- আব্দুস সালাম ইবনু হাশিম
মহান সালাফের কাছে ইদটা নিছক উৎসব ছিলো না। তাদের ইদ ছিলো রবের আনুগত্য তওবা, অনুশোচনা ও সহমর্মিতার আবহপূর্ণ একটি দিন।
ইমাম ইবনুল জাওযী বলতেন, জৌলুশপূর্ণ পোষাক পরে দম্ভ করে চলার নাম ইদ নয়, নয় উদর পূর্তি করে ভোজনরসিকের খানাপিনা। ইদ হলো একজন পাপীতাপি তওবাকারী বান্দার পোষাক স্বরূপ, অনাগত আত্মার আগমনে যা প্রফুল্ল হয়। (আত তাবসিরাহ)
এভাবেই সালাফ ইদকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তাদের চিন্তা ও কাজের দর্পণে ইদের প্রকৃত দর্শন খুঁজে পাওয়া যায়।
লাতাঈফুল মাআরিফ গ্রন্থে ইবনু রজব হানবালী জনৈক সূফি সাধকের চোখে ইদের হাকিকত কী তা তুলে ধরেছেন; একদল মুসাফির সেই দরবেশকে জিজ্ঞেস করলো, এই অঞ্চলে ইদ কবে?
দরবেশ বললো, যেদিন ক্ষমা করে দেওয়া হবে সেদিনই আমাদের ইদ। এরপর দরবেশ ইদের হাকিকত তুলে ধরে বললেন, যে কেবল বাহারি পোশাক পরে তার আবার কীসের ইদ? ইদ তো সেই ব্যাক্তির যে আনুকম্পা ক্রমবর্ধনশীল। সুন্দর বাহন আর বিচিত্র পোষাকধাররীর ইদ ইদ নয়, যার পাপ মার্জনা করা হয়েছে তার ইদই ইদ।
প্রখ্যাত সূফী, শিবলী রহ. ইদের দিন কেঁদে কেঁদে এই পংক্তিটি আওড়াতেন–
‘ জায়নামাজ পেতে আমির- বাদশাদের অপেক্ষায় থাকা প্রেমিকের তরে ইদ নয়, ইদ তো প্রেমের আবহে মওলার নিকটতম হওয়া নির্বিঘ্নে।
হাসান আল বাসরীর কাছে ইদ কোনো ক্ষণ বিশেষের নাম নয়। গুনাহ মুক্ত মুমিনের অতিক্রান্ত প্রতিটা দিনই ইদ, মাওলার আনুগত্য, জিকির ও কৃতজ্ঞতাময় প্রতিটা লমহাই তার ইদ। (লাতাঈফুল মাআরিফ)
চোখের গুনাহ বড় গুনাহ। ওয়াকি ইবনুল জাররাহ বলেন, আমরা ইদের দিনে সুফিয়ান সাওরীর সাথে ইদগাহে যেতাম। যাত্রাপথে তিনি নীচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতেন আর বলতেন, আমাদের ইদের শুরুটা হোক দৃষ্টি অবনত রাখার মধ্য দিয়ে। (আল ওয়ারা’, ইবনু আবিদ দুনিয়া)
এ ছিলেন মহান সালাফ, এই তাদের ইদ ও ইদের দিনের উৎসব। সালাফের মতো আমাদেরও ইদ হোক গুনাহ মুক্ত ও ইবাদতময় উৎসব। কুল্লা আম ওয়া আনতুম বিখাইর।
লেখক, পরিচালক ইমাম শাইবানী ফিকহ একাডেমি