সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি আজ

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি আজ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদনের শুনানি আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার শুনানির দিন ধার্য করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক। তিনি বলেন, আমরা (আবেদনকারী) সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে। যারা আন্দোলন করছে তাদের পক্ষে নয়। আমরা হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছি। বুধবার এ বিষয়ে শুনানি হবে। এর আগে সকালে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলামের আদালত থেকে আবেদনের অনুমতি নেন আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে শাহ মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যে আবেদন করেছে, তা বিচারাধীন। এটি থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভুইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান দুজন মিলে চেম্বার কোর্টের অনুমতি নিয়ে একটি সিএমপি (হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে) ফাইল করছেন। এর আগে গত ৪ জুলাই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি ‘নট টুডে’- (আজ নয়) বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলেন।

এ দিন শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের কথা তুলে ধরলে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ করে বলেন, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশ হলে আপনারা নিয়মিত লিভ টু আপিল করেন, আমরা শুনব। একপর্যায়ে আদালত বলেন, কিসের এত আন্দোলন, রাস্তায় শুরু হয়েছে? আন্দোলনের চাপ দিয়ে কি হাইকোর্টের রায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?’ রাজপথে আন্দোলন করে কি হাইকোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন? আন্দোলন হচ্ছে হোক। এর আগে গত ৯ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। একইসাথে আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন ধার্য করা হয়। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।

গত ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এক রিটে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন। এর ফলে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হলো বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা। এর আগে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করা হয়। তারও আগে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশসহ আরো কিছুসংখ্যক কোটা বিদ্যমান ছিল।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়।

সেখানে বলা হয়েছিল, নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণী) এবং দশম-১৩তম গ্রেড (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণী) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা তালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদগুলোতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।

ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার, মো: শিবলী ফোরকান, এস এম ফোয়ায়েল আহমেদ, মো: রবিউল ইসলাম, মো: আল ফাহিম, অনুকূল চন্দ্র সরকার ও মো: মাহবুব আলম ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো: কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন।

২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ছিল ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ কোটা। কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার। সব কাজ শেষে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে কোনো কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেয় কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর ৩ অক্টোবর তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে সেখানে কোটা বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। পরদিন ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করেন জনপ্রশাসন সচিব।

এদিকে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। আবেদন করার জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে গতকাল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন ঢাবির দুই শিক্ষার্থী। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম হলফনামার অনুমতি দেন।

Related Articles