শ্রীলঙ্কার পথেই হাঁটছে পাকিস্তান?

শ্রীলঙ্কার পথেই হাঁটছে পাকিস্তান?

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : পাকিস্তানের অর্থনীতির সব সূচক এখন নেতিবাচক। দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রা, বিশেষ করে ডলারের মজুত প্রতিদিন কমছে; মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বী এবং সেই সঙ্গে কমছে প্রবাসী আয়। মুদ্রার মান কমে এযাবৎকালে সর্বনিম্ন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। সরকারি তহবিলেও ঘাটতি অনেক।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে ঋণ চেয়েও দেশটি পড়েছে কঠিন সব শর্তের মুখে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তো আছেই। ফলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত আছে এবং দিন দিন সংকট মোকাবিলা কঠিন করেছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।

গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির দরপতন হয়েছে ৪ হাজার ১০০ শতাংশ। ১৯৭২ সালের মে মাসে ১ ডলারের জন্য ৪ দশমিক ৭৬ রুপি গুনতে হতো। গতকাল শনিবার পাকিস্তানের খোলাবাজারে ১ ডলার বিক্রি হয়েছে ২৫০ রুপিতে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত যেমন ক্রমাগত কমছে, তেমনি অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। পাকিস্তানে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত রয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

গত মার্চে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণ ছিল ১২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণ ও সুদ মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে দেশটিকে ২১ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে। ১ জুলাই থেকে এই অর্থবছর শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের যে বিদেশি ঋণ, তার অর্ধেকই চীন থেকে নেওয়া।

চলতি অর্থবছরে পাকিস্তানের চলতি হিসাবে এ ঘাটতি আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, বিদেশি ঋণের প্রবাহ কম। একই সঙ্গে ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বন্ড কেনায়ও আগ্রহ কমেছে। বলা হচ্ছে, আইএমএফের তহবিল ছাড় না হলে পাকিস্তানে বৈদেশিক মুদ্রার এই ঘাটতি কমার আপাতত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

পাকিস্তানে জ্বালানির মূল্য এখন আকাশচুম্বী। পেট্রল ও ডিজেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ২৩০ ও ২৬০ রুপিতে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ–সংকট। শহর ও গ্রাম সব জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ক্ষুব্ধ মানুষ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছে। মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।

পাকিস্তানের বৈদেশিক বাণিজ্যও প্রায় সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটির মোট আমদানি ছিল ৮৪ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার; বিপরীতে রপ্তানি ছিল ৩৯ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।

অর্থাৎ, গত অর্থবছেরে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি ৪৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন। তার আগের অর্থবছরে এ বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন।

শ্রীলঙ্কায় এখন যে সংকট চলছে, পাকিস্তানও সেই পথেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবেদরা। তারা বলছেন, পাকিস্তানের অর্থনীতিও শ্রীলঙ্কার মতো ধুঁকছে। শ্রীলঙ্কার মতোই ভুল নীতি ও দুর্নীতির কারণে অর্থনীতি সংকটে পড়েছে পাকিস্তান। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান জ্বালানি খরচ কমাতে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে বাজারগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিয়ের হল ও মলের জন্য এই সময়সীমা সীমাবদ্ধ করা হয়েছে ১০টা পর্যন্ত। এছাড়া ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত বৈদ্যুতিক পাখা ও বাল্ব উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি অফিসে খরচ কমাতে দিনের আলোতে মিটিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানে মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনাও মানুষের নাগালের বাইরে হয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালে নজিরবিহীন বন্যায় বন্যায় বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশটিতে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, গত বছর বন্যায় দেশটির অন্তত ৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *