শেষ উত্তর

শেষ উত্তর

  • সাজিদ হোসাইন

অজ্ঞাত পাড়ার নিস্তব্ধ ভোর। আশেপাশে কোনো সাড়াশব্দ নেই। তবে মাঝে মাঝে বাঁশ ঝাড় থেকে ঠুকঠুক আওয়াজ শোনা যায়৷ ভোরের আবছা আলো এসে লুটিয়ে পড়ছে রূপালী খাটিয়ার উপর। বাতাসে আগরবাতির ধোঁয়া সুগন্ধি ছড়িয়ে করুন সুরে উড়ে যাচ্ছে। খাটিয়াতে শুয়ে আছে আলামিনের বাবা। পরনে সাদা লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি। বাবা! শুয়ে আছো কেন? ঘুমোচ্ছো?
মনে হচ্ছে ঘুমাচ্ছে। গভীর ঘুম। তিনি ক্লান্ত। উঠবেন না।

ফ্যালফ্যাল করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে আলামিন। চেহারায় কোনো ভাবলেশ নেই। অপলকভাবে কিছু ভাবছে। বাবাদের চিরকালীন ঘুমে সবাই কাঁদে কিন্তু আলামিন কাঁদছে না। সবাই কানাঘুঁষা করছে এ নিয়ে। সেদিকে আলামিনের মনোযোগ নেই। সে অন্যকিছু ভাবতে চাচ্ছে।

বাবার সাথে জীবনের পদে পদে ঘটে যাওয়া প্রতিটি মুহূর্ত কাল্পনিক রোজনামচার পাতা দেখছে। শত-শত প্রশ্ন, শত-শত আবদার। সবই আজ শূণ্যের কোঠায়। একবার আলামিন তার বাবাকে জিজ্ঞেস করছিলো, বাবা! আমার নাম আলামিন কেন হলো?
আলামিন মানে বিশ্বস্ত। এ নাম রাখার পেছনে একটা কারণ আছে। কিন্তু সেটা তোকে বলবো না। বাবা বললেন।

কাফন-দাফন শেষ। সবাই যার যার জীবনে ফিরে গেছে। তবে বসে আছে আলামিন৷ তার বাবার খাটের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে সন্ধ্যা তারার মতো ঘুম নেমে এলো। সে দেখছে— সবুজ শ্যামল নয়নাভিরাম এক কোমল বাগান। সেখানে সে তার বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে বলল, বাবা আমার নাম আলামিন কেন হলো?
– আলামিন মানে বিশ্বস্ত। আমি যখন এ দুনিয়া থেকে চলে যাবো তখন তুই আমার হয়ে সমস্ত কিছু সামলে নিবি। আর আমার বিশ্বাস তুই এখানে অগাধ বিশ্বস্ত।

তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘুমের ঘোর থেকে জেগে উঠলো আলামিন। তার মুখে অস্ফুট হাসির রেখা। এই অস্ফুট রেখা হাসির অর্থ কি হতে পারে…?

 

লেখক, শিক্ষার্থী  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *