সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা

সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে সংস্কার কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে জাপানের আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এনএইচকে (ঘঐক)-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে যোগদান শেষে গতকাল দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

ছাত্র বিক্ষোভের কারণে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর তিন দিন পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এনএইচকের সাথে সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার কাজ শেষ করা এবং সরকার প্রস্তুত হলেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। তিনি বলেন, ব্যর্থতা এমন কিছু নয় যা আমরা মেনে নিতে পারি।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনে প্রধান ভূমিকা পালনকারী শিক্ষার্থীদের উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিপ্লব’ এর জন্য তরুণরা তাদের জীবন দিয়েছিল। তাই সরকারের নীতিনির্ধারণে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করার বিষয়ে নিজের অবস্থানও তুলে ধরেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘এই সঙ্কটময় সময়ে বাংলাদেশ তার সবচেয়ে বড় দাতা জাপানের কাছ থেকে সহায়তার জন্য উন্মুখ।’ এ সময় তিনি দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও গণতন্ত্রের ভিত স্থায়ী করার জন্য জাপানের সহযোগিতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন।

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
বাসস জানায়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৯তম অধিবেশন এবং অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগদানের জন্য তার চার দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করে গতকাল ভোরে দেশে ফিরেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট ভোর ৩টা ৩২ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় (নিউ ইয়র্ক সময়) ফ্লাইটটি নিউ ইয়র্কের জে কে এফ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা দেয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন।

প্রধান উপদেষ্টা নিউ ইয়র্ক সময় শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেয়া ছাড়াও ২৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোবাইডেনের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এ ছাড়া তিনি অন্যান্যের মধ্যে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি এবং নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।

নিউ ইয়র্ক অবস্থানকালে প্রধান উপদেষ্টার সাথে অন্যান্যের মধ্যে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, জাতিসঙ্ঘের হাইকমিশনারের শরণার্থীবিষয়ক কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ ও ইউএসএইডের প্রশাসক সামান্থা পাওয়ার সাক্ষাত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন। তিনি জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক পৌঁছান।

সুন্দর বিশ্ব গড়তে তারুণ্যে বিনিয়োগ করুন : বিশ্ব নেতাদের প্রতি ড. ইউনূস
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব নেতাদের টেকসই উন্নয়ন ও একটি সুন্দর বিশ্ব গড়তে নিজ নিজ দেশের তরুণদের পেছনে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈষম্যের মতো বড় বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের তরুণরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই উদ্দেশ্যে, তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে এবং আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিশীল বিশ্ব গড়ে তুলতে তাদের দক্ষতা ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে ঐতিহাসিক পরিবর্তন হয়েছে তার জন্যই তিনি অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে জাতিসঙ্ঘে ভাষণ দিতে পারছেন। জনগণের শক্তি, বিশেষ করে যুবসমাজ বাংলাদেশকে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। যুব নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাজনৈতিক সচেতনতার এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই পরিবর্তনের সাথে অনেক সমস্যা এসেছে, কিন্তু তরুণদের দৃঢ় সঙ্কল্প দেশে আরো সমান ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করছে।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখা এবং সব নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, তার দেশ শান্তি, উন্নয়ন ও অধিকারের প্রতি অঙ্গীকার বজায় রাখবে। স্বাধীনতা এবং মর্যাদার নীতিগুলো বাংলাদেশ সরকার এবং এর আন্তর্জাতিক অবস্থানের কেন্দ্রবিন্দু।

বাংলাদেশের মানুষ অসামান্য সাহসিকতার সাথে স্বাধীনতা ও তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছে এবং তরুণরা আজ ন্যায়বিচার, সাম্য ও ভবিষ্যতে তাদের ভূমিকার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এমন একটি পরিবেশ খুঁজে পাওয়া উচিত যেখানে তারা বেড়ে উঠতে পারে, উদ্ভাবন করতে পারে এবং নেতৃত্ব দিতে পারে।

তারুণ্যের ক্ষমতায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সমসাময়িক সমস্যা সমাধানের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে তরুণদের অর্থপূর্ণ এবং জোরালো অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে যে শিক্ষা নেয়া হয়েছে তা এখনো দেশের তরুণদের কর্ম ও আকাক্সক্ষায় প্রতিফলিত হচ্ছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে বাংলাদেশের তরুণরা তাদের মূল্যবোধ ধরে রেখেছে। তারা প্রমাণ করেছেন যে স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং বৈষম্য ছাড়া সব মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখা কেবল উচ্চাকাক্সক্ষা হয়েই থাকতে পারে না- এটি পদ-ভেদাভেদ নির্বিশেষে সবার প্রাপ্য।

Related Articles