি ঘর, আমার চাচা আব্দুল কাদিরের২টি এবং চাচাতো ভাই শাহজাদার ১টি ঘর পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে। পানি সরে যাওয়ার পর ধ্বংসযজ্ঞ ভেসে উঠেছে।

১৯৮৮ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েনি শেরপুরের পাঁচ উপজেলা। বন্যায় জেলার অনেক কৃষকের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার কুশাইকুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেকের প্রায় ৭ একর এবং আব্দুল মালেকের ৪ একর জমিতে ঢলের পানিতে আসা বালু পরে ধানসহ আবাদি জমি নষ্ট হয়ে গেছে।

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের কৃষক সামাদ মিয়া বলেন, এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে করেছিলেন আমনের চাষ। বন্যায় ভেসে গেছে তার ফসলের খেত। ধার-কর্য করে আবাদ করেছিলেন কিন্তু বন্যা তার সব কিছু শেষ করে দেওয়ার এখন দিশেহারা তিনি। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ৫০ বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলেন। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে তিনি সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার কৃষক ফরিদ বলেন, আগাম সবজি আবাদ করছিলাম। প্রায় লাখ টাকা খরচ করেও খেতের সবজি থেকে এক টাকাও আয় হলো না।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা পুরোদমে চলছে। জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পানি সরে যাওয়ার পর কৃষি, মৎস্য ও ঘরবাড়িসহ ক্ষয়-ক্ষতি কোন সেক্টরে কেমন হয়েছে, তা জানার পর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আপাতত বিধ্বস্থ ঘর-বাড়ি নির্মাণ ও সংস্কার করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে টেউটিন ও নগদ টাকা বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে।

সূত্র: দেশ রূপান্তর

Related Articles