সামরিক যানের ধাক্কায় বিক্ষোভকারী নিহত : ফুঁসে উঠছে কাশ্মির

সামরিক যানের ধাক্কায় বিক্ষোভকারী নিহত : ফুঁসে উঠছে কাশ্মির

ওয়ার্ল্ড ডেস্ক : ভারতীয় সামরিক যানের ধাক্কায় ২১ বছর বয়সী এক তরুণ নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে নতুন করে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে কাশ্মির। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা গাড়িটিকে থামানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা না করে ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়িটি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের হামলা করা হয়। সে সময় গুরুতর আহত কাশ্মিরি তরুণ কায়সার আহমদ ভাটকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত শনিবার মারা যান তিনি। স্বজনদের দাবি, কায়সার আত্মরক্ষার সুযোগই পাননি। একে ঠান্ডামাথার খুন বলে উল্লেখ করেছেন তারা। তবে এ ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলছে ভারতীয় রিজার্ভ পুলিশ (সিআরপিএফ)। তাদের দাবি, পাথর নিক্ষেপকারী কাশ্মিরিরা সেনাবাহিনীর গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছিল। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

কাশ্মিরে পাকিস্তানপন্থীদের তৎপরতা থাকলেও সেখানে সরাসরি কাশ্মিরের স্বাধীনতার দাবিতে লড়াইকারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে ভারতের দাবি, কাশ্মিরে যারা লড়াই করছে তারা আসলে জঙ্গি। বিচ্ছিন্নতাবাদী। কাশ্মির প্রশ্নে সমগ্র ভারতীয় স্টাবলিশমেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিতেই সেখানকার সমস্যাকে ‘বিচ্ছিন্নতা আর জঙ্গিবাদের’ সমস্যা আকারে দেখা হয়ে থাকে। বিপরীতে কাশ্মিরিদের কাছে সেখানকার লড়াই আদতে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণের লড়াই।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবার কাশ্মিরে সাপ্তাহিক পাথর নিক্ষেপ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছিল কাশ্মিরিরা। আর সে সময় কায়সার আহমদ ভাটকে সামরিক যান দিয়ে ধাক্কা দেওয়া হয়। গত এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এটি এ ধরনের দ্বিতীয় গাড়িচাপার ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আল জাজিরাকে বলেন, জুমার নামাজের পর শ্রীনগরের নৌহাট্টা এলাকায় আধা সামরিক বাহিনীর যানটি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। শহীদ আহমেদ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কাজ হয়নি।’
গত শনিবার শেরি কাশ্মির ইন্সটিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স-এর মেডিক্যাল সুপারিটেনডেন্ট ফারুক জান জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি হওয়া কায়সার ফুসফুসে তীব্র সংক্রমণের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। শনিবার তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। স্বজনরা জানান, কায়সারের প্রচ- রকম অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছিল।

সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) মুখপাত্র সঞ্জয় শর্মা একে দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘পাথর নিক্ষেপকারীরা যখন ভারি ওই সাঁজোয়া যানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছিল তখন তা ঠেকাতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। গাড়িতে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। ওই এলাকায় মোতায়েনকৃত আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। তখনই সামরিক যানটি লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা হয়।’ শর্মার দাবি, তার বাহিনী মাথা ঠান্ডা রেখেছিল এবং গুলি করেনি।

এদিকে শনিবার কাশ্মিরে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দিেেয়াছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। লোকজনকে রাস্তায় নামা থেকে বিরত রাখতে অঞ্চলের প্রধান শহরের পুরনো অংশগুলোতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও শনিবার কায়সারের জানাজায় শত শত মানুষ অংশ নিয়েছেন। সেখানেও টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ।

এর আগে গত ৫ মে ১৮ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী তরুণের ওপর পুলিশের গাড়ি তুলে দেওয়া হয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, পুলিশের গাড়িটি পেছন থেকে বিক্ষোভকারীকে ধাক্কা দিচ্ছে এবং গাড়ির চাকা দিয়ে তাকে পিষে দিচ্ছে।

সামরিক যান দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়।

 

patheo/106/sb

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *