শ্রিংলার আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুও

শ্রিংলার আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুও

শ্রিংলার আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুও

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশে হর্ষবর্ধন শ্রিংলার আগমন কূটনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বৈঠকে করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে দুই দেশের পারস্পারিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাসুদ বিন মোমেন।

এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল, যৌথ পর্যালোচনা, মুজিববর্ষ, রোহিঙ্গা ইস্যু বৈঠকে আলোচনা করা হয়। করোনাকালের অর্থনৈতিক সংকট ও অন্যান্য বিষয়ে দুই দেশের পারস্পারিক সম্পর্ক কীভাবে আরও এগিয়ে নেয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্রসচিব।

তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কে যে অপ্রীতিকর বিষয়গুলো আছে, তা নিয়েও কথা হয়েছে। আমরা সীমান্ত-হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। আগামী মাসে আমরা চেষ্টা করব বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক করার জন্য।’

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব দিল্লি থেকে কী বার্তা নিয়ে এসেছেন এ বিষয়ে মোমেন জানান, কোভিডের সময় বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক নেই। সেই সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক করতেই তার এই সফর।

কোভিড নিয়ন্ত্রণে ভারতের প্রচেষ্টা চলছে এবং ভ্যাকসিন তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে মাসুদ বলেন, ‘আমরা বলেছি, ট্রায়াল রানের জন্য আমরা প্রস্তুত এবং তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বলেছেন, যে ভ্যাকসিনগুলো তৈরির কাজ চলছে, সেগুলো শুধু ভারতের জন্য নয়, আমাদের জন্যও দেয়া হবে। ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার সুযোগও তৈরি হতে পারে।’

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে। অনেক চেষ্টা করে এসেছি, যাতে নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজুলেশন পাস করা যায়।’

নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য কয়েকটি দেশের বিরোধিতার কারণে এটি হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। একদিকে ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের ভালো সম্পর্ক এবং ভারত পরিকাঠামোসহ বেশকিছু জিনিস তৈরি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য। এগুলো যাতে তারা অব্যাহত রাখে এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যাতে মিয়ানমারকে চাপ দেয় সে বিষয়ে দরবার করেছি।’

এদিকে বেনাপোল-পেট্রোপোল সীমান্ত দিয়ে দুই দেশের মালবাহী ট্রেন চলাচলের বিষয়ে মোমেন বলেন, ‘আপনারা জানেন বেনাপোল-পেট্রাপোলে পণ্য পরিবহণ যেভাবে আটকে গিয়েছিল, সেখানে ট্রেনের মাধ্যমে পণ্য চলাচলে অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। ধীরে ধীরে স্থলপথও খুলে দেয়া হয়েছে।’

মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু কোভিডের কারণে কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। বাকি সময়ে কীভাবে এটি এগিয়ে নেয়া যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। জাতিসংঘ সদরদফতরসহ বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে কীভাবে অনুষ্ঠান করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। ভারতও এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে জানান মোমেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে জোর দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। পরবর্তীতে করোনা মহামারির কারণে তার সে সফর বাতিল হয়। ফলে এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল যে, ঘনিষ্ঠ এই দেশ দুটির মধ্যে হয়তো সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়েছে।

এর ফলস্বরূপই হয়তো নয়াদিল্লি প্রকাশ্যে এবং দ্বিপাক্ষিকভাবে নিজেদের মধ্যে অংশীদারিত্বের উন্নয়নের প্রতি বেশি জোর দিয়েছে। এদিকে, শীর্ষ কর্মকর্তারা দ্য হিন্দুকে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে একটি সিরিজ প্রকল্পের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এগুলো সামনের বছরের মধ্যেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) আকস্মিক ঢাকা সফরে আসেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এদিন সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *