সরকার মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাস করে : প্রধান উপদেষ্টা

সরকার মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাস করে : প্রধান উপদেষ্টা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম :অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বর্তমান সরকার মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাস করে এবং দেশে একটি গতিশীল ও প্রাণবন্ত গণমাধ্যম দেখতে চায়। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ২০ পত্রিকার সম্পাদকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে শফিকুল আলম বলেন, সরকার দেশে একটা গতিশীল গণমাধ্যম দেখতে চায়। এর জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবটুকু করা হবে। একই সাথে তিনি সরকার দেশে মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন।

মতবিনিময় সভায় সম্পাদকরা সাংবাদিকদের জন্য যেসব কালাকানুন আছে সেগুলো বাতিল বা সংশোধন করার প্রস্তাব করেন।
সরকারের পক্ষ থেকে মিডিয়ার ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম মজুমদার বলেন, একটি প্রাণবন্ত ও মুক্তগণমাধ্যমের জন্য মিডিয়া কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই কমিশন আমাদের দেশে মিডিয়া কিভাবে চলবে তা ঠিক করবে। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কেউ যেন বিপত্তির মুখে না পড়ে, বাধার সম্মুখীন না হন তা নিশ্চিতে এই কমিশন গঠনের প্রস্তাব এসেছে। সরকার এই কমিশন গঠনের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার সম্পর্কে প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করেছেন এবং রাজনৈতিক নেতারা অধ্যাপক ইউনূসকে ‘যৌক্তিক সময়সীমার’ মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস আজ সম্পাদকদের কাছে যৌক্তিক সময় কতদিন হওয়া উচিত তা জানতে চেয়েছেন। সব সম্পাদক একমত হয়েছেন যে সংস্কার পরিচালনার সময়সীমা কমপক্ষে দুই বছর হওয়া উচিত এবং অন্য কেউ উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারগুলো করছে তা ‘যৌক্তিক সময়’ নির্ধারণ করবে।

আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লব রাষ্ট্র মেরামতের একটি সুযোগ তৈরি করেছে এবং এটিকে কাজে লাগাতে হবে। অধ্যাপক ইউনূস সংস্কারগুলোকে টেকসই করতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।

বৈঠকে তিনি বলেন, সম্পাদকরা সংবিধান সংস্কার এবং আইন কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সংস্কার নিয়েও কথা বলেছেন।
সম্পাদকরা উপদেষ্টা পরিষদ আরো সক্রিয় করার এবং ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ দিয়েছেন, প্রেস সচিব বলেন, তারা দেশের সংবিধান পুনর্লিখনের জন্য একটি সাংবিধানিক সভা করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন।

মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়া সম্পাদকরা সরকারের মধুচন্দ্রিমা সময়ের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম বা কার্যপদ্ধতি ঠিক করে ফেলার পরামর্শ দেন।
সভায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইল স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, দ্য নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবীর, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক এনাম আহমেদ ও কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

৫৭ বাংলাদেশীকে ক্ষমা করায় শেখ নাহিয়ানের প্রতি ড. ইউনূসের কৃতজ্ঞতা : বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভের দায়ে অভিযুক্ত ৫৭ বাংলাদেশীকে ক্ষমা করে দেয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ক্ষমার বিষয়টিকে আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সহানুভূতিশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেছেন, এই বিষয়টি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো স্থায়ী ও শক্তিশালী করবে।
জায়েদ আল নাহিয়ানকে লেখা ড. ইউনূস তার চিঠিতে আরো বলেন, তাদের সাজা বাতিল করার ক্ষেত্রে আপনার উদার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে জড়িতদের পরিবার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সবাই এ জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

তিনি বলেন, আপনার সহানুভূতি এবং সুবিবেচনা আমাদের হৃদয় স্পর্শ করেছে। আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান প্রকাশ করছি। একই সাথে বাংলাদেশী নাগরিকদের কোনো দেশে যাওয়ার আগে সে দেশের স্থানীয় আইন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিতসহ স্পষ্ট ধারণা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।

আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা চিঠিতে বলেন, আপনার সদয় সিদ্ধান্তের জন্য আমি আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এই মহান দৃষ্টান্ত আমাদের দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করবে। বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এবং দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধার জন্য একসাথে কাজ করার জন্য বর্তমান সরকার উদার বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন।

চিঠিতে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতির সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করেন।

Related Articles