সাগরে নিম্নচাপ : আজ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে

সাগরে নিম্নচাপ : আজ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে

  • বন্দরে ১ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত জারি
  • সারা দেশেই চলছে মাঝারি তাপপ্রবাহ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সাগরে ঘুরছে নিম্নচাপ। গতকাল শুক্রবার সকালেই সুস্পষ্ট লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ পরিণত হয়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নিম্নচাপটি আজ শনিবারই কোনো এক সময় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। ঘূর্ণিঝড় হলে এর নাম হবে রেমাল। এটি ওমানের আবহাওয়া দফতরের দেয়া নাম। রেমালের বাংলা অনুবাদ বালু। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, রেমাল অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা ও মেদিনীপুর জেলার কিছু অংশ ছুয়ে যাবে।

পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে দুপুর ১২টায় ৭৪০ কিলোমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৬৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে দুপুর ১২টায় ৭৬৫ কিলোমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে দুপুর ১২টায় ৭৩০ কিলোমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৬৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঘনীভূত হতে পারে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত নি¤œচাপটি ৬৫ কিলোমিটার এবং দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছে।

নি¤œচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল রয়েছে।

সাগরে ঘূর্ণিঝড় অথবা নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে স্থলভাগে উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে উঠে আসার আগে স্থলভাগে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহের অবস্থার সৃষ্টি হয়। চলতি মে মাসের শুরু থেকেই বাংলাদেশে তাপপ্রবাহ চলছিল। মাঝখানে এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে আবারো শুরু হয় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সব বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বিরাজ করবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতের তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে যাওয়ার কথা বললেও আজ শনিবার দিনের বেলার তাপমাত্রা আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার দেশে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এত তাপমাত্রার মধ্যেও গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় মাঈজদীকোর্টে ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডে ১২ মিলিমিটার এবং রাজশাহীতে ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্র থাকবে বরিশালের ওপর। বরিশালের দুই পাশে খুলনা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার অর্ধেক অংশ পর্যন্ত। তিনি জানান, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমাল কাল রোববার সকাল ৬টার পর থেকে উপকূল স্পর্শ করতে পারে এবং আগামী সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করে শেষ করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার উপরে ৩০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে এবং বৃষ্টিপাত চলবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত। সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, মাগুরা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, যশোর, ঝিনাইদহ জেলার উপরে।

ঘূর্ণিঝড়টি জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানা শুরু করলে উপকূলীয় এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। কিন্তু ভাটার সময় উপকূলে আঘাত হানা শুরু করলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে এবং জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে উপকূল সংলগ্ন এলাকা।

আবহাওয়াবিদ বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাতের সময় খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপরে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রার পারদ ছুলো ৪০ ডিগ্রি
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রার পারদ আবারো বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গার দুপুর ৩টায় তাপমাত্রার পারদ রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪২ শতাংশ। তাপমাত্রার সাথে ভ্যাপসা গরম বাড়ায় জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া সূত্রে জানা যায়, টানা ১৯ দিন (৬ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত) চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৯ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা কর।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাহাসান জানান, গত ৬ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত ৩৪ ডিগ্রি থেকে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। সবশেষ গতকাল শুক্রবার দুপুর ৩টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ০ (শূন্য) ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৬ শতাংশ।

তিনি আরো জানান, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে অস্বস্তি লাগছে। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়ে আসছে এই জেলায়। চলতি মৌসুমে গত ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

Related Articles