পাথেয় রিপোর্ট : আলেম জনতা ঐক্য গড়ার আহবানে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যশোর থেকে সুনামগঞ্জ ঐতিহাসিক পথযাত্রা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা।
৩ অক্টোবর বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, শাইখুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শুনান আল্লামা মাসউদ।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর ও আলোচনায় আল্লামা মাসঊদ বলেন, আমাদের মূল বক্তব্য আপনাদের সামনে পরিস্কার। আমরা অস্বীকার করছি না যে দেশ আজ উন্নয়নের দিকে চলমান। আমাদের উন্নয়নের গতি ও মাত্রাকে আন্তর্জাতিকভাবে সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন। এমনকি আমাদের দেশের দুশমন পাকিস্তানিরাও আজ তাদের সরকারকে আহবান জানায় এই বলে যে ’আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের অন্তত বাংলাদেশ বানিয়ে দাও’। অথচ এককালে এ পাকিস্তানিরাই আমাদের পরাধীন করে রেখেছিল। আমাদের সমস্ত অধিকার খর্ব করে রেখেছিল। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানি আজ সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ উন্নয়নের দিকে ধাবমান। কিন্তু আজ দেশের সব সেক্টরেই বিরাট একটি অংশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। আজ আমাদের দেশে দুর্নীতির যে সয়লাব শুরু হয়েছে তা যদি না হত, তাহলে আমাদের দেশ উন্নতিতে আরো এগিয়ে যেত।
তিনি আরো বলেন, আজকে আমাদের যুবসম্প্রদায় হতাশাগ্রস্থ। মাদকাসক্তির করাল থাবায় তারা নিমজ্জিত। মাদকাসক্তির কারণে যুবশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ একটি দেশের গৌরব ও বড় শক্তিই হল সে দেশের যুবশক্তি। আমাদের যুবসম্প্রদায়ও খুব সমৃদ্ধশালী ও সম্ভাবনাময়। যদি তাদের কাজে লাগাতে পারি তাহলে দেখা যাবে, তারা অনেক বড় বড় কাজ করতে সক্ষম। কাজে তাদের অস্বাভাবিক তৎপর দেখা যায়। তেমনিভাবে আমাদের দেশের থেকে বাহিরে গিয়ে যারা কাজ করছেন তারা প্রায় সকলেই প্রশংসিত। কিন্তু এর বাইরে তাদের অধিকাংশকে আমরাই কাজে লাগাতে পারছি না বলে তারা মাদকাসক্তিতে লিপ্ত। তেমনিভাবে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী আছে যারা নিজেদের আর্থিক লাভের জন্য যুবসমাজকে মাদকের বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত করছে। আমি বারবার এ কথা বলেছি যে, ক্রসফায়ারের মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব নয়। সারাদেশ প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেললেও এর সমাধান সম্ভব নয়। যদি না এর ব্যবহারকে প্রতিহত করা যায়। যতদিন পর্যন্ত এর ব্যবহারকারী থাকবে ততদিন পর্যন্ত মাদকের ছোবল কমানো যাবে না। তবে হ্যাঁ! এই ব্যবহারকে রুখতে পারে উলামায়ে কেরাম। কারণ, তারা যদি মানুষকে নৈতিকতার দিকে উদ্বুদ্ধ করে তবেই কেবল মাদক রোধ করা সম্ভব। অন্তর পরিস্কার হলেই কেবল অনৈতিকতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রাসূল সা. তার যুগে যখন মদকে হারাম করলেন। তখন সাথে সাথে তা পরিত্যাগ করা হল। কারণ, তাদের হৃদয় ঠিক হয়ে গিয়েছিল।

সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এটি যে কত বড় ভয়ংকর একটি বিষয় তা আপনাদের বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি আপনাদের আবারো ধন্যবাদ জানাই, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একলাখ আলেমের সেই ঐতিহাসিক ফতোয়ার কাজে আপনারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, তার জন্য আপনাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
পরে সাংবাদিকদের কাছে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাচন, তাবলীগ সংকট, কওমী স্বীকৃতি ও ঐতিহাসিক পথযাত্রাসহ বেশকিছু বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন।
বর্তমান সরকারের আমলে দেশে দুর্নীতির কী অবস্থা এ সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাইলে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দুর্নীতির ব্যাপকতাকে আমাদের দেশে কেউ অস্বীকার করছে না। এমনকি সমাজের প্রায় সর্বস্তরেই দুর্নীতি ছড়িয়ে আছে। শুধু যে সরকারী কর্মকর্তারাই দুর্নীতি করছে এমন নয়। বরং সর্বস্তরেই দুর্নীতি ঢুকে গেছে। ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি করছে। যে যেভাবে পারছে দুর্নীতি করছে। এমনকি সেবার জন্য যে সংস্থাগুলো খোলা হয়েছিল,সেখানেও দুর্নীতি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আসলে দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধী। তাই আমাদের আহবান হবে আমরা যে পথযাত্রা করছি, এ পথযাত্রায় প্রায় ১হাজার আলেম আমাদের সঙ্গে থাকবেন ইনশাল্লাহ। প্রথম আমরা শুরু করছি যশোর থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত। পরে কক্সবাজার থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত পথযাত্রা করব। আশাকরি এতে যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজটা উঠবে, তখন মানুষ সচেতন হতে পারে। আজ দুঃখের বিষয় হল, আমাদের থেকে এ আওয়াজটাও চলে গেছে। দুর্নীতি খারাপ এটা সবাই জানে কিন্তু কারো ভেতর কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। কারণ, ঐ যে আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমরা এই আওয়াজকে নতুনভাবে তুলে ধরতে চাই। এতে কথাবার্তা উঠবে। আওয়াজ উঠবে। তাতে যদি মানুষের সচেতনা আসে। শুভবুদ্ধি হয়। হবেও ইনশাআল্লাহ।
দেশ ও সমাজকে দুর্নীতি থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দায়িত্ব পুরো করিনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, আমি আমার দায়িত্ব পুরা করিনি। আমি সমাজ সচেতনতা সৃষ্টি করিনি। তাই আমাদের দায়িত্ববোধ রয়ে গেছে। সে দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা চাচ্ছি, আলেম-উলামারা যদি অগ্রসর হন তাহলে তাহলে আশাকরি এটার একটা প্রতিকার হবেই ইনশাআল্লাহ। কারণ, আমাদের সমাজে আলেমদের ভিন্ন একটা প্রভাব ও মাত্রা আছে। সেই শ্রদ্ধা ও ভরসার জায়গাটুকু আমাদের কাজে লাগানো উচিৎ।
তাবলীগ সংকট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি দু’দলের চরমপন্থার বিপক্ষে। দু’দলেরই মতামত থাকতে পারে এবং এ বিষয়ে উভয়পক্ষই নিজস্ব যুক্তি নিয়ে আছেন। কিন্তু তাদের ভেতর একে অপরকে সহ্য না করার যে মনোভাব তৈরি হয়েছে আমি এর বিরোধিতা করি।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার সহসভাপতি মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ। জমিয়তের মহাসচিব, মাওলানা আব্দুর রহিম কাসেমী। জমিয়তের ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা দেলোয়ার হুসাইন সাইফি। মাওলানা হুসাইনুল বান্না। জমিয়তের ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন। জমিয়তের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা মাসউদুল কাদির। কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা আব্দুল আলীম ফরীদি এবং অভিভাবক পরিষদের সদস্য জনাব শাহ এলাহি নাওয়াজ ও মাওলানা সাইদ নিজামী। এ ছাড়াও জমিয়তের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও উলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন।
সর্বশেষ জমিয়তের ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা দেলোয়ার হুসাইন সাইফির মুনাজাতের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।